শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি

ইজতেমা মাঠের মাদরাসা শিক্ষকের করুণ কাহিনী!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইসমাঈল আযহার
আওয়ার ইসলাম

টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের একপাশে ছোট্ট পরিসরে হিফজ, নাজেরা ও মকতব বিভাগ নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি মাদরাসা। রাজধানী ঢাকার কাকরাইলের শাখা ‘মাদরাসা উলুমে দীনিয়া মালওয়ালি’। প্রায় শতাধিক ছাত্র এখানে পড়াশোনা করে। তাবলিগের সাথীদের সহযোগিতায় গড়ে ওঠা এই মাদরাসা।  ‍বিগত ৮ বছর যাবৎ এই মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন মাওলানা এমদাদুল হক।  ১ ডিসেম্বরের নৃসংশতা থেকে মুক্তি পাননি তিনিও।

গতকাল কাকরাইল মাদসারায় গিয়ে তার দেখা পাই। কথায় কথায় তিনি জানালেন, সারাদিন মাদরাসার এই লাইব্রেরিতে শুয়ে থাকি। হাঁটা চলা একদম করতে পারি না। দেখতেই পাচ্ছেন পা’টা ভেঙ্গে দিয়েছে ওরা। পা’টা একটু নড়াতেও পারি না। এভাবে বিছানায় পড়ে আছি।

ওইদিনের দৃশ্যগুলো যেন এখনো ভাসে আমার চোখে। আমি যেন এখনো দেখতে পাচ্ছি তাদের নির্দয়, নৃশংস-অত্যাচার। মনে হয় না কোনদিন ভুলতে পারবো। তারা প্রথমে ছাত্রদের মাথায় আঘাত করছিল। এরপর পুরো শরীরে। যে যেভাবে পারে বাঁশের ডান্ডি দিয়ে মারছিল।।

তিনি বলেন, দেখতেই পাচ্ছেন আমার একটা পা ওরা ভেঙ্গে দিয়েছে। শরীরের আরো অনেক জায়গায় কালো দাগও দেখালেন। বললেন, একসঙ্গে দশ-বারো জন করে এক এক জনকে মেরেছে। আমাকে ওরা বেধরক মেরেছে।

তিনি বলেন, যখন সাদপন্থিরা হামলা করে তখন মাদরাসার মকতবে শিশুদের শিক্ষা দানে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ শুনতে পাই সাদপন্থিরা হামলা করবে। দল বেঁধে লাঠি নিয়ে আসছে তারা। আমরা মাদরাসায় মূল ফটক বন্ধ করে দিই। কিন্তু ওরা ধাক্কাধাক্কি করতে করতে মাদরাসায় গেট ভেঙ্গে ফেলে। ভেতরে ঢুকে নিষ্পাপ ছোট বাচ্চাদের পিটাতে থাকে।

এমদাদুল হক আক্ষেপ করে বলেন, কুরআন শরীফ পড়া অবস্থায় বাচ্চাগুলোর গায়ে তারা কীভাবে হাত দিল! তাদের হৃদয় একটুও কাঁপল না। তাদের মনে একটুও মায়া জাগলো না? অসহায় ছোট্ট ছেলেগুলোর জন্য! মানুষ হয়ে এমন কাজ কেউ করতে পারে তা আমার জানা ছিল না!

বাচ্চারা তখন আমাদের জড়িয়ে ধরছিল। আমাদের বাঁচান বাঁচান বলে চিৎকার করছিল। ভয়ে কাঁদছিল সবাই কিন্তু ওরা কাউকে ছাড়েনি।  নিষ্পাপ শিশুদের  পিটাতে তাদের ওদের একটুও খারাপ লাগেনি।  দৃশ্যটি মনে পড়লে এখনও চোখে পানি চলে আসে।

তিনি বলেন, আমরা ওদের অনেক বলেছি, বাচ্চা কেন মারছেন? কোনো দোষ নেই তো অবুঝ শিশুদের! ওরা তো কিছু করেনি আপনাদের? তারা আমাদের কোনো কথা শোনেনি। অনেক শিশু তুরাগ নদিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। অনেকে সাতার জানেনা কিন্তু গলা পানিতে নেমে দাঁড়িয়ে আছে তাদের নিষ্ঠুরতা দেখে। শিশু তাদের মারধোরের ভয়াবহতায় বুঝতে পারছিল না কি করবে তারা। অনেকে শুধুই কাঁদছিল। কিন্তু শিশুদের চোখেরে পানি তাদের মনে কোন দাগ কাটেনি। একটু মায়াও সৃষ্টি হয়নি তাদের।

তিনি বলেন, আমি এক সময় যখন তাদের পিটুনি সহ্য করতে না পারি তখন গেট পর্যন্ত দৌড় দিই। ততক্ষণ আমার একটা পা ভেঙ্গে গেছে। আমি বার বার পড়ে গেছি উঠে আমার  দৌড় দিছি। কোনোমতে কষ্ট করে আমি বাঁচতে পারি তাদের হাত থেকে।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এমদাদুল হক বলেন, এভাবে বিছনায় শুয়ে শুয়ে আমার অনেকটা দিন কেটে যাবে। ডাক্তররা বলছেন, সময় লাগবে সেরে উঠতে। ভালই আঘাত লেগেছে। অনেক টাকা পয়সাও খরচ হচ্ছে।

টঙ্গী মাদরাসার অবস্থা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এখন মাদসারা বন্ধ হয়ে গেছ। মাদরাসার একজন শিক্ষক বাদে সবাই গুরুতর আহত হয়েছেন। আমার মতো সবারই একই অবস্থা। একজনের নাক ফেটেছে,  তো আরেক জনের মাথা ফেটেছে।

দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন মাদরাসায় শিক্ষকতা করছি। ছোট ছেলেদের কুরআন শরিফ পড়িয়েছি। তাদের নিয়ে আমাদের জীবন। অনেকদিন আর পড়াতে পারবো না। কুরআন শিখাতে পারবো না। এই জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে। আমি কোনোদিন ভাবতেও পারিনি এমন দৃশ্য কখনও দেখতে হবে।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ