শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

বৈশাখের বখাটেরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রোকন রাইয়ান

ছোটবেলার বৈশাখগুলো আসলেই স্মরণীয়। গ্রামের বড় বাজারগুলোতে মেলা বসতো। নানারকম খেলনা সামগ্রীর পসরা থাকতো। সাথে থাকতো মুড়ি মুরকি আর হাতি ঘোড়ার সাজ।

সেই হাটকে মনে হতো ছবির মতো। যেন সুন্দরের ঢেউ তোলা নাও, গল্পের বইতে দেখা রঙিন ছবি। কোথাও প্যাঁ পোঁ করে বাঁশি বাজছে। কোথাও বা দোকানির হাঁক- বৈশাখি অফার, আসেন ভাই।

এভাবে গ্রামীণ হাটগুলো শিশুকিশোরদের আনন্দে জিইয়ে রাখত। বাবা কিংবা ভাইয়ের হাত ধরে একটু ঘুরতে বেরুলে, একটা বারুদভর্তি পিস্তল কিনে দিলে মন ভরে যেত। সারাদিন উচ্ছ্বল আনন্দে মৌ মৌ করতো চারপাশ।

শহরে আসার পর সে আনন্দগুলোকে মিইয়ে যেতে দেখেছি। এখানকার রঙঢঙয়ে এক অবিচলতা। বাঙালির চিরচেনা বৈশাখ ভিন্ন আমেজে দোদুল্যমান।

ঢাকায় যখন আসি বয়স তখন সাকুল্যে ১৫ কি ১৬। এই বয়সীরা বাইরে বেরুতে পারতো না। তবে বড় কেউ কেউ সারাদিন ঘুরে ঘুরে রাতে এসে আমাদের শোনাত। কী হলো রমনায়, চারুকলার বকুলতলায় কিংবা সোহরাওয়ার্দিতে।

সেবার বেশ বৃষ্টি ছিল। যদিও সকালটা ছিল তকতকে তরতাজা। বন্ধু সেলিম আল ফারুক আর কে কে যেন শহর দেখতে বেরিয়েছে। বিকাল থেকে হুটহাট বৃষ্টি। বৈশাখে তখন হাজার মানুষ ঘুরতে বেরুতো। বিশেষ করে শাহবাগের এ দিকটায় লোকারণ্য হয়ে যেত।

সেলিম ভাই রাতে ফিরলেন কাকভেজা হয়ে। আমরা কয়েকজন তার কাছে বসে গেলাম। কী কী হলো কেমন হাকিকত জানার জন্য।

সেলিম ভাই বললেন, আজ একেবারেই এলাহি কাণ্ড। সবাই যখন ঘুরছে হঠাৎ বৃষ্টি। নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার তাড়া সবার মধ্যে। রাস্তা ছোট। মানুষের গাদাগাদি অবস্থা। যতজন নারী ততজন পুরুষ। গাদাগাদির এ সুযোগ নিচ্ছে বখাটেরা। তাদের হাত চিপায় পড়া নারীর সর্বাঙ্গে ঘুরঘুর করছে।

বড় হয়ে যখন আমরাও একটু আধটু ঘুরতে বেরুনোর সুযোগ পেয়েছি তখন দেখেছি দূর থেকে। কত নারী এখানে এসে সম্মান হারান। কত বোন বখাটের চোখের গ্রাসে মিটিয়ে দেন নিজেকে। রাস্তা আর বৃক্ষগুলো, পথচারী আর বাসগুলো তাদের অসহায়ত্বের সাক্ষী বনে যায়।

আমার ছবির মতো গ্রামের হাট শহরে দেখি না। গ্রামেও কমে এসেছে দৃশ্যগুলো। সেখানে বড়লোকি আয়োজন স্থান করে নিয়েছে। স্কুল কিংবা সামাজিক সংঘের অফিসে পান্তা-ইলিশের আয়োজন করা হয়। সেখানে দাওয়াতি মেহমানকে খাবার খেয়ে দিয়ে আসতে হয় ৫০০ কিংবা ১ হাজার টাকা।

বাস্তবিক জীবনে এখন আনন্দ নেই। তাই তাকে নানারূপে আনন্দ অর্জন করা খুবই জরুরি। খুব জরুরি ব্যতিক্রমী বিনোদন। সেটা স্টেডিয়ামে শত মানুষের সামনে হোক কিংবা বেঞ্চিতে বসা কোনো বন্ধুর মাথায় পেছন থেকে আঙুল ঠুকে। অথবা ফেসবুকে একটু তামাশা করে।

একালে বখাটেপনার রঙ, ধরণ পাল্টেছে পুরোদমে। যত নিরাপদ করা হচ্ছে রাস্তাঘাট তত অনিরাপত্তায় ছেয়ে যাচ্ছে সমাজ। বৈশাখের বখাটেরা এখন আরও উন্মাতাল। তারা শুধু একটু ধরা ছোঁয়াতে বিশ্বাসী না। ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর খুন এসবেও সগর্ব পারদর্শী।

এক সময়ের নিরাপদ পৃথিবীটা কেন দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে, কেন বখাটেদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে বিষয়গুলো কি নতুন করে ভাবার এখনো হয়নি? নাকি গৎবাঁধা ছকেই ভেবে ভেবে ক্লান্ত হবো?

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ