শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

শরিয়তের দৃষ্টিতে ইচ্ছাকৃত হত্যার শাস্তি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি আবদুল্লাহ তামিম: মানুষ শেষ্ঠতম জীব। আল্লাহ তয়ালা মানুষকে ভালোবেসে সৃষ্টি করেছেন। নীতিমালা হিসেবে কুরআনুল কারিম নাজিল করেছেন। সঠিক পথ দেখাতে নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন।

সৃষ্টির জীবনযাত্রায় মানদণ্ড ঠিক করে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। প্রত্যেককেই যার যার অবস্থানে দিয়েছেন যথাযথ অধিকার।

অথচ মানুষ আজ মানুষকে পাখির মত হত্যা করছে। মানুষের কাছে মানুষের মূল্যায়ন কমে গেছে। কুরআন ও হাদিসে অবৈধ হত্যাকাণ্ডকে পৃথিবী ধ্বংসের চেয়েও মারাত্মক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যখন কোথাও কোনো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, আল্লাহর গজব নাজিল হওয়ার কথাও বলা আছে।

হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতায় আল্লাহ তয়ালা ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। (সুরা নিসা-৯৩)

আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারিমে আরো বলেন, এ কারণেই আমি বনি ইসলাঈলের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে গোলযোগ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। যে কারো জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে। (সুরা মায়েদা-৩২)

মানুষ হত্যার জঘন্যতা ও হত্যাকারীর জন্য কঠোর শাস্তির কথা হাদিস শরিফেও উল্লেখ করা হয়েছে যে দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা। (তিরমিযি)

কিয়ামতের দিন মানুষহত্যার বিচার করা হবে সবার আগে। তারপর অন্যান্য অপরাধের বিচার করা হবে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফয়সালা হবে, তাহলো রক্তপাত (হত্যা) সম্পর্কিত। (বুখারি ও মুসলিম)

আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাষায় কুরআনুল কারিমে হত্যার শাস্তি সম্পর্কে বলেছেন,  হে মুমিগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেয়া হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের পরিবর্তে ক্রীতদাস, এবং নারীর পরিবর্তে নারী।

(নিহত ব্যাক্তির) তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কিছু ক্ষমা করে দেয়া হলে ন্যায়নীতির অনুসরণ করা ও সততার সাথে তার দিয়ত আদায় করা বিধেয়। এটি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সহজীকরণ ও রহমত বিশেষ। (বাকারা-১৭৮)

আরো বলা হচ্ছে, তাদের জন্য আমরা তাতে বিধান দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং যখম সমূহের বদলে অনুরূপ যখন। আর যে ক্ষমা করে দেয়, তা তার পাপের জন্য কাফফারা হবে। (সুরা নিসা-৩৪)

কুরআনের অন্য জায়গায় রয়েছে, কেউ অন্যায় ভাবে নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীকে তো আমি প্রতিকারের অধিকার দিয়েছি। কিন্তু হত্যার ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে। সে তো সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছে। (১৭:৩৩)

রাসুলুল্লাহ সা.-ও অনুরূপ কথা বলেছেন, “যার কোন ব্যক্তি নিহত হবে, তার দু’টি ইখতিয়ার রয়েছে। সে ইচ্ছা করলে রক্তমূল্যও নিতে পারবে, ইচ্ছা করলে কিসাসও গ্রহণ করতে পারবে। (বুখারি-৬৪৮৬, আবু দাউদ-৪৫০৫)

নবি করিম সা. বলেছেন, একজন প্রকৃত মুমিন তার দ্বীনের ব্যাপারে পূর্ণ প্রশান্ত থাকে, যে পর্যন্ত সে অবৈধ হত্যায় লিপ্ত না হয়। (বুখারি)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের ইচ্ছাকৃত হত্যা ও অনিচ্ছাকৃত হত্যা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ইসলামের দৃষ্টিতে মিস্ড কল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ