শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল

ছেঁড়া টাকা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দালাল!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আমিন ইকবাল

কিছুদিন আগে ছেঁড়া টাকা ভাঙাতে (পাল্টাতে) মতিঝিল গিয়েছিলাম- বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে কখনও যাইনি। ছেঁড়া টাকাও ভাঙাইনি কোনো দিন। তাই, চারপাশটা প্রথমে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করলাম। বিশেষ করে ছেঁড়া টাকা কোথায়, কিভাবে ভাঙাতে হয়- জানার চেষ্টা করলাম।

তাছাড়া, আমার ব্যক্তিগত অভ্যাস হলো- নতুন কোথাও গেলে বা নতুন কিছু করতে চাইলে আগে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করি, তারপর কাজ শুরু। এতে সুবিধা হলো- ধরা খাওয়া বা ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

৩১ তলা বিশিষ্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশাল ভবন। নিচতলায় ঢুকেই রিসিপশনে বললাম, ‘ছেঁড়া টাকা পরিবর্তন করতে এসেছি। কোথায়, কিভাবে করব?’

‘ওই যে (আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে) ১৭ নম্বর কাউন্টারে যান, ওখানেই সব।’ দায়িত্বরত কর্মচারী বললেন।

আমি খানিকটা সময় এদিকে সেদিক তাকিয়ে দেখলাম। লম্বা ফ্লোর। বেশ খোলামেলা। পূর্বপাশে অনেকগুলো কাউন্টার। তবে অধিকাংশ গ্রাহকশূন্য। অফিসারের চেয়ারগুলোও খালি পড়ে আছে। হাঁটা শুরু করলাম ওদিকে।

১৭ নম্বর কাউন্টারে যাওয়ার আগেই এক ভদ্রলোক আমার পথ আগলে ধরলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ভাই কি ছেঁড়া টাকা ভাঙাতে এসেছেন?

-হ্যাঁ।
-কত টাকা ভাঙাবেন?
-কেন?

-না, যদি চান আমাদের থেকে ভাঙাতে পারেন। নগদ পেয়ে যাবেন। কাউন্টার থেকে নিতে সময় লাগবে...! অনেক ঝামেলাও হয়।

বুঝতে অসুবিধা হলো না- লোকটা দালাল। পাত্তা দিলাম না তাকে। কাউন্টারের দিকে ফের হাঁটা শুরু করলাম। এরই মধ্যে আরও একজন পথ আটকাল। পূর্বের দালালের মতোই কথা বলতে চাইল। আমি সুযোগ না দিয়ে সোজা কাউন্টারে চলে গেলাম।

১৭ নম্বর কাউন্টারে খুব একটা ভিড় নেই। দু’চারজন দাঁড়িয়ে আছেন। আমিও দাঁড়ালাম। দায়িত্বরত অফিসার চেয়ারে নেই। লাঞ্চে গেছেন। আমার মতোই ছেঁড়া টাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাশেরজনকে জিজ্ঞাস করলাম, অফিসার কখন আসবেন? তিনি জানালেন, লাঞ্চ সেরে আসতে আসতে দুইটা-আড়াইটা হয়ে হতে পারে!

তার সঙ্গে আলাপের একপর্যায়ে বললাম- এই যে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এভাবে দালালরা ঘোরাঘুরি করছে, এতে সাধারণ মানুষ তো প্রতারিত হবে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এটা দেখে না! এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না কেন!

পাশের ভদ্রলোক বললেন, ভাই আপনি কত টাকা ভাঙাতে এসেছেন? বললাম, সাড়ে ১২ হাজার।

টাকার পরিমাণ শুনে নড়েচড়ে উঠলেন তিনি। বললেন, দেখি আপনার টাকাগুলো কতটুকু ছেঁড়া?

পকেট থেকে খুলে দেখালাম।

তিনি জানালেন, আপনি এই টাকা কাউন্টারে জমা দিলে এখনই নতুন টাকা পাবেন না। কিছু হয়তো পাবেন, বাকিটা পরে নিতে হবে। তাছাড়া ব্যাংক পুরো টাকা দেবে না। পার্সেন্ট হিসাবে কেটে রাখবে অনেক। তারচে’ বরং একটা কাজ করতে পারেন, আমার কাছে বিক্রি করে দেন কম-বেশিতে। আমি নগদ দিয়ে দিই।

বুঝে গেলাম- এনিও সেই নাওয়ের মাঝি। কথা না বাড়িয়ে বললাম, ভাই, ব্যাংকে যখন চলে এসেছি, কাউন্টারে জমা দিয়েই টাকা নেব। এতে কিছু কেটে রাখলেও সমস্যা নাই।

সে তখন অনেক নিয়ম-কানুন শুনাতে লাগল আমাকে। বলল, ছেঁড়া টাকা জমা দিতে হলে অনেক প্রসেসিং করতে হবে। স্টিকার লাগাতে হবে। স্টিকার এখানে পাওয়া যায় না। বাইরে থেকে কিনে এনে লাগাতে হবে। তারপর নাম লিখে জমা দিতে হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি।

এরই মধ্যে দুপুরের নামাজের সময় ঘনিয়ে এলো। ভাবলাম, নামাজটা পড়ে আসি। এই ফ্লোরেই নামাজের জায়গা রয়েছে। পশ্চিম পাশে। লোকজন ওজু করে ওদিকে যাচ্ছেন। আমিও এগিয়ে যাচ্ছি। কাছাকাছি যাওয়ার পর আরেক ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা। তিনিও ওজু করে নামাজ পড়তে যাচ্ছেন।

আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হুজুর কি ছেঁড়া টাকা ভাঙাতে এসেছেন? বললাম, হ্যাঁ।

তার বেশভূষা দেখে ব্যাংকের অফিসার অফিসার মনে হলো। ভাবলাম- এতক্ষণে প্রকৃত একজন লোক হয়তো পেয়েছি। স্যার যেহেতু নিজে থেকেই জিজ্ঞাস করলেন, হয়তো টাকা ভাঙানো সম্পর্ক তাঁর কাছে বিস্তারিত জানতে পারব।

বললাম, স্যার, যার সঙ্গেই কথা বলছি- দেখছি সবাই দালাল। সবাই বলে তাদের কাছে টাকা বিক্রি করে দিতে। কিন্তু আমি কাউন্টার থেকে তুলতে চাচ্ছি।

তিনি বললেন, সমস্যা নাই। কাউন্টার থেকেই তুলতে পারবেন। তবে, আপনাকে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে। নামাজের পর অফিসার লাঞ্চ শেষ করে আসতে আসতে আড়াইটা-তিনটা বাজতে পারে।

ততক্ষণ অপেক্ষা করবেন? যদি তাড়া থাকে, তাহলে তাদের কাছে বিক্রি করে দিতে পারেন। এখনই চলে যেতে পারবেন।

হায় আল্লাহ! তিনিও দেখি দালালদের কাছে বিক্রির কথা বলছেন। তার মানে এই লোকও তাদেরই একজন!

পরক্ষণেই ভাবলাম, মনে হয় কাউন্টার থেকে টাকা ভাঙাতে পারব না। শেষ পর্যন্ত না এদের কাছেই দিতে হয়!

তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাদের থেকে ভাঙালে সাড়ে বার হাজারে কত দেবেন? তিনি এক পাশে নিয়ে গেলেন আমাকে। তার পরিচিত অন্য একজনকে ডেকে বললেন, দেখতো হুজুরের টাকাটা। হুজুরকে নগদ দিয়ে দাও।

আমি টাকা দেখালাম। সাড়ে ১২ হাজার টাকা। দেখে বলল, সবগুলোতে ছয় হাজার দেব। আমি না করলাম। তারপর বলল, আরও ৫০০ দেবে। এবারও না করলাম। শেষমেশ সাত হাজার পর্যন্ত বলল। আমি ‘না’ বলে নামাজে চলে গেলাম।

নামাজ শেষে (নামাজের স্থানে বসেই) ভাবছি- ‘আল্লাহ, কোথায় আসলাম! বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো জায়গা, তার ওপর পুলিশের সামনে- দিনে দুপুরে এই যে দালালদের ছড়াছড়ি- এর নাম-ই কি সোনার বাংলাদেশ! এটাই কি নিরাপদ ব্যাংকিং ব্যবস্থা! তাও আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে!

এরই মধ্যে মনে হলো- ইমাম সাহেবের সঙ্গে কথা বলি। তার সহযোগিতা পাব নিশ্চয়। অন্তত ছেঁড়া টাকা ভাঙানোর নিয়মটা তো জানতে পারি।

সালাম দিয়ে তার পাশে গিয়ে বসলাম। সার্বিক পরিস্থিতির কথা বললাম। নামাজের আগে ঘটে যাওয়া কাহিনীগুলো জানালাম। বললাম, আপনি আমাকে সঠিক পথ বলে দেন। কোনো অফিসারের সঙ্গে পরিচয় থাকলে সহযোগিতা করুন।

তারপর যা হলো, পুরোটাই ইতিহাস। টাস্কিত আমি।

তিনি জানালেন, ভাই, আমি এখানকার ইমাম না। নামাজের সময় উপস্থিত ছিলাম, তাই নামাজ পড়ালাম। তবে আমি এখানেই থাকি। আমিও এ ব্যবসা (টাকার দালালি) করি। নগদ টাকা দিয়ে ছেঁড়া টাকা কিনি।

এবার পুরোপুরি চুপ হয়ে গেলাম। প্রায় ১ মিনিট তার চেহারার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম। আমার মুখে কোনো কথা বেরুচ্ছে না। যেন স্তব্ধ হয়ে গেল সবকিছু। টুপি-পাঞ্জাবি পরেই তিনি এই কাজে...!

আমার বিস্ময় দেখে তিনিই নীরবতা ভাঙলেন। বললেন, ঠিক আছে ভাই, আপনি যেহেতু আমার কাছে সঠিক বিষয়টা জানতে চাইছেন, আমি আপনাকে সঠিক তথ্যটাই দেব। তারপর সিদ্ধান্ত আপনার। কাউন্টারে দেবেন, নাকি আমাদের কাছে বিক্রি করবেন।

তিনি আমাকে নামাজের জায়গা ছেড়ে ফ্লোরের দক্ষিণ পাশে নিয়ে গেলেন। নিজের ব্যাগ থেকে কিছু কাগজপত্র বের করে বললেন, ‘দেখুন, এই ফরমটা বাংলাদেশ ব্যাংকের। নতুন নিয়ম করার পর এই ফরমটা ছেড়েছে।

এই নিয়ম হওয়ার আগে ছেঁড়া টাকার জমা দিলে গ্রাহক যা জমা দিত, পুরোটাই নতুন টাকা পেত এবং সঙ্গে সঙ্গেই পাওয়া যেত। আর এখন নিয়ম হলো, ছেঁড়া টাকা কাউন্টারে জমা দেওয়ার পর কর্তৃপক্ষ টাকাটা ওজন দেবে। ওজনে টাকার পরিমাণ যদি ৯০ পার্সেন্ট বা তার বেশি থাকে, তাহলে পুরো টাকা তথা একশ-তে একশই আপনাকে দিয়ে দেবে। এবং নগদ দেবে।

আর ওজনে ছেঁড়া টাকার পরিমাণ যদি ৮৯ পার্সেন্ট থেকে ৭০ পার্সেন্টের মধ্যে থাকে তাহলে শতকরা ২৫ টাকা কম পাবেন। মানে একশ টাকায় ৭৫ টাকা পাবেন। আর ওজনে পরিমাণ যদি ৬৯ পার্সেন্ট থেকে ৫০ পার্সেন্টের মধ্যে থাকে, তাহলে শতকরা ৫০ টাকা কম পাবেন।

মানে একশ টাকায় ৫০ টাকা পাবেন। আর ওজনে যদি ৫০ পার্সেন্টেরও কম হয়, তাহলে কিছুই পাবেন না। ৫০ পার্সেন্টের কম ওজনের টাকা গ্রহণই করবে না ব্যাংক।

শেষের দুই অপশন (৮৯ থেকে ৭০ আর ৬৯ থেকে ৫০ পার্সেন্ট ওজনের টাকা) নগদ পাওয়া যায় না। ফরম পূরণ করে জমা দিতে হয়। টাকা পাওয়া যায় ২০-২৫ দিন পর।’

কথাগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরমে লেখা আছে। আমি নিজে পড়লাম। বিশ্বাস হলো। তারপর বললাম, ভাই, আমি এখন কী করতে পারি? তিনি বললেন, আপনার টাকা যেহেতু মোটামুটি বেশি (সাড়ে বার হাজার), আপনি কাউন্টারে জমা দেন। মাপ দেওয়ান মেশিনে। তারপর বুঝা যাবে।

-ঠিক আছে। কিন্তু জমা দেওয়ার নিয়ম কী? স্টিকার নাকি লাগাতে হবে? কোথায় পাব স্টিকার?

-স্টিকার লাগবে না। টাকার পেছনে আপনার নাম লিখে দেন। তাহলেই হবে। লাইনে দাঁড়ালে ওরাই নেবে।

তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। নামাজ পড়ানোর যোগ্যতা আছে বলে এ ব্যক্তির কাছে হয়তো এতটুকু সহযোগিতা পেলাম।

ঘড়িতে তখন দুপুর দুটো বাজে। দায়িত্বরত দু’জন অফিসার লাঞ্চ শেষ করে এখনও ফিরেননি। দাঁড়িয়ে রইলাম। দুটো পনের, তারপর আড়াইটা হলো। অফিসারদের আসার কোনো নাম-গন্ধ নাই।

মাকতাবাতুল ইসলামের আলোচিত ১০ বই

তবে, পৌনে তিনটায় দেখা মিলল। তাও একজনকে। আরেকজন আসলেন আরও পরে।

আমি পৌনে একটায় ব্যাংকে ঢুকেছিলাম। তখনই শুনেছিলাম লাঞ্চে গিয়েছেন। আর ফিরলেন পৌনে তিনটায়। সরকারি কর্মকর্তা বলে কথা! নচিকেতার গানটা তখন মনে পড়ল-

‘বারোটায় অফিস আসি, দু’টোয় টিফিন
তিনটেয় যদি দেখি সিগন্যাল গ্রিন
চটিটা গলিয়ে পায়ে, নিপাট নির্দ্বিধায়
চেয়ারটা কোনো মতে ছাড়ি।

কোনো কথা না বাড়িয়ে
ধীরে ধীরে পা বাড়িয়ে
চারটেয় চলে আসি বাড়ি

আমি সরকারি কর্মচারী
আমি সরকারি কর্মচারী।’

যাই হোক, আমি শুকরিয়া আদায় করলাম, তবুও তো আসলেন। এরই মধ্যে বেশ কজন গ্রাহক লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ১৫ জনের মতো হবে। অফিসারের আসা দেখে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কেউ কেউ লাইন ভেঙে নিজের টাকা আগে জমা দিতে চাইলেন।

অফিসারের সঙ্গে যাদের পূর্বপরিচয় আছে বা এই ব্যাংকে যাদের আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন, তারা সামনে এগিয়ে অফিসারের মনোযোগ কাড়তে চাইলেন। চাইলেন নিজেরটা আগে নিয়ে বেরিয়ে পড়তে।

ওটা সমস্যা না। আমাদের দেশের সংস্কৃতিটাই এমন। লোক থাকলে- জায়গামতো পৌঁছে যাওয়া যায়। এ আর নতুন কী! আমরা শালার লাইনেই দাঁড়িয়ে যাব সারাজীবন। সাধারণ মানুষ অসাধারণ হতে নেই!

অফিসার এসেই নিজের সহকারীর মাধ্যমে ঘোষণা করলেন- ‘যার টাকা কম, এক-দুই-তিন হাজারের মতো, কেবল তারাই জমা দেন। যাদের বেশি তারা কাল সকালে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিসহ জামা দেবেন।’

‘কেন? এখন নিবেন না কেন?’ কয়েকজন একসঙ্গে প্রশ্ন করলাম আমরা।

সহকারীর উত্তর। ‘এখন সময় কম। অল্প টাকা যাদের, তাদেরটা নেওয়া হবে। বেশি টাকা থাকলে সকালে আসতে হয়। আর জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া বেশি টাকা নেওয়া হয় না।’

মেজাজটা ঠিক রাখতে পারলাম না। বলে বসলাম, ‘আপনারা লাঞ্চে আড়াই ঘণ্টা পার করে দিয়ে বলবেন, ‘সময় নাই, কাল সকালে নিবেন,’ এটা কেমন কথা!

কিন্তু কাজ হলো না। তারা না করছে তো না-ই। পাঁচ হাজারের বেশি যাদের ছেঁড়া টাকা, তাদেরটা জমাই নিচ্ছে না।

আপনার ব্যবসাকে সহজ করুন। – বিস্তারিত জানুন

এই সুযোগে দালালরা আবর ঘিরে ধরল আমাদের।

-বলছিলাম না হুজুর, কাউন্টারে ঝামেলা হবে, আমাদের দিয়ে দেন। শুনলেন না তো কথা।

-আপনাদের দেব না। পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছি। দেখি কতদূর কী হয়!

(মনে মনে আমার চিন্তা- আমি মিডিয়াকর্মী। সঙ্গে প্রেসকার্ডও আছে। বেশি ঘাপলা পাকালে বড় স্যার পর্যন্ত যাব, রিপোর্ট করে দেব। (যদিও আমার কাজ ফিচার পাতায়, নিউজ করা হয় না)।

আমার কথা শুনে দালালদের একজন বলে উঠল- ‘হুম, বেশি বুঝতে গিয়েই পাবলিক ধরা খায়!’

তার কথার প্রতিবাদ করলাম না। নীরবে সরে গেলাম। ভাবলাম, আসলেই কি আমি ধরা খেতে যাচ্ছি! টাকা জমা দিতে পারব না কাউন্টারে?

লক্ষ করে দেখলাম, কাউন্টারের লাইনে তখন কেবল দালাল আর দালাল। তাদের টাকা নিচ্ছেন অফিসাররা। দাললরা সহাকারী ওই লোকের মাধ্যমে অফিসার পর্যন্ত টাকা পৌঁছাচ্ছে আর জোড়ে জোড়ে বলছে- ‘স্যার, আপনার জন্য কী নিয়ে আসব? আম খাবেন স্যার, নাকি পেয়ার আনব?’ ইত্যাদি ইত্যাদি।

বুঝলাম, বিকেলে দালালদের সময় দেন অফিসার। তাদের সঙ্গে বোঝাপড়াও ভালো। তাইতো, আম-পেয়ারার অফার চলছে।

কাউন্টারের দিকে আবারও এগিয়ে গেলাম। এবার একটু উঁচু গলাম বললাম, ‘স্যার, আমার টাকাটা নেন। অনেক দূর থেকে এসেছি। আমার অফিস আছে, কাল আসতে পারব না। এখনই নেন।’

সহকারী জানতে চাইল, ‘কোথায় চাকরি করেন আপনি?’
বললাম, ‘মিডিয়ায়’।

আর কথা বাড়াল না। নিয়ে নিল সাড়ে ১২ হাজার টাকা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাঙ্গিয়ে দিল। আমি হনহন করে হেঁটে কাউন্টার ত্যাগ করলাম। তবে ব্যাংকের লম্বা ফ্লোর পেরুবার আগেই কানে বাড়ি খেল একটা কথা- ‘হুজুর শেষ পর্যন্ত ভাঙিয়েই নিল।’

ওটা দালালদের কণ্ঠ ছিল। দায়িত্বরত দু’জন পুলিশ সদস্য তখন তাদের সঙ্গে খোশগল্পে মগ্ন।

লেখক: সহসম্পাদক, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ