শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬


‘রোহিঙ্গা শিবিরে বিধবাদের কান্না’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইকবাল আজিজ, টেকনাফ প্রতিনিধি

বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক সেবা সংস্থা আল মারকাজুল ইসলামী ৷ দেশের নানাপ্রান্তে দীর্ঘ বছর ধরে অসহায় মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। পিছিয়ে নেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও।

গত ২৫ আগষ্ট থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম বার্মা সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে লাখো রোহিঙ্গা বাংলাদেশ প্রবেশ করেন৷ তাদের সেবা শশ্রুষায় শুরু থেকেই এগিয়ে আসে আল মারকাজুল ইসলামী।

টেকনাফে যখন রোহিঙ্গা ঢল শুরু হয় বিশিষ্ট আলেম ও দাঈ মাওলানা সালমান আহমদ গিযেছিলেন ছোট্ট এক টিম নিয়ে। প্রথম দিকে ত্রাণ কাজ করার সময় চোখে পড়ে বিধবাদের করুন অবস্থা। চিন্তা করেন এদের নিয়ে আলাদা করে মেহনত করার। সেই থেকে শুরু বিধবা পল্লীর। তার পাশে এগিয়ে আসে আল মারকাজুল ইসলাম। সহযোগিতা করে আল নূর কালচারাল সেন্টার।

পুরো কাজের তদারকির করছেন মাওলানা সালমান আহমদ। তিনি বলেন, আমরা প্রথম বার যখন ত্রণ নিয়ে টেকনাফে আসি এক ছেলেকে দেখি তার মাকে খাঁচায় করে এপাড়ে এনেছে। তিনি কেঁদে কেঁদে আমাদের বলছেন, আমি একন হাফেজা। কখনো মানুষের সামনে এভাবে যাইনি। কিন্তু আজ যেতে হলো।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অঞ্চলে বৌদ্ধ ও মগ সেনাদের দ্বারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে নারীরা। সেখানকার অধিকাংশ নারীকেই বিধবা করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে প্রতিটি নারী। তাদের সেবা শশ্রুষায় আলাদা ব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল সবচে বেশি। আল মারকাজুল ইসলামী সে দিকটি বিবেচনা করেই বৃহৎ এড়িয়া নিয়ে গড়ে তুলেছেন বিধবা পল্লী। যেখানে সেবা পাচ্ছে অসংখ্য বিধবা।

প্রথমে একটি বিধবা পল্লি করা হয় যেখানে ২৭ টি পরিবার থাকতে পারে।  দ্বিতীয় বিধবা পল্লী করা হয় ৫০ টি পরিবার নিয়ে। যেখানে সব মিলিয়ে বর্তমানে ২০০ জনের মতো অবস্থান করছে। কর্মহীন থাকলে নারীরা ঝগড়া ফাসাদ করতে পারে ভেবে ভেতরে তালিম ও কুরআন শেখারও ব্যবস্থা করা হলো।

বিধবাপল্লীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ মজবুত। বাইরে থেকে কোনো পুরুষ ঢোকার সুযোগ নেই। ভেতরেই নারীদের প্রয়োজনীয় সব রয়েছে। টয়লেট ও আলাদা গোসলখানা রয়েছে এবং রান্নার জন্য চুলার ব্যবস্থাও।

মাওলানা সালমান আহমদ জানান, এখানে প্রতিটি পরিবারকে আমরা প্রতি মাসে খরচ দেয়ার চেষ্টা করি। আল মারকাজুল ইসলামীর পাশাপাশি আল নূর কালচারাল সেন্টার কাতার প্রতি মাসে এদের সাধ্যানুযায়ী অর্থায়ন করছে।

রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই হাফেজ এবং কুরআন পাঠে অভ্যস্ত। তারা শুরুতেই আমাদের কাছে ত্রাণের পাশাপাশি কুরআন শরিফ চেয়েছে। আমরা আল নূর কালচারাল সেন্টারের পক্ষ থেকে প্রথমেই ১ হাজার কুরআন শরিফ বিতরণ করেছি।

বিধবা পল্লীতে রয়েছে আলাদা তালিম ঘর। যেখানে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে তালিম করা হয়। রাখা হয়েছে একজন জিম্মাদার। সালেহা নামের সে রোহিঙ্গা নারীকে পড়ানো বাবদ অর্থও দেয়া হয়।

বিধবা পল্লীতে কুরআন শেখান সালেহা খাতুন। নিজের পরিবারের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে মাত্র তিন মাস আগে। এ অবস্থায় আমার স্বামীকে তারা শহীদ করে দেয়। বাবা কোথায় আছে তারও খোঁজ পাইনি।

সালেহা এলাকার লোকদের সঙ্গে একাই আসেন টেকনাফে। নিজের ঘরবাড়ি আর অর্থ সম্বল হারালেও শেষ ভরসা নিজের সম্ভ্রমটুকু রক্ষা করতে চান। আর চান পর্দায় থেকে আল্লাহর হুকুম পালন করে বাকি জীবন পাড় করতে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ বিধবা পল্লীতে এরকম বিধবার সংখ্যা অনেক। কে জানে এরা কি কখনো আবার তাদের সম্বল ফিরে পাবে কিনা। ফিরে পাবে কিনা নিজেদের সোনালি সংসার।

রোহিঙ্গা শিবিরে এনজি কার্যক্রমের ওপর নজরদারি বাড়ানো উচিত


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ