শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

হযরত উসমান রা. এর দানশীলতা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম: একদিন এক নিঃস্ব লোক রাসূলের নিকট এসে কিছু সাহায্য চাইল। তখন রাসূলের নিকট কিছুই ছিল না। তিনি লোকটাকে হযরত উসমানের নিকট পাঠালেন। দরিদ্র ব্যক্তিটি হযরত উসমানের গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখেন যে, একদল পিঁপড়ে বেশ কিছু শস্য একটি স্তুপ থেকে গর্তে নিয়ে যাচ্ছে।

হযরত উসমান শস্যগুলো একত্রিত করে কিছু শস্য পিঁপড়ের গর্তের কাছে ছড়িয়ে বাকীগুলি আবার স্তুপে রেখে দিচ্ছিলেন।লোকটি ধারণা করলো যে, হযরত উসমান বড় কৃপণ।

সে মনে মনে ভাবলো যে, দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও সে নিজে পিঁপড়ের মুখ হতে শস্য কেড়ে নিতো না। তাই কিছুই না চেয়ে লোকটি চলে গেল।

পরদিন লোকটি আবার রাসূলের নিকট উপস্থিত হল এবং কিছু চাইল। সে রাসূলকে জানাল যে, কৃপণ উসমানের (রা) নিকট কিছুই আশা করা যায় না, তাই সে কিছুই চায়নি। রাসূল সা. তাকে আবার হযরত উসমানের নিকট পাঠালেন। সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও গেল এবং দেখতে পেল যে, হযরত উসমান (রা) তাঁর চাকরকে বাতির সলতে উঁচু করে দেয়ার দায়ে বকাঝকা করছেন।

কারণ তাতে অধিক তেল খরচ হয়। দরিদ্র লোকটি মনে মনে ভাবলো যে, তার বাড়িতে আলো আরো উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে এবং সে কখনও এরূপ তেলের হিসাব করে না। হযরত উসমানের কৃপণতা সম্বন্ধে তার ধারণা আরো জোরদার হলো। কিছু না চেয়েই সে আবার রাসূল সা. এর নিকট ফিরে গেল। হযরত উসমানের বিরুদ্ধে কৃপণতার অভিযোগ শুনে রাসূল (সা) মৃদু হাসলেন এবং লোকটিকে আবার বললেন, হযরত উসমানের কাছে ফিরে যেতে এবং কিছু চাইতে।

তৃতীয়বার লোকটি হযরত উসমানের নিকট এসে দেখে যে, হযরত উসমানের বাড়ীতে তুলা শুকাতে দেয়া হয়েছে। ঢেকে দেয়া হয়েছে জাল দিয়ে। জালের নিচ হতে কিছু তুলা উড়ে উড়ে যাচ্ছিল। হযরত উসমান সেগুলিকে ধরে আবার জালের নিচে রাখছেন। লোকটির মন অত্যন্ত বিরূপ হয়ে উঠলো।

ভাবলো এমন কৃপণও কি কিছু দান করতে পারে? তবুও যেহেতু রাসূল তাকে তিনবার উসমান (রা) এর কাছে পাঠিয়েছেন, তাই সে গিয়ে কিছু চাইলো।হযরত উসমান ভাবলেন, লোকটিকে কি দেওয়া যায়, যে লোককে রাসূল সা তার নিকট সাহায্যের জন্য পাঠিয়েছেন, তার চাইতে সাহায্য নেওয়ার যোগ্য আর কে হতে পারে?
তখন দেখা গেল বেশ দূরে একটি সরু রেখা। রেখাটিকে একটি উটের কাফেলা বলেই মনে হলো।

কিছুক্ষণ পর হযরত উসমান বুঝতে পারলেন, যে কাফেলা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় গিয়েছিল সেটিই ফিরে আসছে। হযরত উসমান তাকে লিখে দিলেন যে, ঐ কাফেলার সবচেয়ে ভাল উটটি এবং যার উপর সবচেয়ে বেশি দ্রব্যসম্ভার আছে সেটিই সে নিতে পারে। লোকটি প্রথম মনে করলো যে হযরত উসমান তামাশা করছেন। কিছুক্ষণ কথাবার্তার পরও লোকটি তার দান সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হতে পারলো না।

সন্দিগ্ধ চিত্তে সে গেল কাফেলার নিকট। সবচেয়ে ভালো এবং প্রথম উটটিই তার পছন্দ হলো। সেটি সে নিতে চাইল। কাফেলার পরিচালক অনুমতি দিল। কিন্তু মরুভূমিতে চলাকালে প্রথম উটটিকে কাফেলা হতে সরিয়ে নেয়া সহজ নয়। সবগুলো উটই প্রথমটিকে অনুসরণ করল। কাফেলার পরিচালক তখন লোকটিকে বললো যে, আস্তানায় ফিরে যাওয়ার পর উটটি দেয়া হবে। হযরত উসমানের নিকট খবর দেয়া হল যে, একটি উটকে কাফেলা হতে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। তাই তখন তার নির্দেশ পালন করা হয়নি।

খবর শুনে হযরত উসমান (রা) বললেন, হয়ত আল্লাহর ইচ্ছা এই যে, কাফেলার সবগুলি উটই লোকটি পাবে। অতঃপর তিনি কাফেলার পরিচালককে নির্দেশ দিলেন যে সবগুলো উটই যেন লোকটিকে দেয়া হয়।

লোকটিতো বিস্ময়ে অবাক! অতো বড় কৃপণের কিভাবে এতো বড় দান করা সম্ভব হলো? হতবাক হয়ে সে তার পূর্ববর্তী তিন অভিজ্ঞতা জানাল এবং দু’প্রকার ব্যবহারের তাৎপর্য কি জানতে চাইল।

হযরত উসমান যে জবাব দিলেন তার সারমর্ম এই যে, আল্লাহ বিশ্বের সমস্ত সম্পদের মালিক, মানুষ হলো তত্ত্বাবধায়ক বা পাহারাদার। সে শুধু আল্লাহর ইচ্ছানুসারে সম্পদ নিজের জন্য এবং সমাজের অপরাপর ব্যক্তির কল্যাণের জন্য ব্যয় করতে পারবে।

মানুষের কাজ হলো আল্লাহর সম্পদ নিজের মর্জি মত রক্ষণাবেক্ষণ করা। যদি কোনো ব্যক্তির তত্ত্বাবধানকালে কোনো সম্পদের এক কণামাত্র বিনষ্ট হয় তবে তার জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সম্পদের অধিকার শুধু বিশেষ সুবিধা নয়, বরং একটি বিরাট দায়িত্ব। সুত্র: হাদীসের কিসসা-৪৫

আরো পড়ুন- হযরত মুয়াজ রা. প্রতি রাসুল সা. এর ৮ উপদেশ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ