শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি

চীনে মুসলিমদের বন্দি করে ‘ব্রেনওয়াশ’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: চীনে ২ কোটি মুসলিমের বাস৷ মুসলমানদের ইসলামের পথ থেকে সরিয়ে চীনের রীতিনীতিতে অভ্যস্ত করার জন্য খোলা হয়েছে বন্দিশিবির৷ সেখানে অন্তত ৯ লাখ মানুষকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

Kasachstan Muslimische Camps in China (picture-alliance/AP Photo/N. H. Guan)

দুঃসহ স্মৃতি: যেসব শিবিরে মুসলমানদের রাখা হচ্ছে, সেটাকে বলা হচ্ছে ‘ইনডকট্রিনেশন ক্যাম্প’ বা দীক্ষাদান শিবির, যদিও এটি মুসলমানদের কাছে ‘ব্রেইন ওয়াশ’ কেন্দ্র হিসেবেই বেশি পরিচিত৷

বন্দি শিবিরের একজন ওমির বেকালি৷ তিনি নিজের দুঃসহ স্মৃতি বর্ণনা করেছেন সংবাদ সংস্থা এপি’র কাছে৷

Kasachstan Muslimische Camps in China (picture-alliance/AP Photo/N. H. Guan)

নির্যাতন: কয়েক বছর আগে চীন থেকে কাজাখস্তানে চলে গিয়েছিলেন বেকালি৷ ২০১৭ সালে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চীনে আসেন৷ আসার পরই পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে ইনডকট্রিনেশন ক্যাম্পে নিয়ে যায়৷

এপিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বেকালি সেই বন্দি শিবিরে তাঁর উপর চলা অকথ্য নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন৷

আত্মহত্যার চেষ্টা: বেকালি জানান, আটকের এক সপ্তাহ পরে তাকে একটি অন্ধকার ঘরে বন্দি করে রাখা হয়৷ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনো খাবার বা পানি দেয়া হয়নি৷

যখন তিনি তাদের নির্দেশ মানতেন না, তখন দেয়ালের সামনে ৫ ঘণ্টা টানা দাঁড়িয়ে থাকতে হতো৷ তখন টানা ২০ দিন ধরে তার উপর যে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়, তারপর তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন৷

Kasachstan Muslimische Camps in China (picture-alliance/AP Photo/N. H. Guan)

ভাবনায় পরিবর্তন: বেকালি জানান, এই বন্দিশিবিরে যারা থাকেন, তাদের নিজেদের চিন্তাভাবনা অর্থাৎ ধর্মীয় চিন্তা পরিবর্তন করতে হয়৷ মুসলমান ছাড়াও এ শিবিরে বিদেশি কয়েকজনকেও রাখা হয়েছে৷

ধর্ম ছেড়ে কম্যুনিস্ট পার্টির প্রশংসা: বন্দি শিবিরে সবাইকে খুব ভোরে উঠতে হতো৷ চীনের জাতীয় সংগীত গাইতে হতো৷ সকাল সাড়ে সাতটায় চীনের পতাকা উত্তোলন করতে হতো৷

এছাড়া এমন সব গান গাওয়া হতো যেগুলোতে কেবল কম্যুনিস্ট পার্টির প্রশংসা করা হয়েছে৷ এছাড়া তাঁদের চীনা ভাষা এবং চীনের ইতিহাস পড়তে হতো৷

Uiguren in China (Getty Images/K. Frayer)

রাষ্ট্রপ্রধানকে ধন্যবাদ: বেকালি জানান, খাবার হিসেবে প্রতিদিন সবজির স্যুপ আর রুটি দেয়া হতো৷ মাঝে মাঝে শুকরের মাংস এবং মদ খেতে বাধ্য করা হতো৷

খাওয়ার আগে বাধ্যতামূলকভাবে কম্যুনিস্ট পার্টিকে ধন্যবাদ জানাতে হতো, পাশপাশি মাতৃভূমি এবং চীনা রাষ্ট্রপতিকেও ধন্যবাদ জানাতে হতো৷

China Peking Chinesische Flagge (picture-alliance/AP Photo/A. Wong)

নতুন পরিচয়: চীনের পশ্চিমাঞ্চলের জিনজিয়াং এলাকায় এই বন্দিশিবিরগুলো স্থাপনের লক্ষ্য হলো মানুষের রাজনৈতিক চেতনায় পরিবর্তন আনা৷ তাদের নিজেদের ধর্মীয় চিন্তাভাবনা পুরোপুরি দূর করা এবং তাদের নতুন রূপে পরিচয় করানো৷

Deutschland Chinesische U20 Nationalmannschaft - TSV Schott Mainz (J. Duez)

৯ লাখ বন্দি: জিনজিয়াং-এর থেকে নির্বাসিত মানুষদের দ্বারা পরিচালিত তুরস্ক ভিত্তিক একটি টেলিভিশন জানিয়েছে, তাদের কাছে বেশ কিছু ফাঁস হওয়া সরকারি তথ্য রয়েছে, যার মাধ্যমে জানা গেছে, এসব বন্দিশিবিরে ৯ লাখ মানুষ বন্দি আছে৷

যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থার মতে, সংখ্যালঘুদের এত বিশাল গণ কারাগার বিশ্বে আর কোথাও নেই৷

China Uiguren (picture-alliance/dpa/H. W. Young)

গোপন কার্যক্রম: চীনা কর্তৃপক্ষ এই বন্দিশিবিরের কথা স্বীকার করে না৷ তবে, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসলামি চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়তে মতাদর্শ পরিবর্তন করা দরকার৷

সংবাদ সংস্থা এপি বন্দিশিবিরের বেশ কয়েকজন বন্দি এবং নির্দেশকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন৷ প্রত্যেকেই নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, কেননা, তাদের পরিবার রয়েছে চীনে৷

Kasachstan Muslimische Camps in China (picture-alliance/AP Photo/N. H. Guan)

হারানোর কিছু নেই: বেকালি কাজাখস্তান ফিরে গেছেন৷ ভেবেছিলেন কারো কাছে কিছু বলবেন না৷ কিন্তু গত মার্চে চীনা কর্তৃপক্ষ তার বাবা-মা এবং বোনকে ধরে নিয়ে যায়৷ তাই তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বিশ্বকে তাঁর গল্প বলার সিদ্ধান্ত নেন৷

বেকালি জানান, তিনি এসব কথা জানাতে চান, কারণ, তাঁর আর হারানোর কিছু নেই৷

সূত্র: ডয়েচেভেলে

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ