শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা

একজন ক্যাথলিক খ্রিস্টানের চোখে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস শহরের উইলিয়াম মাশক রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্রেইগ কনসিডিন সম্প্রতি এক বই লিখেছেন। সেখানে তিনি আমেরিকার মুসলিমদের অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

তুরস্কের প্রভাবশালী পত্রিকা ডেইলি সাবাহ তার লেখা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। যেখানে সংক্ষেপে আমেরিকার মুসলিমদের নিয়ে তার মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য সেটি ভাষান্তর করেছেন আবদুল্লাহ তামিম।

যুক্তরাষ্ট্রেরপ্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প, হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস প্রতিনিধি পিটার কিং এবং সাবেক স্পিকার নিউটন গিংরিচ যে ধরনের মানসিকতা লালন করেন তাতে মুসলিমরা ভিন্ন মানবিক দৃষ্টিকোণ ও মূল্যবোধ দ্বারা দেশটিতে পরিচিত হয়।

সত্যিকার অর্থে ইসলাম, মুসলিম এবং আমেরিকার জাতীয় পরিচিতি বিস্ফোরণ অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে। মুসলিমদের সম্পর্কে সত্য মিথ্যা আলাদা করা যেকোন সময়ের তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

আমেরিকার রাজনীতিবিদরা যা বলছেন বাস্তব অবস্থা সেটা নয়। মুসলিমদের সম্পর্কে একেবারে উল্টা পরিচিতি তুলে ধরা হচ্ছে।

আমেরিকার অস্তিত্বের পূর্ব থেকেই সেখানে মুসলিমরা বাস করে। আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতা ব্যক্তিগণ দেশটির মাটিতে মুসলিমদের স্বাগত জানিয়েছিলেন।

মুসলিমরা আমেরিকায় একঘেয়েমি সৃষ্টি করেননি। বরং বৈচিত্রময় ধর্মীয় জনসংখ্যার অংশ হয়েছেন। মুসলিমরা আমেরিকার সবচেয়ে শিক্ষিত জনশক্তি। এখানকার ইসলামিক সংগঠনগুলো প্রায়শ আন্তঃধর্ম মতবিনিময়ের আয়োজন করে থাকে।

আমেরিকার অধিকাংশ সন্ত্রাসী হামলার জন্য মুসলিমরা দায়ী নয়। মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী দেশটি চলুক এটা মুসলিমদের চাওয়া নয়। আমেরিকা ইসলাইমিক রাষ্ট্র হোক এমন চাওয়াও নেই মুসলিমদের মধ্যে।

এ কথাগুলো আমেরিকার মুসলিমদের ক্ষেত্রে সত্য। বিভিন্ন গবেষণায় এর পক্ষে সত্যতা পাওয়া গেছে। আমার নতুন বই ‘মুসলিম ইন আমেরিকা এক্সামিনিং দ্যা ফ্যাক্ট’-এ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক তথ্য উপাত্ত ব্যবহার করে দেখিয়েছি মুসলিমরা মিথ্যা প্রচারণার শিকার।

৯/১১ হামলা, সন্ত্রাসী হামলা, জিহাদ, শরিয়া আইন ইত্যাদি বিষয়গুলো সামনে এনে আমেরিকার সমাজ মুসলিমদের নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।

আমেরিকান সংস্কৃতি’র মুলস্রোতের অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও মুসলিমরা এখনো মাইক্রোসকোপের নিচে অবস্থান করছে।

কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে একটি গোষ্ঠি শ্রম ও অর্থ খরচ করে সারা দেশে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। তারা বলে বেড়াচ্ছে, ‘মুসলিমরা আমেরিকান মূল্যবোধের বিরোধী’। মুসলিমদের তারা প্রতিষ্ঠানিকভাবে নির্মূল করতে চায়।

ভিজিট ও সাবস্ক্রাইব করুন আওয়ার ইসলাম টিভি

নেতৃস্থানীয় ইসলামি সংস্থা এবং ইসলামবিদ্বেষ বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের একটি চক্রকে সনাক্ত করেছেন। ক্রমে ক্রমে তাদের পরিধি বেড়েই যাচ্ছে।

বিশেষ করে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ে তা অনেক গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন (সিএআইআর) ও ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর রেস এন্ড জেন্ডার এর যৌথ প্রতিবেদন অনুযায়ী ৩৩টি ইসলাম বিদ্বেষী গ্রুপ আছে; যারা ২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ২০৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।

এছাড়া সেন্টার ফর আমেরিকান প্রগ্রেস (সিএপি) ২০০১ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে ৭টি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৪২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে মুসলিম ভীতি ছড়ানোর জন্য।

ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে কিন্তু আমেরিকা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রনায়করা মুসলিমদের দেশটিতে স্বাগত জানিয়েছিলেন।

নথিপত্রে প্রমাণ হয়, জর্জ ওয়াশিংটন, বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন ও থমাস জেফারসন সবাই আমেরিকার মাটিতে মুসলিমদের আগমন উৎসাহিত করেছিলেন।

১৭৮৪ সালের মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের একটি লেখায় মুসলিমদের ভবিষ্যত আমেরিকার নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

(আমেরিকার নাগরিক হিসেবে গণ্য হবে) হতে পারে তারা এশিয়া, আফ্রিকা অথবা ইউরোপের। মুসলিম, ইহুদি, যেকোন বিশ্বাসের খৃস্টান অথবা তারা নাস্তিকও হতে পারে।

এর এক বছর আগে নিউইয়র্কের নির্যাতিত আইরিশ ক্যাথলিকদের জর্জ ওয়াশিংটন লিখেছিলেন, সকল দেশ ও ধর্মের নির্যাতিত এবং নিপীড়িত মানুষের জন্য আমেরিকা উন্মুক্ত।

আমাদের অধিকারে অংশ নিতে তাদের স্বাগত জানাবো। আমেরিকার ইসলামিক সংগঠনগুলো দেশব্যাপী প্রায়শ ধর্মীয় ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর বক্তব্য দেন।

এছাড়া তথ্য উপাত্ত ও বিশেষজ্ঞ মতামত বলছে, মুলস্রোতের আদর্শ, রাজনৈতিক দর্শন, নীতি ইত্যাদি মেনেই মুসলিমরা রাজনীতিতে এসেছেন। মুসলিম রাজনীতিবিদরা দীর্ঘদিন আমেরিকায় বসবাসকারী নাগরিক।

উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের চেয়ে বারাক ওবামার ডেমোক্রেটিক দলে মুসলমানদের অংশগ্রহণ বেশি।

পিউ রিসার্চ সেন্টার কর্তৃক গবেষণায় দেখা গেছে, মুসলিমরা দারুণভাবে আমেরিকার সমাজের অংশ। গবেষণা মতে, অধিকাংশ আমেরিকার মুসলিম ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার সাথে আধুনিক জীবন যাপন করার মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখেন না।

গবেষণায় আরো উঠে এসেছে, আমেরিকায় মুসলিমরা যেভাবে চলছেন তাতে তারা সন্তুষ্ট এবং বসবাসের জন্য ভালো বলেছেন।

আমেরিকার মুসলিমদের নিয়ে যে অজ্ঞতা ও নীরবতা ছিল সেটার প্রতিকার হিসেবে আমি এই বইটি লিখতে কলম ধরেছিলাম।

শুধুমাত্র বিদ্বেষ তৎপরতার প্রতিবাদ ও উন্মোচন করা জন্য নয়, সেই সাথে আজকের দিনে ফুলে ওঠা ইসলাম বিদ্বেষের নতুন ধারণা প্রদানের জন্যেও বইটি আমি লিখেছি।

সূত্র: ডেইলি সাবাহ

-আরআর

বিসফটি – বিস্তারিত জানুন


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ