শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই 

আলোকিত মানুষ শায়খুল হাদিস মুফতি শিব্বীর আহমদ মাহবুব রহ.

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: বহুমুখি প্রতিভাগুণে যারা দ্বীন ইসলামের ইলম অর্জনের পাশাপাশি আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষণায় নব দিগন্তের উন্মোচন ঘটিয়েছেন তাদের মধ্যে শায়খুল হাদীস আল্লামা হাফেজ মুফতি শিব্বীর আহমদ’ মাহবুর রহ. অন্যতম। তিনি ইলমে দ্বীনের খেদমতে নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

একজন সুনামধন্য শিক্ষক হিসাবে অর্জন করেছেন স্বকীয় খ্যাতি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষণামূলক কর্মকান্ডে এবং নিত্য নতুন আবিষ্কারে চেতনায় সদা উজ্জীবিত। তার সমুদয় কার্যাদি ও গবেষণামূলক কাজকে নিবেদিত করেছেন রাহে লিল্লায়। আজন্ম সং ও নিষ্ঠাবান এ শিক্ষাবিদ নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দ্বীন ও জাতির খেদমতে সর্বদা ছিলেন কর্মতৎপর।

তিনি ১৩৭১ হিজরীর ২৭  শাবান মঙ্গলবার বৃহত্তর সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানাধীন ঘাটুয়া গ্রামে বংশানুক্রমে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম মাওলানা আব্দুল হালিম রহ. ছিলেন বড় বুজুর্গ। মাতা মরহুমা জাহেরা খাতুন একজন পরহেজগার মহিলা ছিলেন।

শিক্ষা জীবন: তিনি ৫ বছর বয়সে গ্রামের প্রাইমারী স্কুল হতে শুরু করেন। পরে নিকটস্থ জামিয়া ইমামবাড়ী মাদরাসায় দীর্ঘ ৮ বছর লেখাপড়া করে কৃতিত্ব অর্জন করে পরে চট্টগ্রাম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায় এক বৎসর লেখাপড়া করেন।

উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশযাত্রা: যেহেতু হযরত মুফতী সাহেব রহ. এর পিতাসহ মুরুব্বী উস্তাদগণের ইচ্ছা ছিল দেশেই সর্বোচ্চ লেখাপড়া শেষ করবেন, সে কারণে তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসায় কিছুদিন লেখা পড়া করেন।

পরবর্তীতে উস্তাদ মুরুব্বীদের পরামর্শে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান চলে যান। সেখানে করাচী দারুল উলুম ইসলামিয়া আশরাফাবাদে ভর্তি হন। সেখানে শায়খুল হাদীস আল্লামা জাফর আহমদ উসমানী রহ. এর কাছে হাদীসের সনদ কৃতিত্বের সাথে গ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য যে, জাফর আহমদ উসমানী রহ. এর কাছে বোখারী শরীফে ১০০ নাম্বারের মধ্যে ১০০ নাম্বার অধিকারী ছাত্রদের মধ্যে তিনি তৃতীয় ব্যক্তি যিনি ১০০ নাম্বার পেয়ে বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেন। এমনকি পরীক্ষার পেপারের শেষ পৃষ্ঠায় হযরত উসমানী রহ. নিজ হস্তে আরবীতে ‘মাশা-আল্লাহ’ শব্দ লিখেছেন।

তাফসীর কোর্স: হযরত মুফতী সাহেব রহ. যুগশ্রেষ্ঠ হাফিজুল হাদীস ওয়াল কোরআন আল্লামা আব্দুল্লাহ দরখাস্তি রহ. এর কাছে তাফসীর কোর্স অধ্যয়ন করেন। কেরাতে  হযরত মুফতী সাহেব রহ. পাকিস্তান খানপুর হাফিজুল হাদীস আল্লামা আব্দুল্লাহ দরখাস্তী রহ.এর মাদরাসায় তাফসির কোর্সের সময় হযরত মাওলানা ক্বারী শরীয়তউল্লা রহ. কাছে কেরাতে সাবাআ কোর্স সম্পন্ন করেন।

ইফতা কোর্স: হযরত মুফতী সাহেব রহ. আহসানুল ফাতওয়া গ্রন্থের প্রণেতা প্রখ্যাত ফেকাহবিদ আল্লামা মুফতী রশিদ আহমদ লুদহিয়ানভী রহ. এর খেদমতে ইফতা কোর্স সম্পন্ন করেন।

হিফজুল কোরআন: পরিশেষে, ১৩৯৩ হিজরীর ৭ই শাওয়াল সিলেট হযরত শাহ জালাল দরগাহ মাদরাসায় ভর্তি হয়ে হযরত মাওলানা হাফেজ আব্দুল হাই রহ. এর তত্ত্বাবধানে মাত্র ৯৭ দিনে পবিত্র কোরআনের হিফজ সম্পন্ন করে আল্লাহর অশেষ নেয়ামত হাসিল করেন।

কর্মজীবন: শায়খুল হাদীস আল্লামা হাফেজ মুফতি শিব্বীর আহমদ’ মাহবুর রহ. ১৩৯৪ হিজরীর ১৩ই শাওয়াল  বুধবার সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার ‘‘জামিয়া দারুল উলুম মৌলভীবাজার’’ হতে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

পরে জামিয়া ইমামবাড়ী মাদরাসা, জামিয়া আরাবিয়্যা উমেদনগর মাদরাসা, জামিয়া দেওভোগ মাদরাসা নারায়নগঞ্জ, জামিয়া হুসাইনিয়া আরজাবাদ মিরপুর-১, ঢাকা, দারুল উলুম মিরপুর-৬, ঢাকা, মারকাজুল ইসলামী মোহাম্মদপুর ঢাকা, জামিয়া তেজগাও রেলওয়ে স্টেশন মাদরাসা, ঢাকা; জামিয়া নূরীয়া টঙ্গী; জামিআ ইসলামীয়া কাজলা ঢাকা, মাদরাসা তাহযীবুল ইসলাম ঢাকা, সহ তিনি বৃহত্তর সিলেট ও ঢাকার বিভিন্ন কওমী মাদরাসায় কৃতিত্বের সাথে কোরআন, হাদীস, ফেকাহ, তাফসীর ইত্যাদি সহ সকল বিষয়ে সুদীর্ঘ প্রায় ৪২ বছর পর্যন্ত্র ইলমে দ্বীনের খেদমত করেছেন।

জীবনের সর্বশেষ প্রায় ১৬ বছর বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড) এর তা’লীম তরবিয়্যাত বিভাগে প্রধান ও জামিয়া মাদানীয়া মান্ডা, সবুজবাগ, ঢাকার প্রধান মুফতী হিসেবে দায়িত্ব পালনে নিযুক্ত ছিলেন।

এছাড়াও তিনি মাদরাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি বায়োকেমিক ডাক্তারী ও রেডিও, টেপরেকর্ডার, ঘড়ি ইত্যাদি মেরামতের কাজ করে জনসেবায় সম্পৃক্ত ছিলেন।

গ্রন্থ রচনা: লেখালেখির জগতে বাংলা, ইংরেজি, উর্দূ, আরবী, ফার্সি ও হিন্দি ভাষায় অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন বলেই তিনি অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করতে পেরেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ - (১) শরহুল মাওয়াকিত ওয়াল মাওয়াযিন ওয়াল মাওয়াতিন, যা বেফাক বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত ও ইফতা ক্লাসের জন্য সিলেবাস হিসেবে স্বীকৃত।

(২) কাদিয়ানী ষড়যন্ত্র ও তৎপ্রসঙ্গ; (৩) কাশকুল-৮ খন্ড; (৪) দুরুসুল ফুনুন; (৫) আল মুখতাছার আলাল মুখতাছার; (৬) বিজ্ঞানময় কোরআন ও হাদীস; (৭) তারিফুল মুসান্নিফিন; (৮) বায়োকেমিক রেপার্টরী নোটবুক; (৯) ইসলামের দৃষ্টিতে কোপার্নিকাসের সৌরবিজ্ঞান; (১০) দেওয়ারুল মুতানাবিব; (১১) খুলাসাতুল হিসাব; (১২) বুখারী শরীফের ১ম খন্ড (আংশিক); (১৩) মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড (আংশিক); (১৪) হিদায়া আওয়াল; (১৫) জামউত তাফাসীর; (১৬) প্রাথমিক ইমান ও নামাজ শিক্ষা; (১৭) ইলমুল লুগাত; (১৮) তায়ারিফুল ফুনুন।

আবিষ্কার: ১৯৮৪ সালে ঢাকা জামেয়া হুসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মিরপুর মাদরাসায় শিক্ষকতাকালে তেল মবিল পেট্রল গ্যাস ছাড়াই চলতে সক্ষম মোটর সাইকেল আবিষ্কার করেন। তখনকার সরকারের আপত্তির মুখে তিনি এটি বিপণণ করতে পারেন নি। যার ফলে আজ আমরা এমন একটি আধুনিক প্রযুক্তি হতে বঞ্চিত।

ইন্তেকাল:  হযরত মুফতী রহ. গত ৩০ শে জিলহজ্ব ১৪৩৭ হিজরী, ১৫ই অক্টোবর ২০১৫ তারিখ বৃহষ্পতিবার ঢাকা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ইন্তিকাল করেন।

ইন্তেকালের সময় তিনি  স্ত্রী, ৪ মেয়ে, ও ২ ছেলে সহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে যান। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন। আমীন।

এসে গেল যাদুকরী মাদরাসা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ