শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার

সত্যিই কী ধানের শীষ ঠেকাতে ভোটের মাঠে হাতপাখা?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

পলাশ রহমান
ইতালি থেকে

আমি অনেক বছর থেকে খেয়াল করছি, ইসলামি আন্দোলন দেশের অন্যান্য ইসলামপন্থীদের দ্বারা যতোটা আক্রান্ত, আওয়ামীলীগ বিএনপি দ্বারা এর সিকিভাগও আক্রান্ত নয়। দলটিকে দেশের ইসলামপন্থীরাই কখনো ভারতের দালাল, কখনো আওয়ামী লীগের দালাল বানিয়ে রেখেছে।

৩১ বছর আগে যখন ইসলামি আন্দোলনের জন্ম হয়েছিল, তখন আতুড়ঘরেই জামায়াত বলেছিল, চরমোনাইর পীর ভারতের দালাল। এরপর ইসলামি ঐক্যজোট বিএনপির জোটে যোগ দিলে ইসলামি আন্দোলন সেখান থেকে সরে আসে।

তারা ঘোষণা করে, ইসলামের স্বার্থ ছাড়া কোনো জোট নয়। তখন বলা হয়, পীর সাহেব চরমোনাই আওয়ামীলীগের দালাল।

২০১৪ সালের একদলিয় নির্বাচনের সময়ে অনেকেই ভেবেছিল, ইসলামি আন্দোলন ওই নির্বাচনে যোগ দেবে, কিন্তু দেয়নি। দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতো ইসলামি আন্দোলনও ওই নির্বাচন বর্জন করে। এতে কিছুটা হোচট খায় সমালোচকরা, কিন্তু তাদের সমালোচনা থেমে থাকে না।

বলতে শুরু করে- দেশের কোনো দলকে যখন সরকার মাঠে নামতে দেয়নি, ইসলামি আন্দোলন তখনো বড় বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে। কারন তারা আওয়ামী লীগের দালাল।

গত কয়েক বছরে দেশের অন্তত ৬টি সিটি নির্বাচনে ইসলামি আন্দোলন হাতপাখা প্রতীকে একক নির্বাচন করে ভোটারদের সৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। নিন্দুকরা বলতে শুরু করে, ধানের শীষের বিজয় ঠেকাতেই সরকার হাতপাখা মাঠে নামিয়েছে।

সময়ের চাকা ঘুরে দেশে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগ বিএনপি আগের মতোই জোট রাজনীতির আঁচল পেতে দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলো ভাগাভাগি করে নিতে সক্ষম হয়। পারে না শুধু ইসলামি আন্দোলনকে বশ করতে।

দলটি একক ভাবে তিনশ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে। এবার উঠেপড়ে লাগে নিন্দুকরা। প্রথমে প্রচার করা হয় ইসলামি আন্দোলন আওয়ামীলীগের কাছ থেকে ৬৫ কোটি টাকা নিয়ে তিনশ আসনে প্রার্থী দিয়েছে, যাতে ধানের শীষের ভোট কেটে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করা যায়।

অল্প ক‘দিনের মধ্যে নিন্দুকরা তাদের ‘ভুল’ বুঝতে পারে। নিজেরাই বলাবলি শুরু করে, ৬৫ কোটি অনেক কম হয়ে যায়। বিশ্বাসযোগ্য করতে আরেকটু বাড়িয়ে বলা দরকার। তারা ৬৫ কোটির জায়গায় ৯০ কোটি বসিয়ে দেয়।

আমার খুব কৌতূহল হয়, সমালোচকরা কেনো ৯০ কোটি বলতে গেলো? আর দশ বাড়িয়ে ১০০ কোটি পুরিয়ে দিলে কী এমন ক্ষতি হতো? টাকা তো দেবে বা দিয়েছে সরকার, তাদের এত কার্পণ্য করে লাভ কী?

ইসলামি আন্দোলন গোড়া থেকেই সবচেয়ে বেশি নিন্দার মুখে পড়েছে দেশের ইসলামপন্থীদের কাছ থেকে। বিশেষ করে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো যখন জোট রাজনীতির নামে আওয়ামীলীগ বিএনপিতে বিলিন হয়ে যেতে শুরু করে তখন থেকেই সমালোচনার তীর তীব্র হতে থাকে।

ইসলামপন্থী নিন্দুকদের আচারণ দেখে আমার শুধু চালাক শেয়ালের গল্প মনে পড়ে যায়। শিকারীর ফাঁদে পা দেয়া চালাক শেয়াল নিজের লেজ হারিয়ে যেমন অন্য সকল শেয়ালের লেজ কাটার ফন্দি করেছিল, আওয়ামী লীগ বিএনপির জোট রাজনীতির ফাঁদে ফেসে যাওয়া ইসলামপন্থীদের অবস্থাও হয়েছে সেরকম।

তারা চায় সবাই আওয়ামীলীগ বিএনপিতে ডুবে যাক। আওয়ামী লীগ বিএনপিই দেশের ইসলামপন্থী রাজনীতির একমাত্র নিয়তি হোক।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের মাঠে শোরগোল করে বলা হচ্ছে, ধানের শীষ ঠেকাতেই হাতপাখা তিনশ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ভোটের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে হয়তো দেখানো সম্ভব হবে, হাতপাখার কারনে কিছু আসনে নৌকা সুবিধা পাবে।

তাই বলে হাতপাখা একক নির্বাচন করতে পারবে না? ইসলামি আদর্শের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক শক্তি তৈরীর চেষ্টা করতে পারবে না? সবাইকে আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপিতে বিলিন হয়ে রাজনীতি করতে হবে?

এতদিন আওয়ামী লীগ বিএনপির সাথে জোট রাজনীতি করে কী লাভ হয়েছে? ইসলামের বা দেশের কী উপকার হয়েছে? যদি বিশেষ কোনো উপকার না হয়, তবে বুঝতে হবে ইসলামি আন্দোলনই সঠিক পথে আছে।

ভোটের মাঠে শুধু ধানের শীষ নয়, নৌকা, লাঙ্গল সব ঠেকাতেই হাতপাখা প্রতীক মাঠে থাকা দরকার।

সৈয়দ রেজাউল করিম, ফয়জুল করিমদের নেতৃত্বে হাতপাখা যে পথ হারায়নি এর বড় প্রমাণ হলো কথিত সুশীল মহলেও হাতপাখার সমালোচনা শুরু হয়েছে। তারা প্রকাশ্যেই বলতে শুরু করেছেন, ইসলামি আন্দোলনের দিকে নজর বাড়াতে হবে। দেশে স্বতন্ত্র ভাবে কোনো ইসলামি শক্তিকে মাথা তুলতে দেয়া যাবে না।

লক্ষ করার বিষয় হলো এতদিন জোট রাজনীতি করে, এমপি মন্ত্রী হয়েও দেশের অন্যান্য ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো সুশীলদের মাথা ব্যাথার কারন হয়ে ওঠেনি, যেমনটা হয়ে উঠেছে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ।

সুতরাং দলটির সতর্ক পদক্ষেপ এবং গণমানুষের গণসমর্থন এখন আদর্শিক ভাবে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

লেখক: ইসলামি রাজনীতি বিশ্লেষক

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ