শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

চাঁদ কি তারার আম্মু নাকি; ছড়ায় ভিন্ন আবহ তৈরির ষোলকলা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আমিন আশরাফ: চাঁদ কি তারার আম্মু নাকি। ছড়াকার ও গল্পকার সাইফ সিরাজের বই। নামের অসাধারণত্ব ছাপিয়ে ভেতরের ছড়াগুলো নরোম, কোমল ও আদরছোঁয়া।

সাধারণত ছড়ার নির্মাণশৈলীটা হয় যদি একজন দক্ষছড়াবিদের তাহলে তার গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপ্তি অনেক ভেতরের। অনেক গভীরের। অনেক বেশি বোধ ও বিশ্বাসের।

বাজারে গাছের সঙ্গে মাছ মেলানো জাতীয় অন্ত্যমিলের ছড়ার বইয়ের সংখ্যাটা যতো না বেশি ঠিক ততোটাই কম সম্পূর্ণ নতুন বয়ানে, নব রূপকল্পে, ঝরেঝরে শব্দের গাঁথুনি, তাল, লয়, অন্তপ্রাস ও অন্তমিল ব্যবহারের ছড়া বই।

সাইফ সিরাজ সেই দলেরই একজন। যিনি সস্তা জনপ্রিয়তার উর্ধ্বে থেকে ফরমায়েশি লেখাকে বরাবরই এড়িয়ে ছড়ার জগতে একটা ভিন্ন আবহ তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। 'চাঁদ কি তারার আম্মু নাকি' তার সে মহান চেষ্টার ষোলকলা।

ছড়া অনেকেই লিখে। সেসব ছড়ায় একধরনের তাল-লয় আসতে পারে। পাঠক তাতে কিছু সময়ের জন্য একটু দোলায়িত বা আন্দোলিত হতে পারেন ঠিক, তবে এরচে বেশি কিছু নয়! কিন্তু ছড়ার সম্মিলিত গুণের সঙ্গে পাঠকের অন্তর্চোখে একটা দৃশ্যকল্প তৈরির করার অসাধারণ ক্ষমতাও রাখেন কবি সাইফ সিরাজ।

যা ছড়া পড়ে শেষ হওয়ার পরও পাঠককে অনেকটা সময় বিমোহিতের সমুদ্রে আটকে রাখে। পাঠক মুগ্ধ নয়নে ছড়াটা আবারও পড়েন। যেমন, 'জামাই সাজার ইচ্ছে হয়' ছড়াটায় তিনি লিখেছেন,

-আমার না মা জামাই হতে ইচ্ছে হয়
মাথায় মুকুট মুখে রুমাল
গলার মালা টুকটুকে লাল
তুমিও অনেক পাবে স্মৃতি কিচ্ছেময়...

-ওরে বাঁদর বলিস কি তুই
বয়স হলো- পাঁচের ওপর মাত্র দুই
জামাই হবি! আয় কাছে আয়
গাট্রা দিয়ে মুকুট পড়াই তোর মাথায়।

-তোমরা কেন সাজাও না বর আমাকে?
তাহলে কি বর সাজাবে বাবাকে?
জামাই সাজার অপরাধে গাট্রা দাও
চাচ্চুকে তো জামাই সাজুক ঠিকই চাও!

এমন সব দারুণ দারুণ ছড়ায় চমৎকার সব গল্পের চিত্রায়ন তিনি তৈরি করেছেন, যা পাঠককে কুড়মুড়ে ও মচমচে স্বাদের পাশাপাশি জিভে ছড়াগুলো গল্পের স্বাদ দিতে নুন্যতমও কুণ্ঠিত হবে না।

একই রসনায় ভিন্নধর্মী ছড়া গেলাতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। চাঁদ কি ছড়ার আম্মু নাকি ছড়াবদ্ধ বইটাতে, নষ্টালজিয়া কাতর শৈশব-কৈশোরের পিচ্ছি ও উচ্ছ্বলতার দিনরাতগুলোকে বাঙময় করে তোলেছেন। এনেছেন গাঁয়ের মেঠোপথ, অন্ধকার চান্নিপসরের রাতগুলোর বয়ান-বর্ণনা।

বলেছেন, শিশু-কিশোর মনের দুদার্ন্ত স্বপ্নগুলো আর ইচ্ছেগুলোর কথা। তিনি 'মেঘ হতে চাই' ছড়ার একাংশে লিখেছেন,

আমি এখন মেঘ হতে চাই
পরম স্বাধীন মেঘ
দামাল ছেলের মতই আমি
আনবো প্রেমাবেগ।

বিলের পাড়ে রাত কাটাবো
ধরবো বোয়াল মাছ
আতঙ্ক আর আবেগ নিয়ে
চড়বো তেঁতুল গাছ।

পল্লী কবি জসিম উদ্দীনের কবিতায়,

এই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে লম্বা মাথার চুল
কালো মুখেই কালো ভ্রমর, কিসের রঙিন ফুল !
কাঁচা ধানের পাতার মত কচি-মুখের মায়া
তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া।

অথবা তাঁর 'কবর' কবিতা-

ওই খানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখে‍ছি দুই নয়নের জলে
এতটুকু তারে ঘড়ে এনেছিনু পরীর মত মুখ
পুতুলের বিয়ে ভেংগে গেছে বলে ‍কাদিয়া ভাষাইত বুক
এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিয়া ভেবে হইতাম সাড়া
সারা বাড়ি ভড়ি এত সোনা মোর ছড়াইয়া গেল কারা

আমরা জানি, মাটি আর মানুষের কবি পল্লী কবি জসিম উদ্দীন। গ্রামের হাওয়া আর ধূলিকণার সাথে যার মন সর্বদা ভেসে বেড়িয়েছে। প্রাণবন্ত ও সহজ উচ্চারণে মানুষের মনের কথাগুলো তিনি সাজিয়েছেন বড় বর্ণনাতিক আয়োজনে।

সাইফ সিরাজের ছড়াগুলো ঠিক তেমনটা না হলেও সেদিন বেশিদূর নয় যে, এ পথের পথিক সাইফ সিরাজ অতি সত্বর তিনি তাঁর লক্ষ্যস্থলে পৌঁছতে পারবেন। পাঠক আপনি পড়তে শুরু করলে শুধুই পড়তে চাইবেন, যখন পড়বেন, 'চাঁদ কি তারার আম্মু নাকি' বইশিরোনাম ছড়াটা,

তারারা সব ঝাঁক বেঁধেছে
গগণ পুরের উঠোন জুড়ে
তারারা কি দেখবে আমায়
বাইরে গেলে রাতদুপুরে?

ছোটো বড়ো সকল তারা
চাঁদের পাশে খেলায় মাতে
চাঁদ কি তারার আম্মু নাকি
কী করে সব চাঁদের সাথে?

এক কথায় অনন্য, অনবদ্য কিশোরদের ছড়ার বই চাঁদ কি তারার আম্মু নাকি। বইটা খুলতেই আপনি পাবেন, 'নাক টিপেছে চাঁদ।' পড়তে পড়তে আপনার মন-মেজাজ মুগ্ধ ঝরে উঠবে। দারুণভাবে মন কেড়ে নেবে ছড়াগুলো । আপনি যখন পড়বেন,

চাঁদ আমাকে ডাক দিয়ে যায় আলোর ভেলায় চড়ে
মিহিন ডাকে বুকের ভেতর ভয়ের কাঁপন ধরে
চাঁদ মামা তুই ডাকিস কেন? শিশির ভেজা রাতে
প্রশ্ন শোনে লাজুক হেসে জ্যোস্না দিয়ে হাতে-
নাক টিপে চাঁদ বললো আমায়
শিশির দেখে কেউ কি ডরায়?

তবে কিছু কিছু ছড়ার ক্ষেত্রে যুক্তাক্ষর শব্দের ব্যবহার কম করলে মনে হয় ছড়াগুলো আরো সুখপাঠ্য হতো। সব মিলিয়ে দারুণ এটি এক ছড়াগ্রন্থ, সাইফ সিরাজ ভাইয়ের চাঁদ কি ছড়ার আম্মু নাকি।

কিশোর ছড়ার বই হলে বইয়ের ইনারের মেকাপের ব্রাইটনেসটা আরো কম হলে ভালো হতো। ছড়ার মান উচ্চধর্মী হওয়ায় বইটা বিগ সাইজ ও ভেতরটা চাররঙা গ্লোসি আর্ট পেপার হলে ভালো হতো।

পাঠক! ছড়ার বইটা আপনি কিশোর-কিশোরীদের জন্য কিনতে পারেন। আই থিং আপনার ঘাঁটের পয়সা জলে যাবে না।

এক নজরে চাঁদ কি ছড়ার আম্মু নাকি
সাইফ সিরাজ

অলঙ্করণ: আলমগীর জুয়েল
প্রচ্ছদ: মোস্তাফিজ কারিগর
প্রকাশক: সাহস পাবলিকেশন্স
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১৮

পরিবেশনা: রকমারি ডট কম, গতি প্রকাশনী, পঙ্খিরাজ
দাম: ১৩৫ টাকা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ