আওয়ার ইসলাম : আমাদের নবীজি হজরত মুহাম্মদ সা. একজন শ্রমজীবী মানুষ। খেটে খাওয়া মানুষ। আরবের ধনাঢ্য মহিয়সী নারী হজরত খাদিজাতুল কুবরার ব্যবসায় শ্রম বিনিয়োগ করেছেন হজরত মুহাম্মদ সা.।
ব্যবসায় নবীজির সততার এবং সফলতার গল্পও মক্কার অলিতে গলিতে বাতাসের মতো ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমজীবি নবীজির ভক্ত-অনুরক্ত সাহাবারাও গায়ে গতরে খেটে খাওয়া মানুষের উদাহারণ ছিলেন।
ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. ছিলেন আরবের ব্যবসায়ী। নিজে ব্যবসায় শ্রম দিয়েছেন, অনেকের শ্রম দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
বাইশ লক্ষ বর্গমাইল রাজ্যের প্রধান হজরত ওমর রা. ছিলেন একজন রাখাল। মাঠের শ্রমিক। মক্কার জানজান ময়দানে তিনি উট চড়াতেন। এক সময় তার রাজত্বকালে এই মাঠ দিয়ে যাচ্ছিলেন, ঝাড় ঝাড় চোখের পানি ফেলে কাঁদছিলেন। চোখের পানি মুছতে মুছতে খলিফা ওমর বলছিলেন, আমি এই মাঠে উটের রাখাল ছিলাম।
গায়ে পুরো নয়; টুকরো কাপড় ছিল। ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হয়ে বসে পড়লে বাবা বেদমভাবে প্রহার করতেন। আজ আল্লাহর করুণায় এই আকাশের নিচে আমি প্রধানতম ব্যক্তি। রাখাল ওমর আজ রেশমি রোমাল দিয়ে নাকের ময়লা পরিস্কার করে!
ব্যবসা ও বাণিজ্যে শ্রমের প্রবাদপুরুষ হজরত উসমান রা.। ইহুদির বাড়িতে খেটে সংসার চালানো শ্রমজীবি মানুষটির নাম হজরত আলী। হজরত আলী রা. নিজের শ্রম জীবনের কথা এভাবে বলেন, আমরা তখন মদিনায়।
নবীজি, হজরত ফাতেমাসহ ঘরের সবাই ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছেন। ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে শহরতলির দিকে কাজের সন্ধ্যানে বেরিয়ে পরি। এক স্থানে একজন মহিলাকে মাটি জমা করতে দেখি। মনে হলো সে হয়তো মাটি ভেজাবে। অনুমান সত্য হলো।
তখন একেকটি খেজুরের বিনিময়ে একেক বালতি পানি কূপ থেকে তুলে দেয়ার কাজ নিলাম। ১৬ বালতি পানি তুললাম। আমার হাতে লালে লাল ফোসকা পড়ে গেল। কাজ শেষে হাত-মুখ ধুয়ে পারিশ্রমিক পেলাম ১৬টি খোরমা।
খোরমা নিয়ে দৌঁড়ে হাজির হই নবী করিম সা. এর কাছে। পুরো ঘটনা নবীজি শুনলেন। চোখের পানি ফেললেন। পেটের ক্ষুধা মিটাতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খোরমা খেলেন।
হজরত আবু হুরায়রাও রা. মদিনায় একজন মহিলার গৃহশ্রমিক হিসাবে কাজ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি বুশরা বিনতে গাজওয়ানের ঘরে খাবার এবং এক জোড়া জুতার বিনিময়ে কাজ করতাম।
তারা উটে আরোহণ করলে তা হাঁকিয়ে নিয়ে যেতাম এবং নেমে এলে তাদের সেবা করতাম। এছাড়াও হজরত বেলাল রা. মসজিদে নববীর মোয়াজ্জিনের কাজ করতেন।
হজরত ইকরামা রা. ছিলেন ইবনে আব্বাস রা. বাড়ির শ্রমিক। মহিলা সাহাবি উম্মে আয়মান বারাকাহ ছিলেন নবীজির দাদা আবদুল মুত্তালিবের গৃহপরিচালিকা।
হজরত জায়েদ রা. ছিলেন খাদিজতুল কুবরার খাদেম। ইসলামের প্রথম শহিদ হজরত সুমাইয়া রা. ছিলেন হজরত আবু হুজাইফার কেনা গোলাম।
বিখ্যাত সাহাবী হজরত সালমান ফারসির জীবনও কেটেছে মরু আরবের মাঠে-ঘাটে। পথে পান্তরে। এক সময় খলিফা ওমরের শাসন আমলে মাদাইনের গর্ভণর ছিলেন হজরত সালমান ফারসি।
রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পাওয়া ৫ দেরহাম পুরোটা সদকা করে দিতেন। আর সংসার চালাতেন খেজুর পাতার ঠোঙা বিক্রি করে। (ক্রীতদাস থেকে সাহাবি : ১০৫)। আমাদের ইসলাম ।
আরও পড়ুন : ছয় কাজে জান্নাতের ওয়াদা