শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি

নীরবে কাঁদেন হাফেজ মুনির

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুফিয়ান ফারাবী

বংশপরম্পরায় ধনী হাফেজ মুনিরের বাবা। তার দাদা ছিলেন মস্তবড়ো জমিদার। সেখান থেকে কয়েক বিঘা জমি পেয়েছেন হাফেজ মুনিরের বাবা।

হাফেজ মুনিররা চার ভাইবোন। তিন ভাইয়ের মাঝে তিনি সবার ছোট। তার ছোট একটি মাত্র বোন। গতমাসে বিয়ে হয়েছে বৃত্তবান পরিবারে। তাছাড়া ছেলেও সরকারি সেকেন্ড ক্লাস চাকরি করছেন। বড় আয়োজনে বিয়ে হয়েছে তাদের।

পরিবারে একটি মাত্র বোন থাকায় আদরে কমতি করেননি ভাইয়েরা। দু’হাত ভরে পাঠিয়েছেন ছেলের বাড়িতে।

মেজো ভাই ফরহাদ পেশায় ডাক্তার। বোনের বিয়েতে উপঢৌকন হিসেবে তিনি খরচ করছেন পঞ্চাশ হাজার টাকা। এছাড়াও খাবারের আয়োজনে দিয়েছেন আরও দশ হাজার। সবমিলিয়ে অংকটি ষাটে গিয়ে দাঁড়ালো।

হাফেজ মুনিরের ছোট ভাই বিলেত থাকেন। নাম মাহফুজ৷ দুবাইয়ে তার বিশাল ব্যাবসা। বোনের বিয়েতে আসতে পারেননি ঝামেলায় পড়ে। তবে তার অনুপস্থিতি টের পাওয়া যায় নি। তিনি বিয়ে উপলক্ষে বোনের জন্য পাঁচ ভরি সোনার গহনা পাঠিয়েছেন।

এই কথা গোপন থাকলো না। সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়লো ‘রমজানের পোলা বইনের লাইগা পাঁচ ভরি সোনা পাঠাইছে’। এক কথায় কয়েকদিনের জন্য আলোচনার কেন্দ্রে অবস্থান করলেন মাহফুজ। তাই বলা চলে বিয়েতে না থেকেও কেমন যেন উপস্থিত ছিলেন তিনি।

অবশ্য হাফেজ মুনিরের ভাই মাহফুজ তাতে খুশি হলেন না। তিনি ভাবছেন, ‘ছোট বোনের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, অথচ কিছুই করতে পারলাম না। ব্যবসা নিয়ে পড়ে থাকতে হচ্ছে।’ তাই তিনি ছোট বোনকে জানালেন, আগামী মাসে দেশে ফিরছি। তোর কী লাগবে বল। আমি নিয়ে আসবো।

ছোট বোন বললো, আপনি বলেছেন এতেই খুশি। আমার কিছু লাগবে না।

আজ মরিয়মের বিয়ে। পাঁচশো মানুষের আয়োজন করেছেন রমজান মিয়া। খাবারের আইটেমও হরেকরকমের। গ্রামাঞ্চল হলেও বুফ সিস্টেম খাবারের ব্যবস্থা করেছেন রমজান মিয়া।

এদিকে সাজঘরে বধু সাজাচ্ছেন মরিয়মের বান্ধবীরা। ছেলের বাড়ি থেকে ছয় ভরি স্বর্ণ এসেছে। দুবাই থেকে মরিয়মের ভাইয়ের পাঠানো স্বর্ণ ও ছেলের বাড়ি থেকে আসা স্বর্ণ মিলে এগারো ভরি হয়েছে। স্বাভাবিক সাজগোজে যা প্রয়োজন, কিছুই বাদ যায় নি।

বান্ধবীরা মরিয়মকে সাজাচ্ছে আর বলছে, কিরে, তোর তো কিছুই বাদ যায় নি। সবই দেখি পেয়েছিস। এরকম বাবা, ভাই আর স্বামী থাকলে মেয়েদের আর কিছু লাগে না। তোর কপালটা পুরো আট ইঞ্চি। রাজ কপাল নিয়ে জন্মেছিস।

মরিয়ম হেসে ফেললো। আসলেই কথা সত্য। মরিয়মের ভাগ্য ভাল। বাবা, ভাইদের কাছ থেকে যা পেয়েছে তা নেহায়েত কম নয়।

এরমধ্যেই একজন জিজ্ঞেস করল, তোর বড় ভাই কী দিয়েছে তোকে?

কথা শুনে মরিয়মের হাসি থেমে গেলো। একপ্রকার আবছা অন্ধকারে ঢেকে গেল তার মন জগত। বান্ধবীর প্রশ্নের কোন জবাব নেই তার কাছে ।

কারণ তার ভাই হাফেজ মুনির বিয়েতে কিছুই দেয় নি। মরিয়ম নিজেও জানে দেবার মতো কিছু নেই তার বড় ভাইয়ের। সামান্য বেতনের চাকরি করেন। নারায়ণগঞ্জে একটি মাদরাসায় হিফজ বিভাগে পড়াচ্ছেন দশ বছর যাবৎ। বেতন আট হাজার টাকা। তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে।

হাফেজ মুনিরের বেতনের অর্ধেকটা চলে যায় বড় ছেলের ওষুধে। সেই ছোটবেলা থেকে নিমুনিয়ায় ভুগছে। সাত বছর ধরে বিছানায় পড়ে আছে।

হঠাৎ গলা খাঁকারি দিয়ে বোনের ঘরে ঢুকলেন হাফেজ মুনির। বুঝতে পেরে মরিয়মের বান্ধবীরা সরে গেলো। হাফেজ মুনির বোনের কাছে এসে বসলেন। আর বললেন, সেই ছোটবেলা থেকে বড় আদরে তোকে মানুষ করেছি। কোলে পিঠে করে রেখেছি সবসময়। মাঝে মাঝে কান্না করতে করতে আমার কোলে ঘুমিয়ে পড়তি। তোকে কোলে নিয়েই কুরআন তেলাওয়াত করতাম।

আজ বড় হয়েছিস। নিজের ঘর সাজাতে যাচ্ছিস। তোকে কিছুই দিতে পারিনি। কিভাবে দিবো বল, বুঝতেই পারছিস অল্প টাকা বেতন আমার। এদিকে তোর ভাতিজাও অসুস্থ। আমাকে ক্ষমা করে দিস।

মরিয়ম তার ভাইকে জড়িয়ে ধরলো। কান্নায় ভেঙে পড়লো দুই সহোদর। মরিয়ম বললো, আমি তোমার কাছে কিছুই চাই না। শুধু সারাজীবন তোমার ভালোবাসা নিয়ে বাঁচতে চাই। যেভাবে আপন করে রেখেছিলে দীর্ঘ আঠারো বছর, সেভাবেই আগলে রেখো তোমার বোনকে। এটাই আমার একমাত্র চাওয়া।

হাফেজ মুনির ঘর থেকে বের হলেন। চোখ মুছতে মুছতে নিজের কামরায় গিয়ে আবারও কাঁদতে শুরু করলেন। তিনি কাঁদছিলেন শিশুর মতো করে৷ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে।

তার স্ত্রী ঘরে ঢুকেছেন। তাই হাফেজ মুনির কম্বল টেনে গায়ে দিলেন। কিন্তু তখনও কাঁদছিলেন নীরবে। সবার থেকে আড়াল করে।

হাফেজ মুনিরের জীবনে টানাপোড়েন আছে। আছে না পাওয়ার অনেক গল্প। তবে কুরআনের খেদমতে পড়ে থাকার আনন্দ অনেক। সে আনন্দের কাছে বাকি যেন তুচ্ছ। তাই না পাওয়ার গল্পগুলোকে তিনি একপাশেই রাখেন।

তবে মনে মনে আশা করেন, একদিন এই হাফেজ শিক্ষকরাও সমাজের অন্যদের মতো পরিবারের বড় ভরসাস্থল হবে। আল্লাহ যেন সেই তওফিক দেন।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ