শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি

উৎসবের ভোট কি ফিরবে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জহির উদ্দিন বাবর
সাংবাদিক কলামিস্ট

আমাদের জাতীয় জীবনে উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ ভোট। নির্বাচন এলে উৎসবপ্রিয় বাঙালি উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। রাজনীতি নিয়ে আলোচনায় ঝড় ওঠে চায়ের কাপে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত সর্বত্রই একই আলোচনা। যারা রাজনীতি বোঝেন তারাও আলোচনা করেন, যারা তেমন বোঝেন না তারাও এটা নিয়ে পড়ে থাকেন।

চলার পথে বাস, ট্রেন, লঞ্চ সবখানে আলোচনা আর গল্প-আড্ডার মূল বিষয় হয়ে ওঠে ভোট। রাজনীতি এদেশের মানুষকে কতটা স্পর্শ করে তা ভোট এলে টের পাওয়া যায়।

আবার এসেছে ভোটের সময়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সংশোধিত তফসিল অনুযায়ী ভোট ৩০ ডিসেম্বর। ইতিমধ্যে নির্বাচনী আবহ শুরু হয়ে গেছে।

রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিয়ে ইতোমধ্যে প্রার্থী বাছাইয়ের কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রায় ১০ বছর পর আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক একটি ভোটের অপেক্ষায় জাতি।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি সব দলের অংশগ্রহণে হয়নি। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে আন্দোলনরত বিএনপি জোট ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ফলে অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা।

ভোট তখনই উৎসবমুখর হয় যখন সব দল স্বতস্ফূর্তভাবে এতে অংশ নেয়। কিন্তু যখন উল্লেখযোগ্য কোনো দল অংশ নেয় না এবং নির্বাচন ঠেকানোর হুমকি দেয় তখন উৎসবের পরিবর্তে ভোট হয় আতঙ্কের। বিগত নির্বাচনটি উৎসবের ছিল না; ছিল জাতীয় জীবনে চরম আতঙ্কের। এমন ভোট যেন আর কখনও না আসে, সেটাই চায় দেশবাসী।

এরপর দেশে স্থানীয় সরকারের কয়েক হাজার ভোট হয়েছে। বেশির ভাগ ভোটই ছিল আতঙ্কের। কারণ ভোটকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম সংঘাতের দৃশ্য আমরা দেখেছি। এতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা যেমন ঘটেছে তেমনি ক্ষতি হয়েছে প্রচুর সম্পদের।

২০১৪ সালের ভোট বর্জন বিএনপির জন্য কতটা সমীচীন ছিল সেটা নিয়ে নানা কথা আছে। সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে দলটির সামনে হয়ত নির্বাচন বর্জন করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তবে ভোটে না গিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ে দলটি অনেকটা ব্যর্থ হয়েছে। আন্দোলন করতে গিয়ে দমন-নিপীড়ন, মামলা-হামলার মুখোমুখি হয়ে বিএনপি এখন পর্যুদস্ত।

নির্বাচন বর্জন করা ২০১৪ সালের সেই বিএনপি আর ২০১৮ সালের বিএনপি এক নয়। দলটির সেই শক্তি-সামর্থ্যও আর বাকি নেই। কয়েক দফা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা দলটি এখন অস্তিত্ব সংকটে। এজন্য এবার নির্বাচন বর্জনের মতো ঝুঁকি বিএনপি হয়ত নেয়নি।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হয়েছে। সেখানে বিএনপি জোট যেসব দাবি জানিয়েছিল সেগুলোর বেশির ভাগই পূরণ হয়নি। তবে নির্বাচনকালে শেখ হাসিনা সরকারের প্রধান থাকলেও তিনি ঘোষণা দিয়েছেন একটি ভালো ভোটের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করবেন।

নির্বাচন কমিশনও জানিয়েছে তারা একটি ভালো ভোট করতে চায়। এটা স্পষ্ট যে, ক্ষমতাসীন দল আর ৫ জানুয়ারির মতো কোনো নির্বাচন করতে চায় না।

টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার ব্যাপারে তারা মরিয়া হলেও অন্তত বড় ধরনের প্রশ্ন উঠে এমন কোনো নির্বাচন তারা চায় না। ভেতরের-বাইরের যেসব শক্তি আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় দেখতে চায় তারাও আর একদলীয় ভোট চায় না। এটা শুধু একটি দলের জন্য, দেশের জন্যও ভাবমূর্তির সংকট সৃষ্টি করে। এজন্য সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এখন সবার একান্ত চাওয়া।

যেহেতু মোটামুটি সব দল নির্বাচনে আসছে তাই বলা যায় নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির কোনো একটি দল ভোটের লড়াইয়ে না থাকলে সেই ভোট জমে উঠে না। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী লড়াইয়ে সব দলকে ধরে রাখার মূল দায়িত্ব সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচন কমিশনের। আমরা প্রত্যাশা করি, তারা এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে না যাতে শেষ মুহূর্তে বিরোধী দলগুলো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়।

২০০৬ সালের শেষ দিকে সংঘাতমুখর সেই দিনগুলোতে প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু ইয়াজউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনী মাঠ সমতল করতে ব্যর্থ হওয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ওয়ান ইলেভেন এসেছিল।

দেশের রাজনীতিবিদদের জন্য সেই দুটি বছর খুব সুখকর স্মৃতির ছিল না। বড় দুটি দলের নেতারাই এক-এগারোর সরকারের সময় নানাভাবে হেনস্থা হয়েছেন। এবারও বিরোধী দলগুলোর জন্য নির্বাচনী মাঠ সমতল না রাখলে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরেও দাঁড়াতে পারে।

ইতোমধ্যে সেই আভাস দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আবার একতরফা নির্বাচন হলে দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে সেটা বলা যায় না। এজন্য দেশবাসীর প্রত্যাশা, একটি সুষ্ঠু-অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক।

গ্রাম-বাংলার চিরায়ত সেই ভোটের উৎসব আবার ফিরে আসুক। সুষ্ঠু ভোটে কোন দল ক্ষমতায় এলো সেটা বড় কথা নয়; জাতি হিসেবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সেটা অন্তত প্রমাণিত হবে।

মিডিয়া পালা আর হাতি পালা সমান: জহির উদ্দিন বাবর

এসএস


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ