সুলতান মাহমুদ বিন সিরাজ: শাইখুল হাদিস আল্লামা শিহাবুদ্দীন র.। একটি নাম। একটি ইতিহাস। একটি চেতনা। একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। একটি জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। আলোর দিশারী। বৈচিত্র্যময় গুণাবলি সম্পন্ন একজন মহান ব্যক্তিত্ব। যার বিরল প্রতিভায় বিমোহিত সকল। সর্বমহলে সমাদৃত ও প্রশংসিত উপমহাদেশের অন্যতম হাদিস বিশারদ। কর্ম জীবনের সূচনা থেকেই ছিলেন শাইখুল হাদিসের মসনদে আসীন।
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী দীনি বিদ্যাপীঠ জামেয়া রেঙ্গার দীর্ঘ ৫০ বছরের অধিক সময়ের শাইখুল হাদিস। খেদমতে খলকে দৃঢ়প্রত্যয়ী। নিরলস পরিশ্রমী। সত্যের নির্ভীক সৈনিক। বর্ণাঢ্য জীবনের পরতে পরতে রয়েছে সাফল্যের সাক্ষর তিনি। উস্তাযুল আসাতিজা ওয়াল মুহাদ্দিসিন। স্বমহিমায় উজ্জ্বল প্রকৃত নায়েবে নবি। বিনয়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সততার উপমা।
মহান এই মনীষীর জন্ম সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার চতুল ইউনিয়নের পর্বতপুর গ্রামে। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে। পিতার নাম মাওলানা নেছার আলী র.। মাতার নাম আলেমা আয়েশা বেগম র.। পিতা-মাতার পরশে থেকে সত্য,ন্যায় ও ইনসাফের কঠিন অধ্যায়গুলো আত্মস্থ করেন। শৈশবকাল থেকেই তার মধ্যে আবৃত ছিলো দীনি শিক্ষা অর্জনের তৃষ্ণা। ছাত্র জীবনের পুরোটা সময় ছিলো কৃতিত্বে ভরপুর। অধিকাংশ ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করে অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন। আমল-আখলাক ও সুন্নাতি লেবাছের কারণে উস্তাদেরা তাকে খুব মহব্বত করতেন।
দাওরায়ে হাদিস অধ্যায়নরত অবস্থায় জামেয়া রেঙ্গা থেকে তাকে শাইখুল হাদিসের প্রস্তাব দেয়া হয়। তখন দারুল উলূম হাটহাজারী'র বর্তমান মুহতামিম শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফির নির্দেশে ১৩৯০ হিজরীতে এ জামেয়ার শাইখুল হাদিস নিযুক্ত হোন। ১৩৯০ হিজরী ১৯৬৯ ঈসায়ী থেকে সুদীর্ঘ ৫০ বছর শাইখুল হাদীসের পদে অবিরাম খেদমত আঞ্জাম দিয়েছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সহজ সরল। উদারমনা। নিরহংকারী। সর্বসাধারণের
আস্থা ও শান্তির ঠিকানা। তার সম্মানিত পিতা-মাতা বহুবার স্বপ্নের মাধ্যমে রহমতে আলম, নবীয়ে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছেন। তার সম্পর্কেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্বপ্ন দেখেছেন তারা। সে সব স্বর্ণমানবের প্রতিচ্ছায়া হয়ে ওঠেন আত্মাধিক জগতের সূর্য আল্লামা শায়েখ শিহাব উদ্দীন র.।
গত ১ জুন রাত ২টা। সিলেটের আকাশে নেমে আসে ঘোর আধার। চারদিক নীরব, নিস্তব্ধ। এ যেন কিছু হওয়ার আগাম বার্তা। হঠাৎ অসুস্থতা অনুভব করেন তিনি। স্থানীয় হাসপাতালে কিছু চিকিৎসা নেন। এরই মধ্যে ডাক আসে মাওলায়ে হাকিকির থেকে। নিজ বাড়িতেই আমাদের এতিম করে অদেখা জগতে চলে যান তিনি। মূহুর্তেই বিদ্যুৎ গতিতে চতুর্দিকে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। শোকের সাগরে ভাসতে থাকে মানুষ।
মুহাদ্দিস সাহেব র.। তুমি থাকবে অমর যুগ-যুগান্তরে,দীপ্ত রবে মোদের অন্তরে। আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করে দরজা বুলন্দ করে দিন।
-এএ