শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

‘অবলা পাঠক’ বলয়ে আমাদের সম্পাদকগিরি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রোকন রাইয়ান
নির্বাহী সম্পাদক

অনেক দিন হলো কোনো দাওয়াত টাওয়াত খাই না। কী করবো, এমন ভর শীতেও কেউ বিয়ে থা করছে না। অনেক বন্ধুর বিয়ের খবর শোনা গেলেও তারা দেখি লুকিয়ে চুপিয়ে বৌভাত সারছে। সেদিন শ্বশুড়বাড়ির দিকের আত্মীয় খালাতো বোনের ছেলে হয়েছে। আজ আকিকা। ভাবলাম এই দাওয়াতটা মিস করি কী করে।

দুপুর পর্যন্ত অফিস করে রওনা দিলাম। মুগদা থেকে শ্যামলী। মাত্র ৩৫ টাকা ভাড়ার রাস্তা লাগলো আড়াই ঘণ্টা। ততক্ষণ সময়ে আমরা মহাখালী থেকে ময়মনসিংহ যাই। কী আর করা মিছিল হচ্ছিল নৌকার। ফার্মগেট ক্রস করে খামারবাড়িতে গাড়ি আটকা।

বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে থাকাদের মধ্যে ততক্ষণে ফুসুর ফাসুর শুরু হয়েছে। জয় তো আপনারাই নিবেন। মিছিল ফিসিল করে নিজেরা কষ্ট করে, আমাদের কষ্ট দিয়ে কী লাভ। তার কথায় বাকিরা তাল দিচ্ছেন। কিন্তু গাড়িতে তাতে ছাড়ছে না। অবশ্য জ্যামের জঘন্য অপেক্ষার বিরক্তি কিছুটা উপশম হচ্ছিল বলা যায়।

হিসেব করে দেখেছি, আমি কোনো কারণে বাইরে থাকলে সেদিন বড় কোনো ঘটনা ঘটবেই। এমনিতে তো বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাই না, সপ্তাহের সাতদিন ১২ ঘণ্টা করে টানা ডিউটিতে আমার সম্পাদক মোটামুটি ঘরকোণো বানিয়ে ফেলেছেন। বাকি ঘণ্টাগুলোতেও রাখতে হয় নজরদারি। কোন নিউজ গেলো, কোনটা গেল না। কোথায় কে মরলো।

যাই হোক, সে কথা আরেকদিন বলবো। আজকের এ দিনেও বড় ঘটনা ঘটার ব্যাতিক্রম হলো না। মাওলানা মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নেয়া হয়েছে। বহু মানুষ ম্যাসেজ করছেন ভাই ঘটনা কি সত্য? অনেকেই ফোনও করেছেন। আমি অফিসহীন সময় পার করবো বলে মোবাইল সাইলেন্ট করে অফলাইনে চলে গেলাম।

অফিসে ফেরার পর নেটে ঢুকে দেখি এলাহি কাণ্ড। মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি আলোচনার টপিক আওয়ার ইসলামও। যদিও এমন টপিক নতুন নয়। আগেও হয়েছে। কিন্তু অনেক বেশি ‘অবলা’ পাঠক মনে হয় আজ মাওলানা মামুনুল হক আটক ইস্যুতে আওয়ার ইসলামে ঢুকেছিলেন। তারা আৎকে গেছেন।

অবলা যদিও স্ত্রীলিঙ্গ। নারীর ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়ে থাকে। বলহীন ও নিরুপায় জাতীয় অর্থ বুঝায়। নতুন এই শ্রেণির পাঠককেও অবলাই বলা চলে। এরা যে ভুলটি করে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখাই শ্রেয়। কারণ এ ভুলটি ইচ্ছকৃত নয়, অজ্ঞতাজনিত। না জেনে মতামত দিলে তাকে সঠিকটা জানানো উত্তম।

মাওলানা মামুনুল হকের নিউজ নিয়ে আওয়ার ইসলামের সমালোচনার কারণ শিরোনাম দেয়া হয়েছিল “মাওলানা মামুনুল হককে আটকের অভিযোগ”। যেখানে নিশ্চিত গ্রেফতার করা হয়েছে সেখানে অভিযোগ কেন বলা হলো?

আসলে সাংবাদিকতার অনেক রুলস আছে। মিডিয়াকে এ রুলস ফলো করতে হয়। ফৌজদারি আইনে বলা আছে, পুলিশ কাউকে তুলে নেয়ার পর তারা স্বীকার না করার এবং সেটির মামলা না হওয়া পর্যন্ত আটক বা গ্রেফতার লেখা যাবে না। লেখতে হবে আটকের অভিযোগ। এটি না লেখলে সে মিডিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার রাখে প্রশাসন।

জাতীয় পত্রিকাগুলো অনুসরণ করলেই বিষয়টি ক্লিয়ার হবে। কখন গ্রেফতার লেখে, কখন লেখা হয় গ্রেফতারের অভিযোগ। তখন এই নিয়ে আর কাউকে ট্যাগ করে গালিগালাজ করতে মন চাইবে না।

অনেকের আরেকটি অভিযোগ মাওলানা মামুনুল হক এমনকি আরও কোনো আলেমের ক্ষেত্রে কেবল নামই শুধু বলা হচ্ছে আওয়ার ইসলামে। সাহেব, দা. বা. কই। একজন তো আমাকে ট্যাগ দিয়ে বলেছেন মামুনুল হক সাহেব কি আপনার বন্ধু লাগে নাকি?

মাওলানা মামুনুল হক বন্ধু না হলেও আমাদের বন্ধুসুলভ। রাহমানী পয়গামে কাজ করার সময় কলিগও ছিলাম। আমি প্রাণভরে শ্রদ্ধা করি। তিনিও আমাকে স্নেহ করেন। তার সত্য আর স্পষ্টবাদিতা আমাদের মতো তরুণদের চেতনার খোরাক।

মাওলানা মামুনুল হকের বহু গুণ আমার হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে আছে। বিশেষ করে তার সঙ্গে গাড়িতে পাশাপাশি বসে দুই তিনটি মাহফিলে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। গাড়িতে বসা অবস্থায় তিনি অনবরত নফল নামাজসহ যেসব আমল করতেন তা কেবল আমাকে অবাকই করতো।

প্রশ্ন হলো, এত শ্রদ্ধা করেন তো নামের আগে পড়ে কোনো লকব দিতে কেন কার্পণ্য?

একই অভিযোগ নিয়ে আজ সকালেই লেখক মনযূরুল হক ম্যাসেজে একটা লিংক পাঠালেন। সেখানে দেখলাম আরেক অবলা পাঠক আওয়ার ইসলামকে তুলোধুনো করেছেন। ‘মাওলানা আবদুল মালেকের পিতার ইন্তেকাল’। এত সম্মানীয় ব্যক্তি তাকে নাকি খাটো করা হয়েছে নামের পরে কিছু না থাকায়।

মনযূরুল হক বললেন, এসব নিয়ে কিছু বলেন না কেনো? আমি বললাম, এগুলো তারা সময় হলে এমনিতেই বুঝবে এবং এমন অবলা অভিযোগের কারণে একসময় মনে মনে হাসবে। ছোটবেলার এমন কিছু পাগলামি থাকুক না।

মনযূর বললেন, যে লেখছে তার কথা বলছি না। নিচে একজন ‘জ্ঞ’ ব্যক্তিও কমেন্ট করেছেন, “এটা আওয়ার ইসলামের পুরনো অভ্যাস”। তার সাথে আলাপ করেন। এটা তো হিপোক্রেসি।

আমি বলি, থাকুক কিছু হিপোক্রেসি। এটা তো মানুষেরই থাকে। অন্য প্রাণীতে এ গুণ নেই।

তো কথা হলো, নামের আগে পরে লকব কই? সোজা কথায় উত্তর দিলে সেই সাংবাদিকতার রুলস এবং সেই রুল সম্পর্কে আপনাদের অজ্ঞতাকেই আনতে হবে। অবলা সেই পাঠককুলকে জানা উচিত কথ্য অনেক বিষয় ও বস্তুই লেখ্য তালিকায় বর্জনীয়। এ রুলস ফলো না করে লেখালেখিতে আপনি কিছু হাসির খোরাকই তৈরি করতে পারবেন। বাকিসব অন্যদের।

মাওলানা মামুনুল হক তার নিজের পত্রিকাতেও এভাবেই অন্যদের নাম লেখেন। মাওলানা আবুল হাসান আবদুল্লাহ’র প্রকাশনায় ইসলাম টাইমসও তার বাবার ইন্তেকালের নিউজে এভাবেই নামগুলো এনেছে।

অবলাদের যেমন কিছু বলতে নেই। এগুলো বলাও মনে করি অর্থহীন। কিন্তু মাঝে মাঝে না বললেও নাকি ফোড়া অ-গলিতই থেকে যায়। তাই কিছু কিছু বলাও জরুরি।

মাওলানা মামুনুল হক জিজ্ঞাসাবাদের পর ছাড়া পেয়ে ফেসবুক লাইভে এসেছেন। সেখানে নানা প্রসঙ্গে কথা বলছেন। সে লাইভে একজন কমেন্ট করলেন, এত ঘুরিয়ে পেচিয়ে লাভ নেই আসল কথা বলেন, কেন গ্রেফতার করা হলো।

এসবকে অবলা না বলে ইচড়েপাকা বলা ভালো।

অনেককেই দেখলাম এ বছরের এপ্রিলের একটি নিউজ “মাওলানা মামুনুল হককে আটকের গুজব” শেয়ার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তারিখটাও দেখছেন না কবের নিউজ।

আওয়ার ইসলাম উপরোক্ত নিউজ টেনে কিছু কমেন্টে আপনাদেরও চোখ বুলাচ্ছি। একজন লিখেছেন, এরা ই.আ.বা আর ফউমা’র টাকায় চলে। আরেকজনের বক্তব্য ‘ফ্রডের হাগু পারাইছে’ (কী মেধাবী কমেন্ট রে বাবা)।

ঘেটে দেখলাম কমন্টেকারীরা সবাই কওমির শিক্ষার্থী। আফসোসের বস্তু হলো, এদের ভাষা দেখে সন্দেহ করতে হচ্ছে এদের মধ্যে কওমির ক’ও আছে কিনা।

সাংবাদিকতা বা সম্পাকগিরি করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলন বলেন আর জমিয়ত কিংবা মাওলানা ফরীদ মাসউদ- কারও টাকা পাওয়া বা খাওয়ার সুযোগ হয় নাই। বরং একটা বিজ্ঞাপন পাওয়ার আশায় অনেক দিন দ্বারে দ্বারে ঘুরে জুতো ক্ষয় হয়েছে (আমার না বিজ্ঞাপন ম্যানেজারের)।

এসব কষ্টে বরং মাঝে মাঝে সাংবাদিকতার পেশা ছাড়তে ইচ্ছে করে আমাদের। তাই এমন আজগুবি কমেন্ট করে পরকালের জন্য গোনাহ কামাই না করা ভালো।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ