শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল

দেশে দক্ষ জনশক্তির বিকল্প নেই

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন

কোনো দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য দক্ষ জনশক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বলা যায়, দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার, আর্থিক পরিষেবার প্রাপ্তি ও বৈদেশিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও এর কোনোটিই দক্ষ জনশক্তির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।

আমাদের দেশে বিপুল জনশক্তি রয়েছে, কিন্তু তাদের অনেকে এক বা একাধিক কাজে দক্ষ না হওয়ায় একদিকে যেমন দেশের শিল্পোন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে জনশক্তি রপ্তানিতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বলতে চাচ্ছি, দেশে কর্মক্ষম লোকের অভাব না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ খাতে দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে।

ডিজিটাল যুগে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যথাযথ উন্নয়ন ঘটাতে গেলেও বিপুল সংখ্যক দক্ষ আইটি কর্মী প্রয়োজন। আমরা গার্মেন্ট শিল্পে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই দেশে এ খাতে আজ অনেক বিদেশি কাজ করছে।

কিন্তু প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে পারলে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব। এমন বাস্তবতায় আগামী পাঁচ বছর দেশের কোন খাতে কত লোক দরকার, তা নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এতে করে চাকরির বাজারও বিস্তৃত হবে।

আধুনিক অর্থনীতির উন্নয়নে দক্ষ জনশক্তি যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে তা অস্বীকারের কোনোই উপায় নেই। তাই শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের জনগণকে সম্পদে পরিণত করার মধ্য দিয়ে আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনও বাড়ানো সম্ভব।

প্রসঙ্গত, আমরা প্রায়ই মালয়েশিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর ও কোরিয়াকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে উল্লেখ করে থাকি। কিন্তু একটি কথা ভুলে যাই যে, এসব দেশ বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও সঠিক নেতৃত্বের কারণেই এতোটা চমকপ্রদ উন্নয়ন অর্জন করতে পেরেছে।

আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারেও ক্রমেই আমাদের দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বাড়ছে। আর দেশের অভ্যন্তরে বেকারের সংখ্যা যখন ক্রমেই বাড়ছে, তখন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার বিষয়টি আরও গুরুত্ব নিয়ে সামনে আসছে। কারণ একজন দক্ষ-প্রশিক্ষিত মানুষ যথাযথ রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য প্রাপ্তি সাপেক্ষে আত্মকর্মসংস্থানের পথ অনেকটা নিজেই খুঁজে নিতে পারেন।

প্রসঙ্গত, দেশে এখন উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ লাখের বেশি; সংখ্যাগত বিচারে যা রাশিয়া, চীন, ভারত কিংবা ব্রাজিলের মতো দ্রুত উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। কিন্তু কথা হচ্ছে, সে অনুপাতে আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় শিক্ষাগ্রহণের পর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না কেন?

এক্ষেত্রে দশ কথার মূল কথা, দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষে কারিগরি শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। কেননা, উন্নত বিশ্বের সব শিক্ষার্থীই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়তে হবে, তেমন করে ভাবে না। সেখানে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষা-গবেষণা ও বিশেষ ক্ষেত্রে কাজ করার লক্ষ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।

তাদের দেশের মোট শিক্ষার্থীর একটি বিশাল অংশ একটি নির্দিষ্ট শিক্ষা গ্রহণের পর কারিগরি শিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়ে। ফলে সেসব দেশে দক্ষ জনশক্তির কোনো অভাব হয় না। এমনটি শুধু পশ্চিমা দেশেই নয়, এশিয়ার অন্যতম দুটি ধনী দেশ সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া তাদের মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে নিজেদের দেশকে উন্নতির শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে।

সিঙ্গাপুরে কারিগরি শিক্ষার হার ৬৫ শতাংশ এবং মালয়েশিয়ায় তা ৪০ শতাংশ। যুক্তরাজ্য, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্রে এই হার সর্বনিম্ন ১৭ থেকে সর্বোচ্চ ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত। কিন্তু বাংলাদেশে এক্ষেত্রে বাস্তবতা হচ্ছে উল্টো। সরকারের পক্ষ থেকে কারিগরি শিক্ষার হার ১৪ শতাংশ বলা হলেও বাস্তবে তা আরও কম। কিন্তু কেন?

বলা যায়, আমাদের দেশে এখনো যে কোনো বৈধ কাজের প্রতি সম্মানবোধ তৈরি হয়নি বলেই কারিগরি শিক্ষার হার কম। অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতা, শিক্ষকের অভাব ও মানহীন শিক্ষার কারণেও দেশে মানসম্মত কারিগরি জ্ঞানসমৃদ্ধ জনশক্তি তৈরি হচ্ছে না।

আর এ সুযোগে ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকার মতো দেশের দক্ষ জনশক্তি বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এখন আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পেও কাজ করছে। আমাদের নিজেদের দেশের তৈরি পোশাকের শিল্পে যে মানসম্পন্ন কারিগরি জ্ঞানসমৃদ্ধ জনশক্তির প্রয়োজন তার চাহিদাও পূরণ করতে পারছে না দেশের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। অজ্ঞাত কারণে সরকারও এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে না। শুধু মুখেই কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে দক্ষ জনশক্তি তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে বার বার।

ঘোষণা দেয়া হচ্ছে এ শিক্ষার মর্যাদা বৃদ্ধিরও। আমরা কেন ভাবছি না যে, কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দেশের প্রতিবন্ধীদেরও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। প্রসঙ্গত, স্টিফেন হকিং প্রতিবন্ধী হয়েও বিগব্যাং তথ্য দিয়ে বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছেন। কবি জন মিলটন, হেলেন কিলার প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও নিজ কর্মগুণে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন।

লেখক : কবি, গবেষক ও সাংবাদিক
সহযোগী সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ