শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা

গাজীপুরের নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দৈন্যতা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

পলাশ রহমান
ইতালি থেকে

খুলনার পরে বহুল আলোচিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২৬ জুন। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা, স্বচ্ছতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, হচ্ছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত হতাশা প্রকাশ করেছেন।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক কোনো প্রতিষ্ঠানই প্রশ্নহীন প্রতিবেদন বা মতামত প্রকাশ করতে পারেনি। দেশের সকল মিডিয়া প্রায় একযোগে বলেছে, খুলনার মতোই সরকার গাজীপুরেও ‘নিয়ন্ত্রিত’ নির্বাচন করে তাদের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করেছে।

মজার ব্যাপার হলো সরকারপন্থী মিডিয়া বা প্রতিষ্ঠানগুলোও গাজীপুরের নির্বাচনকে ‘গ্রহণযোগ্য’ বলতে পারেনি। শত চেষ্টা করেও তারা নির্বাচনকে ‘স্বচ্ছ’ বলতে ব্যর্থ হয়েছে।
গাজীপুরের সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাদের মধ্যে দুজন বাদে বাকি সকলের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

জামানত বাজেয়াপ্ত না হওয়া প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামীলীগের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং বিএনপির মোহাম্মদ হাসান উদ্দিন সরকার।

জামানত হারানো প্রার্থীরা হলেন, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, ইসলামি ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ফজলুর রহমান, ইসলামি ফ্রন্টের মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, বাংলাদেশ কম্যুনিস্ট পার্টির কাজী রুহুল আমিন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমেদ।

নৌকা প্রতীকে বিজয়ী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছেন ৪ লাখ ১০ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে হাসান উদ্দিন সরকার পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১ ভোট।

এ দুজনের বাইরে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন হাতপাখা প্রতিকে নাসির উদ্দিন। তিনি ২৬ হাজার ৩৮১ ভোট পেয়েছেন। বাকি প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা এতই লজ্জাজনক যা এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটের সংখ্যা ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৭৪৯। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী একাই পেয়েছেন ৪ লাখ ১০ ভোট। বিএনপির প্রার্থী পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬১ ভোট। অর্থাৎ তারা দুজন মিলে পেয়েছেন ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৭১ ভোট।

বাকি থাকে ৫১ হাজার ৬৭৮ ভোট। এর থেকে ২৬ হাজার ৩৮১ ভোট পেয়েছেন ইসলামি আন্দোলনের প্রার্থী এবং ইসলামি ঐক্যজোটের প্রার্থী পেয়েছেন ১ হাজার ৬৫৯ ভোট। অর্থাৎ এই দুজনের মোট ভোটের সংখ্যা ২৮ হাজার ৪০।

এখন আসা যাক মূল আলোচনায়। হাতপাখার ২৬ হাজার ৩৮১ ভোট এবং মিনারের ১ হাজার ৬৫৯ ভোট। অর্থাৎ ইসলামপন্থীদের মোট ভোটের সংখ্যা মাত্র ২৮ হাজার ৪০। যা মোট ভোটের এক শতাংশেরও অনেক কম।

বিপরীত দিকে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দল আওয়ামী লীগ বিএনপি পেয়েছে প্রায় ৯৫ শতাংশ ভোট। যদিও তাদের দুজনের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান প্রায় দুই লাখের উপরে। যা দেশের রাজনীতির জন্য এবং ইসলামপন্থীদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।

ঐতিহাসিক ৫ জানুয়ারির এক দলীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের শাসনামলে এর আগে একটি স্থানীয় সরকার এবং সিটি নির্বাচন হয়েছে। সে সময়ে প্রায় সবগুলো সিটিতে বিএনপির মেয়র নির্বাচিত হয়েছিল। যা শাসক দল আওয়ামী লীগের জন্য ছিল অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।

কারণ এতে একদিকে যেমন সরকারের জনপ্রিয়তা প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছিল, অপর দিকে বিরোধী দল বিএনপির নেতাকর্মীরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছিল। সুতরাং এ বছরের শেষ মাথায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকার কোনো ভাবেই বিএনপিকে ছাড় দিতে রাজি নয়, আবার ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচনও করতে চায় না। তারা আবিষ্কার করে ‘নিয়ন্ত্রিত’ নির্বাচন।

নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে বৈশিষ্ট হলো- সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য ভোটাভুটির জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদানের উপস্থিতি থাকবে নির্বাচনী এলাকায়, কিন্তু কোনো কিছুই সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবে না। অর্থাৎ গোটা ভোট প্রক্রিয়াটাই হবে সরকারি নিয়ন্ত্রণে।

নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার যতোই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য হিসাবে তুলে ধরতে চেষ্টা করুক না কেনো, এতে কিন্তু দেশের রাজনৈতিক সংকট প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে প্রবল ভাবে।

প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দল আওয়ামী লীগ বিএনপির প্রাপ্ত ভোটের বিশাল ব্যবধানই বলে দিচ্ছে দেশ চরম আকারে রাজনৈতিক সংকটে ভুগছে, নয়তো প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর ভেতরে দুই লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে হার জিত হতে পারে না। কোনো গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার দেশে বা সরকারি নিয়ন্ত্রণহীন নির্বাচনের দেশে এমনটা হতে দেখা যায় না।

মাকতাবাতুল ইসলাম

একইভাবে দেশের সকল নির্বাচনে ইসলামপন্থী দলগুলোর অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক দৈন্যতা সামনে চলে আসতে শুরু করেছে। গাজীপুরের নির্বাচনে ইসলামি আন্দোলন এবং ইসলামি ঐক্যজোটের প্রাপ্ত ভোট বলে দেয় জনআস্থা থেকে ইসলামপন্থী রাজনীতিকরা অনেক পিছিয়ে আছেন। তারা এত বেশি পিছিয়ে আছেন যার গতি ঠেলাগাড়ি এবং মটরগাড়ির সাথে তুলনা যোগ্য।

অবাক হওয়ার বিষয় হলো এর পরেও দেশের ইসলামপন্থী রাজনীতিকদের মধ্যে কোনো নির্বাচনী বোঝাপড়া নেই। তাদের মধ্যে দৃশ্যমান কোনো নির্বাচনী সমঝোতা নেই। আচরণে মনে হয় তারা আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ছাড় দিতে রাজি আছে, কিন্তু নিজেদের মধ্যে পরস্পরকে ছাড় দিতে কোনোভাবেই রাজি নয়। যার বড় উদাহরণ গাজীপুরের নির্বাচন।

আমি মনে করি সেখানে ইসলামি ঐক্যজোটের প্রার্থী দেয়ার কোনো দরকার ছিল না। বরং নিজেদের মধ্যে একটা নির্বাচনী সমঝোতা করে নিতে পারলেই তারা অধিক ভালো করতো।

গাজীপুরের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে ঢাকার দুই অংশ, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর এবং খুলনার সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ইসলামি আন্দোলন গাজীপুরের মতোই কাছাকাছি সংখ্যার ভোট পেয়েছে। যা কোনোভাবেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতার ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারেনি। নূন্যতম জামানত ফেরত পাওয়ার মতো ভোটও তারা সংগ্রহ করতে পারেনি।

এ থেকে বোঝা যায় দেশের ইসলামপন্থীরা মূলধারার রাজনীতিতে কতোটা পিছিয়ে রয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা মাত্র ১ শতাংশ ভোট সংগ্রহ করার মতোও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। তাদের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যার দিকে তাকালেই বোঝা যায় তারা রাজনীতির মূল শ্রোত থেকে, রাজনৈতিক জনসমর্থন থেকে, গণমানুষের আস্থা থেকে কতো যোজন যোজন দূরে অবস্থান করছেন।

এত বিশাল ভোট ব্যবধান মাথায় নিয়ে নিজেদের তৃতীয় শক্তি, বিকল্প শক্তি ভেবে লাভ কী? এতে বরং নিজেদের অযোগ্যতা অদক্ষতা প্রকাশ পায়। দেশের ধর্মপ্রাণ চিন্তশীল মানুষ হতাশায় নিমজ্জিত হয়। ইসলাপন্থী রাজনীতির প্রতি গণমানুষ শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলে।

সত্যিই যদি নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে হয়, বিকল্প শক্তি বা স্বতন্ত্র শক্তি হিসাবে নিজেদের জায়গা করে নিতে হয় তবে মূল ধারায় রাজনীতি করতে হবে। দেশের গণমানুষের সুখ দুঃখের ভাগিদার হতে হবে। গণমানুষের কাতারে নেমে আসতে হবে। ফুলটাইম রাজনীতি করতে হবে। নয়তো এ বিশাল ব্যবধান কোনো ভাবেই ঘোঁচানো যাবে না। ইসলামকে রাজনৈতিক আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না।

কাছাকাছি সময়ে আরো অন্তত তিনটি শহরে সিটি ইলেকশন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রত্যাশা করে এসব নির্বাচনে ইসলামপন্থীরা অতীত থেকে আরো বেশি ম্যাচিউর্ড ভূমিকা রাখবে। ভোটের মাঠে নতুনত্ব দেখাতে সক্ষম হবে।

গণমানুষ আকৃষ্ট হয় এমন বিষয়গুলো সরল ভাবে তুলে ধরতে পারবে। নিজেদের মধ্যে একটা নির্বাচনী সমঝতা তৈরি করতে সক্ষম হবে। পরস্পরকে শত্রু না ভেবে বন্ধু ভাবতে শিখবে। সত্যিকারার্থেই নিজেদের এক ‘দেহ’ ভাবতে শিখবে।

লেখক: প্রডিউসার, রেডিও বেইস ইতালি

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ