শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল

৪শ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে নরসিংদীর এক মসজিদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জহিরুল ইসলাম হুসাইনী : আনমানিক ৪শ বছর পূর্বে জমিদারী আমলে বর্তমান নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার বাজার সংলগ্ন প্রতিষ্ঠা করা হয় একটি মসজিদ। যা বর্তমানে বেলাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ নামে পরিচিত।

মসজিদটি যখন প্রথম প্রতিষ্ঠা হয়, তখনই এটি এলাকার অন্য মসজিদ থেকে একটু ভিন্ন কাঠামোতে প্রতিষ্ঠা হয়।প্রায় ১২ শতাংশ  জমির ওপর সাদা চুনের পালিশে মজবুত পিলারে দাড় করানো হয়  সাত গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটি।

লোক মুখে শোনা যায় কালের সাক্ষী এ মসজিদটির ভেতরে নাকি আগে  অলৌকিকভাবে কুরআন তেলাওয়াত শোনা যেত। ফলে মসজিদটি " ফজিলতের মসজিদ " হিসেবেও পরিচিতি লাভ করে।

ফজিলতের মসজিদের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা ও জমিদাতা কে? তা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ যায়। প্রবীণ এলাকাবাসীর মধ্য থেকে নির্মিত মসজিদটির জমিদাতার নাম জানতে চাইলে কেউ বলেন, বীরবাঘবের গ্রামের জনাব মাহমুদ ব্যাপারী। কেউ বলেন, বিভিন্ন জনের নাম ।

তবে মসজিদের খতিব ড. খলিলুর রহমান খান আল আযহারির কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তথ্য উপাথ্যের মাধ্যমে আমি জানতে পারি এই মসজিদের মূল জমিদাতা হলেন জমিদার দেওয়ান আব্দুল মান্নান দাদ খাঁনের মেয়ে দেওয়ান আয়শা আখতার খাতুন ।

যিনি ছিলেন কিশোরগঞ্জের হয়বত নগর দেওয়ান বাড়ীর বাসিন্দা। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইদগাহ ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার জমিদাতাও তিনি।

ড. খলিলুর রহমান খান আরো বলেন, তিনি ছিলেন হযরত শাহ জালাল ইয়ামানি রহ. এর বন্ধুবর শাহ হামজা ও গভর্ণর শাহ সেকান্দরের উত্তরসূরী।

কালের বিবর্তনে জমিদারদের গড়ে যাওয়া এ মসজিদটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে।চুনের প্রলেপে ধবধবে সাদা মসজিদটি হয়ে পড়ে ফেকাশে। জায়গায় জায়গায় খসে পড়ে দেয়াল। তাছাড়া প্রত্নতত্ত্বের এ নিদর্শনটি তাকে দেখতে আসা মুসল্লিদের ভীরও সামাল দিতে পারছিল না ।

দীর্ঘদিন ধরে এই সঙ্কটাপন্ন  অবস্থা চলার পর, ২০০৮ সালে সাহয্যের হাত বাড়িয়ে দেন নরসিংদীর কৃতি সন্তান, বিশিষ্ট শিল্পপতি, শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক, থার্মেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল কাদির মোল্লা ।

তার উদ্যোগে সংস্কারের ছোঁয়া লাগে মসজিদটিতে । দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি জায়গা করে নেয় বাংলাদেশের বৃহৎ পাঁচ মসজিদের একটিতে।তবে বর্তমান মসজিদটির অধীনে রয়েছে তিন একর ২৭ শতাংশ জায়গা ।যা তাকে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মসজিদ দাবী করার অধিকার দেয়।

বর্তমানে মসজিদটি আট হাজার মুসল্লির নামাজের পরিমাপ করে বানালেও প্রায় ২২০০০ মুসল্লি অনায়াসেই নামাজ পড়তে পারেন।

তাছাড়া প্রায় ৪কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদটির সংস্কারক জনাব কাদির মোল্লা সম্প্রতি বলেন, আয়োতন ও নির্মান শৈলিতে এটিকে দেশের শীর্ষ মসজিদের রূপ দিতে তিনি প্রকল্প হাতে নিচ্ছেন।

বর্তমানে বেলাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে  পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে নিয়মিত অনেক মুসুল্লির সমাগম ঘটে । বিশেষ করে জুমার ও দুই ঈদের নামাজসহ রমজান মাসে এবং ইসলামের ইতিহাসের বিশেষ দিনগুলোতে আশপাশের এলাকা ছাড়াও দেশ-বিদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ছুটে আসেন এখানে ইবাদত বন্দেগির জন্য।

এছাড়া মসজিদটি শুধু এক নজর দেখার জন্য  অন্যান্য ধর্মালম্বিরা ছুটে আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।আর এর পাশে উয়ারী ও বটেশ্বরের মতো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থাকায় প্রায় সময় বিদেশি পটর্যকগণও দেখতে আসেন।

মনোরম এ মসজিদটি আপনি দেখতে যাবেন যেভাবে-

ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের কাঁচপুর ব্রিজ পার হয়ে বামে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধরে একটু এগোলেই নরসিংদী। ঢাকা থেকে নরসিংদীর দূরত্ব মাত্র ৫৪ কিলোমিটার। গুলিস্তান, সায়েদাবাদ ও আব্দুল্লাহপুর থেকে নরসিংদীর বাস পাওয়া যায়। বিভিন্ন পরিবহন ৫ মিনিট পর পর নরসিংদীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা (যদি জ্যাম না থাকে)। ভাড়া ৬০ টাকা থেকে শুরু করে পরিবহন ভেদে ৯০ টাকা পর্যন্ত লাগবে। ট্রেনেও নরসিংদী যেতে পারবেন। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে নরসিংদী যেতে ট্রেনে সময় লাগে ১ ঘণ্টার মতো, ভাড়া ৫০ টাকার মতো।

এরপর নরসিংদী জেলা সদর থেকে

বেলাব উপজেলা পৌছাতে জনপ্রতি বাস ভাড়া ২৫ টাকা/সিএনজি ভাড়া ৩০টাকা । এরপর বেলাব উপজেলা সদর থেকে বেলাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পর্যন্ত রিক্সায় জনপ্রতি ভাড়া ১০টাকা ।

থাকা খাওয়া

ঢাকা থেকে সকাল সকাল রওয়ানা দিলে বিকেল বা সন্ধ্যা অবদি ঘুরে আপনি আবার ঢাকায় ফিরে আসতে পারবেন।

আর যদি চান মনোরম এ মসজিদটির সঙ্গে সঙ্গে নরসিংদীর সোনাইমুড়ি টেক, কুরআনের অনুবাদক ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ি, ড্রিম হলি ডে পার্ক, শিবপুর গ্যাসক্ষেত্রে, বিষমুক্ত সবজীর দৃষ্টিনন্দন বাজার, কুটির ও তাঁতশিল্পসহ অন্যান্য ঐতিহ্যগুলো দেখে আসবেন তাহলে সেখানে খুব অল্প টাকায় থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থা আছে।

সঙ্গে তো আপনি ইচ্ছে করলেই নিয়ে ও খেয়ে আসতে পারবেন নরসিংদীর বাহারি পিঠাপুলি, বিভিন্ন প্রকারের সুস্বাদু ফল।

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ