শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

খালেদার আইনজীবীর প্রশ্ন; টাকাই খরচ হয়নি মামলা কিসের?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

‘মাননীয় আদালত, এই মামলার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের টাকা আত্মসাৎ। কিন্তু কোনো টাকা তো খরচই হয়নি। সব টাকা ব্যাংকে আছে। সুদে-আসলে তা বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে। তাহলে আত্মসাৎ হলো কীভাবে? হোয়াট ইজ আত্মসাৎ? আর আত্মসাৎ যদি না হয়, তাহলে মামলা কিসের?’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী আহসান উল্লাহ্‌ গতকাল বুধবার আদালতে এ যুক্তি তুলে ধরেছেন। বকশীবাজারের বিশেষ জজ আদালতে এই মামলার কার্যক্রম চলছে।

আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘এখন যদি ঘোষণা করা হয় জিয়ার নামে একটা ট্রাস্ট করা হবে, ৫০০ কোটি টাকা এখনই চলে আসবে। যদি বঙ্গবন্ধুর নামে কোনো ট্রাস্ট করার ঘোষণা দেওয়া হয়, এখনই হাজার কোটি টাকা চলে আসবে। এদের কি টাকা চুরি করতে হয় নাকি? তাই বলছি মাননীয় আদালত, এখানে মামলা কোথায়? আত্মসাৎটা কোথায়? এটা একটা সেমিনার টাইপ মামলা। একটা কাল্পনিক মামলা।’

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা মন্তব্য করেন, ‘আপনি এত দিন কোথায় ছিলেন?’ জবাবে আহসান উল্লাহ্‌ বলেন, ‘যেখানেই থাকি, এখন তো এসে পড়েছি। আর এসেই যখন পড়েছি, তখন বিলম্বে হলেও তো বিচার।’

আইনজীবী আহসান উল্লাহ্‌ গতকাল সকাল থেকেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও অন্যতম সাক্ষী দুদকের হারুন-অর রশিদের তদন্ত প্রতিবেদন ও জবানবন্দি পাঠ করে বিভিন্ন অসংগতি, পরস্পর সাংঘর্ষিক বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, দীর্ঘ ১৪ বছর ট্রাস্টের কোনো টাকা ব্যয় করা হয়নি। একটা অফিস করেনি। ব্যাংক থেকে সুদও তোলেনি। মাননীয় আদালত, এটাই কি অপরাধ হয়ে গেছে? অবশ্য হতে পারে। কারণ, কখনো কখনো বিধির বিধানও উল্টে যায়।’

আইনজীবী বলেন, ‘ট্রাস্টের অফিস না নেওয়ায় কী সমস্যা হয়েছে? অফিস নিলে তো কিছু টাকা খরচ হয়ে যেত। এখন তো অনেক জায়গায় পড়াশোনাও হচ্ছে গাছতলায়। তবে মাই লর্ড, কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যাদের অফিস থাকে বেশ গোছানো। ভেতরে কী থাকে তা বোঝা যায় না।’

তাঁর মক্কেল শরফুদ্দিন আহমেদকে আসামি করার জন্য বিস্ময় প্রকাশ করে আহসান উল্লাহ্‌ বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট আশুলিয়ায় তাঁর মালিকানাধীন ৭৬ শতাংশ জমি কেনার জন্য টাকা দিয়েছিল। সেই টাকায় তিনি কিছু দোকান-ফ্ল্যাট কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু যখন শুনলেন এই টাকা নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হতে পারে, তখন সুদসহ তা ফেরত দিয়ে দিয়েছেন।

আইনজীবী বলেন, যখন মামলা হয় তখন শরফুদ্দিন সাহেব তাঁর ক্যানসারে আক্রান্ত ছেলের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে ছিলেন। পরে ২৬ বছরের সেই ছেলে মারা যায়। দেশে এসে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তদন্ত কর্মকর্তা এর সবই জানতেন। প্রতিবেদনে তিনি শরফুদ্দিনের টাকার উৎস এবং ফেরত দেওয়ার ঘটনা সবই বলেছেন। তারপরও তাঁকে আসামি করা হলো কেন?’

এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে উল্লেখ করে আইনজীবী বলেন, দুদক নির্দেশ দিয়েছে। তাই তদন্ত কর্মকর্তা সব প্রমাণপত্র পেয়েও, প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করার পরও তাঁকে আসামির তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন। কারণ, কাউকে না কাউকে আসামি করতে হবে।

এই পর্যায়ে আইনজীবী আহসান উল্লাহ্‌ একটু থেমে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আই বেগ, মাননীয় আদালত, একটা কথা পরে ভুলে যেতে পারি, তাই এই ফাঁকে বলে নিই। আদালতকক্ষে প্রচুর মশা। কামড়াচ্ছে। এগুলো ডেঙ্গুর মশা হতে পারে। ইওর অনার, যদি একটু স্প্রে করা হয়।’

এরপর আবার এই আইনজীবী শরফুদ্দিনকে আসামি করার অযৌক্তিকতা ও তাঁর ছেলের মৃত্যুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, যার সন্তান মারা যায় তিনিই বোঝেন এর কষ্ট। সেই কষ্ট চেপে রেখে শরফুদ্দিন সাহেবকে এই মামলায় হাজতবাস করতে হচ্ছে।’

প্রসঙ্গক্রমে তিনি বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমানের ওপর নির্যাতনের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, তাঁর পিতা যখন মারা যান তখন তিনি নিতান্তই একটি বালক। সুতরাং সে এতিম। সেই এতিমকে ধরে নিয়ে উল্টো করে ঝুলিয়ে কোমর ভেঙে দেওয়া হয়।

এ সময় আদালতকক্ষে স্তব্ধতা নেমে আসে। খালেদা জিয়া, শরফুদ্দিন আহমেদসহ অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। আইনজীবী নিজেও কেঁদে ফেলেন এবং বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি আর পড়ব না। মামলার পরের তারিখে যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আর্গুমেন্ট করব।’

এ সময় বিচারক মো. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে উপস্থাপিত একটি আবেদনের বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের কাছ থেকে শুনতে চান। আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী আবদুর রেজাক খান দাঁড়িয়ে বলেন, মাননীয় আদালত, আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। সে জন্য উনি থাকতে পারবেন না। তাই আমরা আগামীকাল আদালতের কার্যক্রম স্থগিত বা মুলতবি রাখার আবেদন করেছি। কারণ, ম্যাডাম আদালতের কার্যক্রমে উপস্থিত থাকতে চান।’

এ বিষয়ে বিচারক রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য জানতে চাইলে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘ম্যাডামের মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে ওনাদের আবেদন গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

কিন্তু আদালত বলেন, ‘কাল ম্যাডাম অনুপস্থিত থাকবেন। মামলার আগামী তারিখ পর্যন্ত তিনি জামিনে থাকবেন। কিন্তু অন্য আসামিদের শুনানি চলবে।’

আদালতের এই সিদ্ধান্তে আসামিপক্ষ কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়। বিচারক এজলাস থেকে নেমে যাওয়ার পর খালেদা জিয়া আইনজীবীদের ডেকে বলেন, কাল (আজ) তিনি আদালতে আসবেন। তিনি আইনজীবী আহসান উল্লাহ্‌কে শুনানি করার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন।

আজ সাড়ে ১০টায় আবার আদালত বসবে। আইনজীবী আহসান উল্লাহ্‌ প্রথমে শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে বক্তব্য শেষ করবেন। তারপর কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে উপস্থাপনা শুরু করবেন। প্রথম আলো।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ