শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার

'জলি ও খফি উভয় জিকিরই জায়েজ, কিন্তু প্রয়োগিক ক্ষেত্র ভিন্ন'

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জিকরুল্লাহ। একটি ইবাদাত। আত্মশুদ্ধির বিশেষ মাধ্যম। আল্লাহর সাথে বান্দার সর্ম্পক তৈরির সেতুবন্ধন। মুমিনের হাতিয়ার। হ্ক্কানি পীর-মাশায়েখগণ মুরিদদের ইসলাহের জন্য বিভিন্ন আমল দিয়ে থাকেন। জিকিরও সেসব আমলের মধ্যে একটি আমল। পদ্ধতিগত কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও সকলই দাবি করেন- এর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো “ইসলাহ”। তবে এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে জিকিরের ধরণ নিয়ে।

সম্প্রতি উচ্চস্বরে জিকির করব নাকি আস্তে জিকির, জিকিরের শব্দ কী হবে, জিকিরের পদ্ধতি কী হবে, জিকির করার জন্য মজলিস করা যাবে কিনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অনলাইনে-অফলাইনে বিতর্ক হতে দেখা যায়। কিন্তু ইসলামি শরিয়ত এ বিষয়ে কী? সাম্প্রতিক বিষয়টি নিয়ে দেশের শীর্ষ আলেম পীরে কামেল ও শাইখুল হাদিস আল্লামা ড. মোশতাক আহমেদ’র সঙ্গে কথা হয় আমাদের। আলাপচারিতায় ছিলেন বিশেষ প্রতিবেদক মাওলানা সুফিয়ান ফারাবী


আওয়ার ইসলাম: আপনার কাছে প্রথমেই জানতে চাচ্ছি, আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের আত্মশুদ্ধির জন্য অনেক খানকা ও দরবার রয়েছে। আবার অনেক আলেম মাদরাসায় বসেই সাধারণ মানুষদের ইসলাহের উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদেরকে সাধারণত ‘পীর-মাশায়েখ’ বলা হয়ে থাকে। আমার প্রশ্ন হলো- ইসলামি শরিয়তের সঙ্গায় ‘পীর মাশায়েখ’ বলতে কী বোঝায়?

ড. মুশতাক আহমাদ: নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লিা আলা রাসূলিহিল কারিম। প্রথমে আমি যে কথাটি আপনার সমীপে উপস্থাপন করতে চাই- প্রিয় নবী সা. পৃথীবিতে তাশরীফ এনেছেন শেষ নবী হিসেবে। আল্লাহপাক তাকে তিনটি জিম্মাদারী দিয়ে পাঠিযয়েছেন। তিলাওয়াত, তালিম ও তাজকিয়া। মৌলিকভাবে এই তিনটি দায়িত্ব দিয়ে রাসূল সা. কে দুনিয়াতে আল্লাহ পাঠিয়েছেন।

তিলাওয়াতের অর্থ হলো- আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মরজিয়াত মানুষের কাছে পৌঁছানো। এটার সাথে সম্পৃক্ত হলো ওহী। ওহী দুই প্রকার।  ১-মাতলূ- কুরআন। ২-গাইরে মাতলূ- সুন্নাহ।

রাসূল বলেছেন, তোমাদের মাঝে আমি দুটি জিনিস রেখে গেলাম। যতদিন পর্যন্ত এ দুটি মজবুত করে ধরে রাখবে, ততদিন পর্যন্ত কোন গুমরাহী তোমাদের মাঝে প্রবেশ করবে না।

পয়গম্বর সা. এর দ্বিতীয় দায়িত্ব হলো- তালিম বা মানুষকে শিক্ষাদান করা। কীভাবে তারা আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির উপর চলবে, কোনটা হারাম, কোনটা হালাল. কোনটা নাজায়েজ, কোনটা জায়েজ, কোনটা মানুষের জন্য উপকারী ও অপকারী? গুনাহের বিষয়গুলো কী, মানুষের উপর মানুষের হক কী? নিজেকে কীভাবে পরিচালিত করবে? পরিবারকে কীভাবে চালাবে? দুনিয়ার নেতৃত্ব কীভাবে দেবে? এসবরেই সমষ্ঠি হলো তালিম।

তিন নাম্বার দায়িত্ব হলো- তাজকিয়া। বান্দা আল্লাহপাকের যে-সকল মরজিয়াতের কথা শ্রবণ করল, এবং যে-সকল নিয়ম-কানুন তারা শিখলো-এসবের উপর সন্তুষ্টিচিত্তে মানুষকে পরিপূর্ণ রূপে প্রতিষ্ঠিত করা। মোটকথা হলো- আল্লাহর যাবতীয় বিধানাবলি মানুষের স্বভাবের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করে দেয়ার যে প্রোগ্রাম রয়েছে সেটাকে বলা হয় তাজকিয়া।

আমাদের দেশে এটাকে বলা হয়,পীর-মুরিদী। কুরআনে পাকের ভাষায় বলা হয় তাজকিয়া। হাদিসের ভাষায় বলা হয় ইহসান। ফন্নিভাবে এটাকে বলা হয় তাসাউফ।

পীর মানে- উস্তাদ,চিকিৎসক, এডভাইজার (পরার্মশদাতা)। পীর ফার্সি শব্দ। এটা আমাদের দেশে প্রচলিত। যেমনিভাবে সালাতকে আমরা বাংলায় নামাজ বলি। নামাজ-ও ফার্সি শব্দ। মুর্শিদ ছিল আরবিতে কিন্তু আমাদের দেশে পীর শব্দটি প্রচলন পেয়েছে।

উলামায়ে কেরাম রাসূলের সা. নায়েব হিসেবে একেকটা জামায়াত একেকটা কাজের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তারা হলেন রিজালুল্লাহ। যারা হাদিসের মেহনত করেন তাদেরকে বলা হয় মুহাদ্দিস। যারা তাফসিরে মেহনত করেন তাদেরকে বলা হয় মুফাসসির। সেরকম ভাবেই যারা আত্মশুদ্ধির মেহনত করেন তাদেরকে বলা হয় পীর-মাশায়েখ।

আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা মানুষকে তার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য দুটি জিনিস ব্যবহার করেছেন- কিতাবুল্লাহ ও রিজালুল্লাহ'। হজরত আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আজ পর্যন্ত যারা আল্লাহ তায়ালার প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন, তাদেরকে বলা হয় রিজালুল্লাহ। আল্লাহপাকের বিধানাবলি বাস্তবায়নের জন্য যারা মেহনত করেন তাদেরকে বলা হয় রিজালুল্লাহ।

ইসলামের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় যারা কাজ করেন তাদেরকে সম্মিলিতভাবে বলা হয় রিজালুল্লাহ। আর তাদের কাছে যে গ্রন্থ থাকে সেটাকে বলা হয় কিতাবুল্লাহ। শুধু কিতাবুল্লাহ' ও রিজালুল্লাহ' কোনটিই যথেষ্ট নয়। উভয়টিই প্রয়োজন। সমান গুরুত্ব উভয়টির মাঝে।

আওয়ার ইসলাম: রিজালুল্লাহ কারা- ব্যখ্যা আরও স্পষ্ট করে যদি বলতেন...

আওয়ার ইসলাম: রিজালুল্লাহ কারা- ব্যখ্যা আরও স্পষ্ট করে যদি বলতেন...

ড. মুশতাক আহমাদ: রিজালুল্লাহ প্রথম ব্যক্তিবর্গ হলেন সমস্ত নবী, পরে সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং পর্যায়ক্রমে আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন ও পীর মাশায়েখ।

আল্লাহ আসমান থেকে কিতাব নাজিল করেছেন ১০৩ টি। কিন্তু এই কিতাবগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য লক্ষাধিক পয়গম্বর প্রেরণ করেছেন। সুতরাং, যুগে যুগে কিতাবুল্লাহর সংখ্যা কম ছিল। কিন্তু রিজালুল্লাহ সংখ্যা বেশি ছিল। রাসূল সা. হলেন সর্বশেষ নবী। পবিত্র কুরআন হচ্ছে সর্বশেষ ওহীভিত্তিক-গ্রন্থ। কিন্তু উম্মতকে পরিচালনার জন্য কেয়ামত পর্যন্ত নায়েবে নবি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রেরণ করবেন।

হাদীস শরীফে এসেছে নিশ্চয়ই নবীগণ ধন সম্পদ এর ওয়ারিস বানিযয়ে যান না। কিন্তু তারা ইলমের ওয়ারিশ বানিয়ে যান। ওলামায়ে কেরাম ধর্মীয় বিভিন্ন লাইনে নবীদের উত্তরসূরীর দায়িত্ব পালন করছেন। কিছু আলেম হাদিসের লাইনে নবীদের উত্তরসূরির দায়িত্ব পালন করছেন। কিছু আলেম আত্মশুদ্ধির লাইনে কাজ করছেন।

তেমনিভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সাথে বান্দার সম্পর্ক সুদৃঢ় করার জন্য একদল আলেম কাজ করেন তাদেরকে বলা হয় পীর-মাশায়েখ। তাদেরকে বলা হয় আসহাবে তাজকিয়া। আসহাবুল ইহসান।

হ্যাঁ, এটা সত্য কথা প্রতিটা লাইনেই কিছু সৎ ও অসৎ মানুষ থাকে। আমাদের সৎ মানুষ খুঁজে বের করতে হবে। প্রতিটা ক্ষেত্রে আসল-নকল এর ছড়াছড়ি। আমাদেরকে আসল বেছে নিতে হবে। নকলটার কারণে আসলটাকে অস্বীকার করা যায় না।

মুহাদ্দিসিনদের মধ্যে একদল ছিলেন যারা হাদিস বানাতেন। হাদীস জাল কারীদের কারণে আমরা যেমনিভাবে মুহাদ্দিসীনদের কে অস্বীকার করতে পারিনা, তেমনিভাবে কিছু ভন্ড পীরের কারণে আমরা পীর-মাশায়েখও অস্বীকার করতে পারি না।

আওয়ার ইসলাম: পীর-মাশাযয়েখরা তাদের মুরিদদের যেসব জিকরুল্লাহ উপদেশ দেন এটার হাকিকত কী?

ড. মুশতাক আহমাদ: পীর-মাশায়েখদের কাজ হলো মানুষের মাঝে শরিয়তকে তবিয়তে পরিণত করা। কুরআন-হাদিসে যেসব আইন কানুন রয়েছে, তা মানুষের দিলের মধ্যে বদ্ধমূল করে দেয়া ও স্বভাবে পরিণিত করা। দুনিয়ার মধ্যে আল্লাহ তার বিশেষ বান্দাদের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করিয়ে থাকেন। কাউকে দিয়ে তালিমের কাজ করান, কাউকে দিয়ে তাজকিয়ার কাজ করান।

যেমনিভাবে একদল রং বানায়। আরেকদল রং বিক্রি করে। আরেকদল রং লাগায়। রং বানানো রং বিক্রি করা এবং রং লাগানো- তিনটা একসাথে এক ব্যক্তির মাঝে সাধারণত পাওয়া যায় না। যিনি রং বানান তিনি হয়তো রং বিক্রি করতে পারেন না। যিনি রং বিক্রি করেন তিনি হয়তো রঙ লাগাতে জানেন না। আবার যিনি রং লাগাতে জানেন তিনি হয়তো রং বানাতে জানেন না বা বিক্রি করতে জানেন না।

সকল শ্রেণীর জন্য আলাদা আলাদা কাজের ব্যবস্থা। পীর মাশায়েখদের দায়িত্ব হল- মানুষের মনের মধ্যে শরিয়তের রংটা লাগিয়ে দেয়া। অর্থাৎ মানুষের স্বভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত, মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, নিজেকে কল্যাণের কাজে নিয়োজিত রাখা- এসব কাজ যেন তার মজ্জাগত বিষয়ে রূপ নেয়।

পবিত্র কুরআনের ভাষায় বলতে গেলে- আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু সবকিছু আল্লাহর জন্য। মানুষের মনের মধ্যে এরকম একটা অবস্থা সৃষ্টি করার নাম হলো রুহানি তারাক্কি। বান্দার মনের ভেতর এরকম অবস্থা তৈরীর জন্য যে মেহনতের প্রয়োজন তাকে সমষ্টিগতভাবে বলা হয় মুজাহাদা।

মুজাহাদা একেকজনের জন্য একেক রকম হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষ এর পদ্ধতিও ভিন্ন হতে পারে। মানুষের আত্মশুদ্ধির জন্য আমরা সারা বিশ্বে বিভিন্ন রকমের পদ্ধতি দেখতে পাই। মৌলিকভাবে ওলামায়ে কেরাম সাতটা পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছেন। যথাক্রমে তেলাওয়াত, দুরুদ, জিকির, ইস্তেগফার, ইত্তেবায়ে সুন্নত ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার মুজাহাদা।

মোট সাতটি বিষয় মানুষকে অন্যায় থেকে তুলে আনার জন্য যুগে যুগে ওলামা কেরাম ব্যবহার করেছেন। এগুলো একেকটা একেক সময়, একেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রজোয্য হয়ে থাকে। একই ঔষধ সকলের জন্য প্রযোজ্য না-ও হতে পারে। একই ঔষধ সকল এলাকার জন্য প্রযোজ্য না-ও হতে পারে। স্থান, কাল, পাত্র ও মানুষের মন-মেজাজ ও স্বভাবের পার্থক্যের কারণে ঔষধেও ভিন্নতা দেখা দেয়। মানুষের স্বভাব ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার কারণে শররিয়তেও বিভিন্ন রকমের ঔষধ রেখেছে।

আরব জাতির ইসলাহে রাসূল সা. যেই পদ্ধতি এপ্লাই করেছেন সেটা হলো তেলাওয়াতে কুরআন। যেহেতু আরবেরা আরবি বুঝে ও কুরআনের সাহিত্য অনুধাবন করতে পারে, সুতরাং তাদের জন্য রাসূল সা. তিলাওয়াতের পদ্ধতিটা এপ্লাই করেছেন।

কিন্তু ভারত উপমহাদেশের মানুষের জন্য তিলাওয়াতের পদ্ধতিটা এতটা ফিট নাও হতে পারে। কারণ উপমহাদেশের মানুষ তো আরবি বুঝে না। কুরআনে পাকের সাহিত্যের যে রস রয়েছে তারা সেটা অনুধাবন করতে পারেন না। তাই ভারতীয়দের ক্ষেত্রে পীর-মাশাযয়েখগণ যেই পদ্ধতিটা এপ্লাই করেছেন, সেটা হল জিকরুল্লাহ। কারণ এটা সকলের কাছেই সহজ।

জিকরুল্লাহর অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। জিকরুল্লাহ আত্মার খোরাক। পবিত্র কুরআনে এসেছে যারা আল্লাহর জিকির করে আর যারা করে না তাদের উদাহরণ হলো জীবিত ও মৃত ব্যক্তিদের মতো। এরকমভাবে জিকরুল্লাহর আরেকটা বৈশিষ্ট্য হলো তাৎক্ষণিকভাবে মানুষকে পড়ন্ত অবস্থা থেকে তুলে আনে।

যখন মানুষকে শয়তান পাকড়াও করে ফেলে, তখন তার ওপর জিকরুল্লাহ অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। জিকরুল্লাহ হল নিরাপত্তাবেষ্টনী  মানুষকে আল্লাহ রুহানিভাবে যে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে রেখেছেন সেটা হল জিকরুল্লাহ। জিকরুল্লাহকে বলা হয় প্রথম নিরাপত্তা বেষ্টনী। শরিয়ত জিকরুল্লাহ ওপর গুরত্বারোপ করেছে যেন নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেঙ্গে না যায়।

শয়তান যখন কোন মানুষের উপর চড়াও হয় তখন সর্বপ্রথম তাকে জিকরুল্লাহ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে। কারণ জিকরুল্লাহ যতক্ষণ পর্যন্ত তার মাঝে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত শয়তান তার কাছে আসতে পারবে না।

পবিত্র কুরআনে এসেছে, শয়তান যখন মানুষের উপর চড়াও হয় তখন সর্বপ্রথম তাকে জিকরুল্লাহ থেকে বিরত রাখে, তারপর নামাজ থেকে বিরত রাখে। শত্রুবাহিনী যখন প্রতিপক্ষের উপর কর্তৃত্ব করতে চায় তখন সর্বপ্রথম বলে-“হ্যান্ডস আপ”। অর্থাৎ অস্ত্র ফেলে নিরস্ত্র হয়ে যাও এবং হাত উঁচু করো।

শয়তানও যখন কোন মানুষকে গ্রেফতার করতে চায় তখন তাকে বলে তুমি জিকরুল্লাহ ছেড়ে দাও। জিকরুল্লাহ ছেড়ে দেয়া মানে হচ্ছে নিরস্ত্র হয়ে যাওয়া বা নিরাপত্তাবেষ্টনী প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলা। জিকরুল্লাহ থাকলে আমি তোমার কাছাকাছি আসতে পারবো না। এর দ্বারা বুঝা যায় জিকরুল্লাহর গুরুত্ব কতটুকু।

পবিত্র কুরআনে জিকরুল্লাহকে বলা হয়েছে সবচেয়ে বড় অস্ত্র। এরশাদ হয়েছে সালাত মানুষদের খারাপ থেকে বিরত রাখে কিন্তু মনে রাখতে হবে জিকরুল্লাহ হলো আরো বড় হাতিয়ার ।

এজন্য পবিত্র কুরআনের পরিমাণের ক্ষেত্রে জিকরুল্লাহ বেশি বেশি করতে বলা হয়েছে। এ কথা বলা হয়নি বেশি বেশি নামাজ পড়ো।  কিন্তু জিকিরের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে বেশি বেশি জিকির করো।

এজন্য আমাদের ভারত উপমহাদেশের মাশায়েখগণ মানুষের ইসলাহ এর ক্ষেত্রে জিকরুল্লাহকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। কেননা এটি সহজ।

আওয়ার ইসলাম: জিকির জোলি জায়েজ কিনা, যদি জায়েজ হয়ে থাকে তাহলে কোনটা অতি উত্তম বলে আপনি মনে করেন?

ড. মুশতাক আহমাদ: জিকির তিন প্রকার - জিকির লিত-তালিম, জিকির লিল-ইসলাহ ও জিকির লিল-ইবাদাহ। একটা হল শেখার জন্য জিকির, আরেকটি আত্মশুদ্ধির জন্য ও আরেকটি হল ইবাদতের জন্য জিকির।

জিকিরের তালিম এর সিফাত ভিন্ন। জিকির লিল-ইবাদত ও জিকির লিল-ইসলাহ এর সিফাত ভিন্ন। অনেকে সবগুলোকে মিলিয়ে ফেলেন। এটা ঠিক নয়।

যেমনিভাবে কুরআন তেলাওয়াত করা এবং শেখার পদ্ধতি ভিন্ন, তেমনিভাবে শেখার জন্য জিকির ও ইবাদতের জন্য জিকির এর পদ্ধতিও ভিন্ন।

যখন কোনো ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত করবে তেলাওয়াতের উদ্দেশ্যে, তখন পরিপূর্ণ মনোযোগী ও আদব রক্ষা করে তেলাওয়াত করা অপরিহার্য। কিন্তু যখন ছেলেরা মক্তব বা হিফজ বিভাগে কোরান পড়ে তখন তেলাওয়াতের আদব সেখানে প্রযয়োগ করা যায় না। কারণ শিশুরা তেলাওয়াত করে শেখার জন্য সেখানে কিছুটা বিচ্যুতি হতেই পারে।

সুতরাং কুরআন শেখার জন্য তেলাওয়াত ও ইবাদতের জন্য তেলাওয়াত এর পদ্ধতি যেমন ভিন্ন , তেমনিভাবে শেখার জন্য জিকির এবং ইবাদতের জন্য জিকিরের পদ্ধতিও কিছুটা ব্যতিক্রম।

অনেকে এর মধ্যে পার্থক্য বুঝে উঠতে পারেন না। জিকির লিত-তালিম ও জিকির লিল-ইসলাহ ওয়াল ইবাদাত গুলিয়ে ফেলেন। সঠিক পদ্ধতিতে না করে একটাকে আরেকটার স্থানে পালন করে বসেন। এজন্য অনেকের মনে প্রশ্ন উঠে- আসলেই জিকিরের এ পদ্ধতিটা সহিহ হচ্ছে কিনা?

এই সাক্ষাৎকারে আমি জিকির তালিম ও ইসলাহ নিয়ে আলোচনা করব। কেননা জিকির লিল-ইবাদত এর সিফাত এবং আদাব ভিন্ন।

জিকির লিল-ইসলাহ ও জিকির লিল-ইবাদাতের ক্ষেত্রে জিকরে জলি ও জিকরে খফি দোনোটা পদ্ধতি বৈধ।

জিকির লিল-ইসলাহ ও জিকির লিল-ইবাদাতের ক্ষেত্রে জিকরে জলি ও জিকরে খফি দোনোটা পদ্ধতি বৈধ। ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, জিকির জলির প্রভাবটা দ্রুত বিস্তার করে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি হয় না। খফির প্রভাব বিস্তার হতে একটু দেরি হয়, কিন্তু  সেই প্রভাবটা দীর্ঘমেয়াদি হয়।

এজন্য পীর-মাশায়েখগণ মানুষের ইসলাহ শুরু করেন জোলির মাধ্যমে এবং কিছু সময় পর তাকে জিকরে খফির আমল দিয়ে থাকেন। যেন অতি দ্রুত তার মাঝে জিকিরের প্রভাব পড়ে এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। সুতরাং শুরু হবে জলির মাধ্যমে এবং শেষ হবে খফির মাধ্যমে।

হাদিসের মধ্যে আসছে, উত্তম জিকির হল জিকরে খফি। সুতরাং শুরুটা করতে হবে জলির মাধ্যমে। যাতে করে অতি দ্রুত তার মাঝে প্রভাব পড়তে শুরু করে।

আমরা বুঝতে পারলাম- জলি ও খফি উভয়টি জায়েজ। কিন্তু প্রয়োগিক ক্ষেত্র ভিন্ন।

খফি জিকির সর্বত্রই জায়েজ। নির্জনে যেভাবে করা যাবে, মসজিদে বসেও করা যাবে। অন্যান্য ইবাদত যেভাবে মসজিদে করা যায়, তেমনিভাবে জিকিরও মসজিদে করা যায়।

তবে জিকরে জলির ক্ষেত্রে এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে যেন নিজের জিকিরের মাধ্যমে অন্যের কষ্ট না হয়। অর্থাৎ কোন মানুষ মসজিদে নামাজ পড়ছে কিনা সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। যদি কোন মসজিদে জামাতবদ্ধ হয়ে জিকিরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয, তখন নামাজ শেষে এলান হতে পারে। যাতে করে কারো সমস্যা সৃষ্টি না হয়।

হাদিসে রাসূলে সা. এর মাঝে জামাতবদ্ধ হয়ে জিকির করার বহু হাদিস রয়েছে। আব্দুল্লাহ বিন জুলবিজাদাইন উচ্চ-আওয়াজে জিকির করতেন। এছাড়াও ছোট ছোট গ্রুপ হয়ে জিকিরের কথা-ও হাদিস শরীফে এসেছে।

যখন হজরত আব্দুল্লাহ জুলবিযাদাইন জোরে জোরে জিকির করতেন। খলিফাতুল মুসলিমিন উমর রা. বিষয়টি পছন্দ করতেন না। তাকে ধমকাতেন। তখন রাসূল সা. উমর রা. কে বললেন, উমর, তুমি তাকে ধমক দিয়ো না। কেননা আব্দুল্লাহ জুলবিযাদাইনের মনের ভেতর শুধু আল্লাহর মুহাব্বত এবং ইখলাস ছাড়া আর কিছু নেই।

আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন, তোমরা এমনভাবে জিকির করো যেন লোকেরা তোমাদের পাগল বলে। অনেকে এই হাদিসটিকে আহত করতে চেয়েছেন। কিন্তু সত্য কথা হলো- এ হাদিসটি সহিহ। এতে কোন সন্দেহ নেই।

অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে- তোমরা এমনভাবে জিকির করো, যেন মুনাফেকরা তোমাকে দেখে বলে রিয়াকার। এর দারা স্পষ্ঠ বুঝা গেলো- রাসূল সা. জোরে জোরে জিকির করতে উৎসাহিত করেছেন।

ইজতেমায়ে জিকির যদি গৃহে করা হয় অথবা খানকায়ে করা হয় তাহলে এ নিযয়ে কোন কথা নেই। তবে যদি মসজিদে করা হয় তবে অবশ্যই মুসল্লিদের সুযোগ সুবিধা ও অসুবিধার কথা বিবেচনা করতে হবে। ইজতেমায় জিকিরের অনুমতি তখনই যখন কোনো মুসল্লির নামাজে ব্যাঘাত না ঘটবে। কোন এতেকাফকারীর ব্যাঘাত যেন না ঘটে। তবে যদি মসজিদে কেউ না থাকে তবে উচ্চস্বরে জিকির করা কোনো ক্ষতি নেই।

আওয়ার ইসলাম: জিকির করতে করতে অনেক লাফালাফি করেন, এ বিষয়ে কী বলবেন?

ড. মোশতাক আহমেদ: জিকরুল্লাহ হলো একটি মেডিসিন। অন্যান্য সাধারণ ওষুধের মত এটারও প্রতিক্রিয়া  রয়েছে। ডাক্তার একটা ওষুধ দিয়েছেন শরীর গরম করার জন্য, কিন্তু ওষুধটা কোন কাজ করছে না তাহলে অবশ্যই বুঝতে হবে ওষুধটা নিষ্ক্রীয়।

অর্থাৎ জিকরুল্লাহর মধ্যে কিছু গরম ভাব আছে। যা মানুষের শরীরকে আন্দোলিত করে। আল্লাহ শব্দ হলো ইসমে আজম। ঢোল বা দামারার্র চেয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নামের শক্তি কম নয়। এর দ্বারা বুঝা যায় জিকির করতে করতে ও মানুষের মাঝে হাল আসতে পারে। এজন্য যদি কারো মধ্যে জিকরুল্লাহর মাধ্যমে হাল তৈরি হয় তাহলে এটাকে নেয়ামত মনে করা চাই। অবহেলা না করা উচিত।

অনেকে বলেন, হুজুর আমি যাকে চিল্লাইতে দেখলাম বা লাফালাফি করতে দেখলাম সে তো সেরকম বড় কেউ না তার ভিতর হাল আসে কিভাবে? আমি বলব হাল আসার জন্য বড় কেউ হওয়া শর্ত না। যে কারো হাল আসতে পারে। এটা বড় নিয়ামত। সবার হাল তৈরি হয় না।

তবে একটা কথা স্পষ্ট বলে রাখি মিছামিছি এ ধরনের কার্যকলাপ বা এ ধরনের হাল তৈরীর ভান ধরা গুরুতর অন্যায়। এটা ঠিক নয়।

আবার ইজতেমায়ী জিকির দুই প্রকার। একসাথে বসে একই বাক্য সবাই মিলে উচ্চারণ করা। অনেকটা মিছিলের মতো। আরেকটা হল একসাথে বসে ইনফিরাদিভাবে জিকির করা। যার আওয়াজ অনেকটা বাজারের গোল গোল আওয়াজের মতো।

আমি মুফতি সাহেব খানকায় ছিলাম আরো অন্যান্য ওলামাযয়ে  কেরামের খানকায় দেখেছি তারা জিকিরে জলি করতেন। হযরত গাঙ্গুহী রহমতুল্লাহি আলাইহি জোরে জোরে জিকির করতেন। হযরত মাদানী রহ. জিকিরে জলি করতেন, হযরত জাকারিয়া রহ. জিকরে জলি করতেন। এছাড়াও আরও অনেক খানকায় জিকরে জোলি হত। তাদের খানকায় আমি যেটা পেয়েছি সেটা হল- বাজারের মত গোল গোল আওয়াজ। সেখানে এক-দেড়শ মানুষ একসাথে জিকির করছেন কিন্তু কারো সঙ্গে কারো মিল হয় না। কেউ সুবহানাল্লাহ জিকির করছেন, কেউ ইল্লাল্লাহর জিকির করছেন। সবাই উচ্চ আওয়াজে রোনাজারি'র সঙ্গে জিকির করছেন।।

অর্থাৎ’ উচ্চ আওয়াজে হবে কিন্তু মিছিলের মতো করে নয়। এভাবেই ওলামায়ে কেরাম পছন্দ করেছেন, এভাবে করলে আমাল ভালোভাবে আদায় হয়। প্রত্যেকে আলাদাভাবে জিকির করবে, রোনাজারি করবে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে। তাহলেই হচ্ছে জিকির থেকে আমরা পরিপূর্ণ ফায়দা নিতে পার।

আরেকটা হল মিছিলের মতো আওয়াজ করে সকলে মিলে একই শব্দ উচ্চারণ করা। এটারও ফাইদা রয়েছে। এটাও ফায়দা থেকে খালি নয়, যারা কম জ্ঞান রাখেন অর্থাৎ জিকির-আজকার পরিপূর্ণভাবে পারেন না তাদের জন্য এটা বিশেষ সুবিধা হয়। তাদের ক্ষেত্রে মিছিলের অনুরূপ জিকির বেশি প্রযোজ্য। সুতরাং বুঝা গেল আলেম পর্যায়ের মানুষ রোনাজারি করবে। এভাবে জিকির করাটাই তাদের জন্য উত্তম। এবং সাধারণ মানুষের জন্য মিছিলের মতো করে জিকির করাটা হলো উত্তম। তাদেরকে স্রোতের মধ্যে ফেলে দিতে হবে। অর্থাৎ মিছিল। আর মিছিল হল স্বয়ং একটি শক্তি। নির্বাচনের সময় যেসব শ্লোগান দেয়া হয় সে-সব যদি এককভাবে দেয়া হয় তাহলে মানুষ আকৃষ্ট হবে না। কিন্তু যদি সবাই একসাথে বলে তখন মানুষদের দৃষ্টি কাটতে সহজ হবে।

ফলে বুঝা গেল সম্মিলিতভাবে কোন কথা বলার মাধ্যমে একটা প্রভাব তৈরি হয়। এজন্য মিছিলের মতো করে জিকির করা জায়েজ কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু বাজারের মত করে গোল গোল শব্দে জিকির করাটা বেশি উত্তম। আর ইজতেমাটা হবে শুধু জায়গার ইজতেমা মাহফিলের ইজতেমা। আওয়াজের ইজতেমা নয়।

মানুষের আত্মিক রোগ-ব্যাধি বিভিন্ন রকমের হয়। যারা এ পথে কাজ করেন তারা বিষয়টি বুঝেন। এমন এমন মানুষও আছেন যে জোরে জিকির না করলে তার ভেতরের রোগ সারবে না। রোগ সারতে হলে তাকে জোরে জোরে জিকির করতে হবে। সকলের অবস্থায় একরকম হয় না। সকলের মন একরকম নয়।

এটা চিকিৎসক বুঝবেন, রোগীকে কতটুকু জোরে জিকির করা প্রযয়োজন, নাকি আস্তে জিকির করা প্রযয়োজন। সুতরাং স্পষ্ট কথা হলো জোরে জিকির করার অনুমোদন আছে। অনেক সময় দরকার হয়, অনেক সময় হয় না।

সাহাবায়ে কেরাম জোরে জিকির করেছেন আব্দুল্লাহ বিন জুলবিজাদাইন জোরে জিকির করেছেন। রাসুল সালাম তাকে সমর্থন দিযয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য হাদীসের মাধ্যমে একথা স্পষ্ট হয় যে ক্ষেত্রবিশেষ জোরে জোরে জিকির করাটাও জরুরি।

এই জিকিরের একটা প্রভাব আছে। একটা শক্তি আছে। একটা গরমে আছে ।অনেক সময় জিকির করতে করতে মানুষের শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায় । আবার অনেক সময় জিকির করতে করতে অনেকে লাফালাফি শুরু করে দেন। লাফালাফির বিষয়টা ইচ্ছার বাইরে ঘটে যেতে পারে। এটাকে অস্বীকার করা যায় না।

আমরা যখন বিশ্বকাপ খেলা দেখি বা নানারকম গান শুনি বক্তব্য শুনি তখন আমরা এরকম ভাবে নারায়ে তাকবীর দিয়ে উঠে হইচই শুরু করে দেই। এগুলো হলো মানুষের জীবনে একটা অবস্থা। এটাকে বলা হয় হাল। হাল নিজে নিজে তৈরি হলে তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যদি কেউ নিজে নিজে হাল তৈরি করার চেষ্টা করে বা ভান ধরে তাহলে এটা অন্যায় কাজ।

এমনিভাবে যখন ঢোল পেটানো হয় তখন নিত্য কর্মীদের মনের ভেতর একটা ভাব চলে আসে। যখন দামামা বাজানো হয় তখন সৈনিকের মনে একটা উত্তেজনা কাজ করে। ঢোলের আওয়াজ এর মাধ্যমে যদি একটা মানুষকে উতলা করে দেয়া যায়- তাহলে এটাও মানতে হবে জিকরুল্লাহর মাধ্যমে শরীরে একটা হাল আসতে পারে। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। এটাকে খারাপ চোখে দেখা যাবে না।

আওয়ার ইসলাম: কেউ কেউ আপত্তি করে বলেন জোরে কেন করতে হবে? জোরে না বললে কি আল্লাহ শোনেন না- এর উত্তরে আপনি কী বলবেন?

ড. মুশতাক আহমাদ: এটা মূলত আল্লাহকে শোনানোর জন্য জোরে বলা হচ্ছে না। মানুষের শক্ত হৃদয়, যেটা পাথর হয়ে গেছে, মরচেভাব এসে গেছে, সেটাকে গরম করার জন্য গলানোর জন্য আল্লাহর কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য জিকির জোরে করতে হচ্ছে। এটা বান্দার প্রয়োজনে, আল্লাহর প্রযয়োজনে জোরে বলা হচ্ছে এমন কিছু নয়। আল্লাহ তো মনে মনে বললেও শোনেন, আস্তে বললেও শোনেন। আবার জোরে বললেও শোনেন।

কোন কোন সময় এরকম হয় জোরে জিকির করা ছাড়া কলব পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। তখন জোরে জিকির করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। একজন যুবক আমার কাছে এসে বলল হুজুর আমি আমার আত্মার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি। গুনাহের কাজে আমার অন্তর আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। আমি জিনার দিকে ঝুঁকে যাচ্ছি । আমি এরকম হয়ে গেছি যে আমাকে জিনা করতেই হবে। হয়তো আমি আত্মহত্যা করব অন্যথায় জিনা করব।

এ ধরনের সমস্যায় ব্যক্তিকে বলা হবে তুমি চোখ বন্ধ করে আল্লাহ আল্লাহ করে জোরে জোরে ডাকতে থাকো। চোখ বন্ধ করো, কান বন্ধ করো এবং প্রচন্ড শক্তি দিয়ে আল্লাহ আল্লাহ করো। এটাই তোমার জন্য মহাঔষধ।

আওয়ার ইসলাম: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

ড. মুশতাক আহমাদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ