শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

বাইয়ে সালামের শরয়ি বিধান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব

বাইয়ে সালাম মানে ক্রেতা মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করবে, আর পণ্য পরবর্তী সময়ে গ্রহণ করবে।

যেমন- ক্রেতা ১ হাজার টাকা নগদ দেবে। ৪ বা ৫ মাস পর বিক্রেতা ক্রেতাকে ৩ বা ৪ মণ ধান দেবে। এ ধরনের বেচাকেনাকে বাইয়ে সালাম বলে।

আরবি শব্দ সালাম অর্থ হস্তান্তর করা। যেহেতু এ ধরনের বেচাকেনায় টাকা অগ্রিম হস্তান্তর করা হয় আর পণ্য পরবর্তী সময়ে গ্রহণ করা হয়, তাই এই বেচাকেনাকে বাইয়ে সালাম বলে। এর আরেকটি নাম হলো বাইয়ে সলফ।

বাইয়ে সালামের প্রচলন কবে থেকে শুরু হয়েছে, তা নিশ্চিতরূপে বলা না গেলেও বিশুদ্ধ হাদিস ও ঐতিহাসিক বর্ণনানুযায়ী রাসুলুল্লাহ সা. এর যুগে খেজুর ও ফসলে বাইয়ে সালামের ব্যাপক প্রচলন ছিল।

মদিনার স্বল্পপুঁজির ব্যবসায়ীরা অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করে কম দামে পণ্য খরিদ করত। আর বিক্রেতারাও চাষাবাদ খরচ বহন করার জন্য অগ্রিম মূল্য নিতে তথা বাইয়ে সালাম করতে আগ্রহী ছিল।

ইসলামি শরিয়তে বেচাকেনাতে সামান্য ধরনের অস্পষ্টতার কারণেও যেখানে বেচাকেনাকে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে বাইয়ে সালামকে পণ্য সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও শুধু গুণাগুণ জানা থাকার শর্তে হালাল সাব্যস্ত করা হয়েছে।

এটি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণ ও সুবিধার দিকে লক্ষ্য রেখে। কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসে এর বৈধতার প্রমাণ রয়েছে।

কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মোমিনরা! তোমরা যখন একে অন্যের সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের জন্য ঋণের আদান-প্রদান করো, তখন তা লিপিবদ্ধ করে রাখ।’ সুরা বাকারা : ২৮২

হাদিসে এরশাদ হয়েছে, ইবন আব্বাস রা. বলেন, আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, বাইয়ে সালাম সম্পর্কে কুরআনে এক নাতিদীর্ঘ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। অতঃপর তিনি উপরোক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. যখন মদিনায় পদার্পণ করেন, তখন মদিনাবাসী এক, দুই ও তিন বছর মেয়াদে বিভিন্ন ধরনের ফল অগ্রিম ক্রয়-বিক্রিয় করত।

তা দেখে তিনি বলেন, যে ব্যক্তি অগ্রিম ক্রয়-বিক্রিয় করবে, সে যেন নির্ধারিত পরিমাপ, নির্ধারিত ওজন এবং নির্ধারিত মেয়াদের জন্য করে। বোখারি, মুসলিম ও আবু দাউদ

আবদুল্লাহ ইবনে আবু আউফা রা. বলেছেন, আমরা নবী সা. এর যুগে, আবু বকর রা. এর যুগে ও ওমর রা. এর যুগে বাইয়ে সালাম (অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়) করতাম।

ইজমার আলোকেও বাইয়ে সালাম প্রমাণিত। কারণ আগের ও পরের প্রায় সব ফকিহই এ ব্যাপারে একমত যে, বাইয়ে সালাম হালাল।

আল্লামা ইবনে কুদামা রহ. বলেন, ‘এতে একদিকে বিক্রেতা অগ্রিম মূল্য দ্বারা নিজের পরিবার ও উৎপাদনের ব্যয়ভার বহনে সমর্থ হয়, অন্যদিকে ক্রেতা ও সুবাদে অপেক্ষাকৃত স্বল্পমূল্যে পণ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়।

সুতরাং এ উপকারী ব্যবসা অবশ্যই হালাল বিবেচিত হবে।’ হাদিস ও ফিকহের সব নির্ভরযোগ্য কিতাবে বাইয়ে সালামের বৈধতার বিষয়ে ইজমা উল্লেখ করা হয়েছে।

বাই সালাম একটি লেনদেন প্রক্রিয়া হলেও সাধারণ বেচাকেনার মতো লেনদেন নয়। কারণ তাতে পণ্য পরবর্তী সময়ে পরিশোধ করার কারণে পণ্যের কোয়ালিটি ও গুণাগুণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির সমূহ আশঙ্কা রয়েছে, যা সাধারণ বেচাকেনাতে নেই।

আর তাই বাইয়ে সালাম এমন পণ্যসামগ্রীতে বৈধ যেগুলোর পরিমাণ, বৈশিষ্ট্য, অবস্থা, প্রকৃতি ও ধরন নির্ধারণ করা সম্ভব।

যেমন- ওজনযোগ্য দ্রব্য : চাল, ডাল, লবণ, চিনি, রড, সিমেন্ট ইত্যাদি।

পরিমাপযোগ্য দ্রব্য : তেল, পানি, গ্যাস, দুধ, মধু ইত্যাদি।

তরল ও দাহ্য পদার্থ, গণনাযোগ্য দ্রব্য : যেমন- কলা, কমলা, ডিম, লিচু ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, গণনাযোগ্য দ্রব্যের পরিমাণ ও গুণগতমানের উল্লেখ হওয়া জরুরি। উল্লিখিত মান ও পরিমাণে অধিক ব্যবধান থাকলে বাইয়ে সালাম বৈধ হবে না।

গজ, ফুট বা মিটার দ্বারা পরিমাপিত দ্রব্য। যেমন- কাপড়, তার, চট, কারপেট, জমি, প্লট, ফ্ল্যাট ইত্যাদি।

চালু হয়েছে কওমি মাদরাসা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার – বিস্তারিত জানুন

ওজনযোগ্য, পরিমাপযোগ্য ও গণনাযোগ্য দ্রব্যের শর্ত এজন্য করা হয়েছে যাতে পণ্যের সুস্পষ্ট পরিচয় ক্রেতার কাছে দেওয়া যায়।

এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত শর্তগুলো বিশেষভাবে লক্ষণীয়-

১. পণ্য ও মূল্য সুনির্দিষ্ট করা। অর্থাৎ ধান বেচাকেনার ক্ষেত্রে ধানের প্রকার, গুণগত মান এবং পরিমাণ সুনির্ধারিত হওয়া এবং সে অনুযায়ী মূল্যও চূড়ান্ত হওয়া।

২. পূর্ণ মূল্য চুক্তির সময়ই হস্তগত করা এবং পণ্য প্রদানের তারিখ ও স্থান নির্ধারিত করে নেওয়া।

৩. কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেতের ধান দেওয়ার শর্ত না করা ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, নির্দিষ্ট ক্ষেতের ধান বা নির্দিষ্ট বাগানের ফল দেওয়ার শর্ত করলে বাইয়ে সালাম চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হয়।

বরং বিষয়টিকে আম বা সাধারণ রাখতে হবে, যাতে যে-কোনো ক্ষেতের ধান ও যে-কোনো বাগানের ফল দেওয়ার সুযোগ থাকে।

আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, বাই সালামে অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করার কারণে সাধারণ মার্কেট মূল্যের চেয়ে খুব বেশি তারতম্য হওয়া উচিত নয়। কারণ এতে তা গুবনে ফাহেশ (চরম লোকসান) হয়ে যাবে, যা নিষিদ্ধ।

(ইলাউস সুনান : ১৪/৪১২; আলবাহরুর রায়েক : ৬/১৬০; রদ্দুল মুহতার : ৫/২১৪)

লেখক: সম্পাদক মাসিক আরবি ম্যাগাজিন আলহেরা

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ