শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার 'উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব'   নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

'দাঈ নয়, ভিখারি হয়ে যাও'

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা কালিম সিদ্দিকি ।। 

মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হলো। তবে মসজিদের কাঙ্খিত মডেল পছন্দ করতে অনেক দেরি হয়ে যায়। মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটি ইমাম সাহেবের কাছে আরজ করলেন, এই মহল্লার অমুক ব্যক্তি অনেক বড় ব্যবসায়ী। গোনাহ ও পাপাচারেও সে সবার অগ্রগামী। যদি আপনি হিম্মত করে মসজিদ নির্মাাণের বিষয়ে তার সাথে কথা বলতেন? ইমাম সাহেব তার সাথে কথা বলার দায়িত্ব নিলেন।

এক সন্ধ্যায় তার বাড়ির দরজায় কড়া নাড়লেন। কিছুক্ষণ পর ওই ব্যবসায়ী বের হয়ে আসেন। ইমাম সাহেব তার কাছে আসার কারণ বললেন। তার কথা শুনে ওই ব্যক্তি বিগড়ে যায় এবং বলতে থাকেন, এমনিতেই আমি পেরেশানিতে আছি আর এখন তোমার এ ধরনের কথা শুনে আমার স্বাভাবিক চিন্তা শক্তিতে বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়েছে। মহল্লার অন্য সবাই কী মরে গেছে যে, আমার থেকে চাঁদা নিতে এসেছো?

ইমাম সাহেব বললেন, আল্লাহ তায়ালার দেওয়া মাল থেকে দান করার সুযোগ আপনার জন্য রয়েছে। এখন আপনার সহযোগিতার হাত প্রশস্ত হওয়া উচিত। আমি আপনার কাছ থেকে খালি হাতে যাচ্ছি না। আল্লাহ তায়ালা আপনার জানে মালে বরকত দিন। ওই ব্যবসায়ী বললো, আপনার হাত বাড়ান। আমি আপনাকে চাঁদা দিচ্ছি।

ইমাম সাহেব যে-ই মাত্র হাত বাড়ালেন ওই ব্যক্তি ইমাম সাহেবের হাতে থুথু নিক্ষেপ করলো। ইমাম সাহেব বিসমিল্লাহ বলে এই থুথু ওয়ালা হাত নিজের বুকে মিলিয়ে নিলেন এবং দ্বিতীয় হাত ব্যবসায়ীর দিকে বাড়িয়ে বললেন, এই সাহায্য তো আমার জন্য বরাদ্দ। এখন এই হাতে আল্লাহর জন্য সহযোগিতা করুন।

ব্যবসায়ীকে এ কথা বলার পর সাথে সাথে সে আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ বলতে থাকে। কিছুক্ষণ পর লজ্জিত হয়ে বিনয়ের সাথে বললো, আপনাদের কতো টাকা দরকার? ইমাম সাহেব বললেন, আপনি তিন লাখ রুপি দেন।

ওই ব্যবসায়ী বললো, আমি জিজ্ঞাসা করেছি এই প্রজেক্টের জন্য কতো রুপি লাগবে? ইমাম সাহেব বললেন, মসজিদের নির্মাণ কাজ কমপ্লিট হতে আট লাখ রুপি প্রয়োজন। তখন ব্যবসায়ী ঘরের ভিতর গিয়ে আট লাখ রুপির একটি চেক দিয়ে বললেন আজ থেকে এই মসজিদের জন্য যতো টাকা-পয়সা প্রয়োজন, আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবেন।

মানুষের অন্তরে যদি অন্যের ব্যাপারে বিশেষ করে নিজের দাওয়াতি ব্যক্তির ক্ষেত্রে কল্যাণকামিতা ও সহযোগিতার জজবা তৈরি হয়, যেমন ডাক্তারদের রোগীর মন-মেজাজ ও তার অবস্থাদির দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হয় এবং তার চিকিৎসার ক্ষেত্রে আন্তরিক হয়ে চেষ্টা করে, তেমনিভাবে নিজের দাওয়াতি ব্যক্তির ক্ষেত্রেও সুন্দর কৌশল ও উপযুক্ত কথার প্রয়োগ করা উচিৎ।

আর এই আন্তরিক জজবা ও হৃদয়গ্রাহী প্রচেষ্টার ফলে ওই ব্যক্তি অনেক অকল্যাণ থেকে বেঁচে যায়। এমনকি উভয় জগতের মহা ক্ষতি থেকে মুক্ত হয়ে চির সাফল্যের দিকে এগিয়ে যায়। এজন্য, দাঈ যদি দরদি ও কল্যাণকামী হয় তাহলে আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তিকে উপযুক্ত কথা বলার কৌশল দান করেন এবং কথায় এমন মিষ্টতা দান করেন যার ফলে অনেক অহংকারী ও পাপাচারী ব্যক্তির হেদায়ত পেয়ে যায়। আমাদের উপেক্ষা ও গুরুত্বহীন মনোভাবের কারণে অনেক মানুষ কুরআন, নামাজ ও দীন থেকে দূরে চলে যায়।

হজরতজি মাওলানা ইনামুল হাসান সাহেব বলতেন, হযরতজি ইলিয়াস রহ. এর যুগে আমাদেরকে যখন কোনো গাশতের উদ্দেশ্যে পাঠানো হতো, তখন অন্যান্য নসিহতের পাশাপাশি এ কথাও বলে দেওয়া হতো যে, এ কথা ভালোভাবে লক্ষ রাখো যে! তোমরা মুসলমানদের সাথে মিলার জন্য যাচ্ছো। তাই নিয়ত করে নাও, আমরা মুসলমানদের ঘর থেকে নেকি ও কল্যাণকামিতা অর্জনের জন্য যাচ্ছি।

এই জন্য যে, প্রত্যেক মুসলমানই কল্যাণের কারখানা। এখন তোমরা এই নিয়তেই তার ঘরের দরজায় কড়া নাড়ো যে, যেন তোমরা দরিদ্র ও ভিখারি হয়ে তার কাছে অবস্থান করছো। এখন যদি সেই ব্যক্তি বলে, যাও! আমার কোনো কথা শুনার সুযোগ নাই, তাহলে তুমি যেহেতু নিজের কল্যাণ অন্বেষণের জন্য তার কাছে গিয়েছো  তাই বাড়ি ওয়ালার এই অধিকার রয়েছে যে, তোমকে কিছু দান করবেন অথবা কোনো কিছু না দিয়ে বিদায় দিবেন।

তোমাদের এই নিয়তের কারণে ওই ব্যক্তি আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পেয়ে যাবে। খোদা না করুন! যদি তোমরা দাঈ হয়ে যাও, আর ওই ব্যক্তি তোমাদের সাথে অসদাচরণ করে তখন সে তো ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এই ধ্বংসের মূল কারণ হবে তুমিই। এই জন্য যে, সেই ব্যক্তি নিজের পরিবার-পরিজনের সাথে ভালোভাবেই বসবাস করছিলো। তোমরা দাঈ হয়ে তার কাছে যাওয়ার পর সে অস্বীকার করায় ধ্বংসের মধ্যে পড়ে গেলো।
এই জন্য দাঈ নয়, ভিখারি হয়ে যাও!

[প্রখ্যাত দাঈ মাওলানা কালিম সিদ্দিকির ভয়ান থেকে বাংলায় ভাষান্তর করেছেন শরীফ আব্দুল্লাহ]

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ