শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

সৌদির মাদায়েনে সালেহ: যেখানে জীবন ও মৃত্যুর সহাবস্থান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব মুহাম্মদ।।

আদ জাতির ধ্বংসের প্রায় ৫০০ বছর পর হজরত সালেহ আ. সামুদ জাতির প্রতি নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। পূর্বপুরুষ ‘সামুদ’-এর নাম অনুসারে এ জাতির নামকরণ হয়েছে। সামুদ জাতি আরবের উত্তর-পশ্চিম এলাকায় বসবাস করত। তাদের প্রধান শহরের নাম ছিল ‘হিজর’। এটি তখন শামদেশ তথা সিরিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে একে সাধারণভাবে ‘মাদায়েনে সালেহ’ বলা হয়।

আদ জাতির ধ্বংসের পর সামুদ জাতি তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়। তারাও আদ জাতির মতো শক্তিশালী ও বীরের জাতি ছিল। তারা প্রস্তর খোদাই ও স্থাপত্য বিদ্যায় খুবই পারদর্শী ছিল। তাদের স্থাপত্যের নিদর্শনাবলি আজও বিদ্যমান। এগুলো ইরামি ও সামুদি বর্ণমালার শিলালিপিতে খোদিত আছে। অভিশপ্ত অঞ্চল হওয়ার কারণে এলাকাটি আজও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কেউ সেখানে বসবাস করে না।

সৌদি আরবের বর্তমান আল-উলা প্রদেশের মাদায়েনে সালেহ বা আল-হিজর সৌদি পর্যটন আর্কষণসমূহের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের অধিকারী। ২০০৮ সালে ইউনেস্কো মাদায়েনে সালেহকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। প্রাচীন লিহওয়ানদের রাজধানী এই শহরটিই সৌদি আরবের প্রথম বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্থান।

সৌদি আরবের একটি ঐতিহাসিক স্তান মাদায়েনে সালেহ

মাদায়েনে সালেহ স্থানটির নাম নবী হজরত সালেহ আ. এর নাম হতে এসেছে। পরবর্তীতে তার কথা না মানায় তার জাতি আল্লাহর আজাবে ধ্বংস হলে তিনি এই স্থা্ন থেকে হিজরত করে চলে যান। এরপর থেকে এটি একটি মৃত নগরীতে পরিণত হয়। এই স্থানটি এখনো একটি বড় ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন বহন করে চলছে।

বর্তমানে মাদায়েনে সালেহের এই স্থানটি সৌদি আরবের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যসমূহের মধ্যে একটি। এখানকার আকর্ষণীয় স্থানসমূহের মধ্যে একটি হল হাতির পাহাড় (Elephant Rock)। হাতির আকৃতির এই পাহাড়টি ৫০ মিটার উঁচু। এর ব্যতিক্রমী আকৃতির কারণে এটি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান।

মাদায়েনে সালেহের সমগ্র অঞ্চলটি কমলা, লেবু ও পামগাছে পরিপূর্ণ, যা এই মৃতস্থানটির মাঝে প্রাণের সঞ্চার করেছে। মরুভ্রমণ এবং ঘোড়দৌড়ের জন্য এই স্থানটি একটি আদর্শ স্থান।

সিরিয়া হতে মদীনা পর্যন্ত ওসমানী আমলে নির্মিত রেললাইনের ধারে এ স্থানে ওসমানী যুগের একটি সেনাঘাটি রয়েছে।। এই সেনাঘাটির সন্নিবেশিত রেলস্টেশনটি হিজাজের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেলস্টেশন।

রেলের মেরামত কারখানা, সৈন্যদের থাকার জন্য দুর্গ, মসজিদ, অস্ত্রাগার প্রভৃতির সমন্বয়ে পুরো ঘাটিটি নির্মিত। হযরত সালেহ আ.-এর উটের পানি পানের কূপটিও এখানে অবস্থিত।

সামুদ ও নাবাতিয়ানদের প্রাচীন অনেক নির্দশন এই স্থানে রয়েছে, যা এই প্রাচীন জাতিগুলোর স্থাপত্যকৌশলের প্রমাণ আজো বহন করে চলছে। পাহাড় খোদাই করে সামুদ ও নাবাতিয়ানদের নির্মিত বিভিন্ন প্রাসাদ ও স্থাপনাগুলো দর্শকদের বিস্মিত করে।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত হতে পর্যটকরা মাদায়েনে সালেহ ভ্রমণ করতে আসে। সউদি আরব এবং সউদি আরবের বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকদের আগমনে মৃত এই নগরী সদা প্রাণবন্ত থাকে।

সূত্র: আরব নিউজ

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ