শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

বিপুল সংখ্যক নারী কিভাবে মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃত্বে এলো?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মাদ শোয়াইব: ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মুসলিম ব্রাদারহুডের নারী সদস্যরা। বিশেষ করে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ব্রাদারহুডের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দসহ দলটির ৫০ হাজারেরও বেশি সদস্যকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

দলটির রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির অধীনে ২০১১ ও ১২ সালের স্বল্প সময়ের রাষ্ট্রপরিচালনার অভিজ্ঞতা ও সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা থেকে নারী কর্মীরা দলটির ভেতর ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন।

সীমিত ভূমিকা

প্রাথমিকভাবে নারীরা দলের জন্য সামাজিকভাবে সীমিত ভূমিকা পালন করেন। কোনো দরিদ্র পরিবারকে আশ্রয় প্রদান, তাদের খোঁজ-খবর নেয়া এ জাতীয় ছোট-খাট কাজগুলো করতেন তারা। এরপর তারা ক্রমান্বয়ে দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

১৯৮২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত হোসনি মুবারকের শাসনামলে নারীরা দলটির জেলে থাকা সদস্যদের জন্য রাজনৈতিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদানে জোরদার ভূমিকা রাখেন। রাষ্ট্র  যাদের ‘নিরাপত্তা হুমকি’ অজুহাতে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করেছিল।

প্রকৃতপক্ষে ২০০৫ ও ২০১১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দলটির প্রার্থীদের পক্ষে নারীরা মিডিয়ার মাধ্যমে, মসজিদে নারী মুসল্লিদের সঙ্গে মিলিত হয়ে, স্বাস্থ্যসেবামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে ছিলেন। কিন্তু ২০১১ সালের আগে দলটিতে নারীদের সক্রিয় অংশ গ্রহণ ছিল না। কারণ দলটির পুরুষ নেতাদের পক্ষ থেকে নারীদের রাজনৈতিকভাবে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল।

অন্যদিকে ২০১১ সালের জানুয়ারির আগ পর্যন্ত নারীদের দ্বারা পরিচালিত এই ভূমিকাকে সরকার বিবেচনায় নেয়নি। তাই সরকার তাদের ব্যাপক পরিসরে লক্ষ্যবস্তু বানায়নি। ফেব্রুয়ারি ২০১১ এবং জুন ২০১৩ এর মধ্যে নারীদের রাজনৈতিক অঙ্গনে জায়গা করে দেয়ার পর থেকে মুসলিম ব্রাদারহুডে নারীদের রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু হয়।

হুসনি মুবারকের শাসনামলে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে নারীর কারাদণ্ড এড়িয়ে চলার নীতি  গ্রহণ করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, আলেকজান্দ্রিয়াতে সক্রিয় নেতা জিহান হালাফাভি ২০০০ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলীয় প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিল। ফলে সরকার তার স্বামীকে গ্রেফতার করে। যিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন।

তার স্বামীকে গ্রেফতারের মাধ্যমে তাকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিয়েছিল এবং নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে নির্বাচন থেকে তার স্বামীর মুক্তির বিনিময়ে প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছিল। তারপরও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।

তবে ফেব্রুয়ারি ২০১১ এবং জুন ২০১৩ এর মধ্যবর্তী সময়ে রাজনৈতিকভাবে তাদের অংশগ্রহণের পর তাদের ওপর নিপীড়নের মাত্রা বাড়তে থাকে।

রাজনৈতিক অংশগ্রহণ

মুসলিম ব্রাদারহুডের নারী কর্মীরা অতীতের মতো বর্তমানেও মিশর জুড়ে ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির স্বেচ্ছাসেবায় নিঃশ্বার্থ কাজ যাচ্ছেন। মিডিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা, নারী মহলে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি করা ইত্যাদি কাজগুলোতে তারা বেশি মনোযোগী। এমনকি শীর্ষ নেতৃত্বের আসনে আরোহন করার জন্যও তারা ইতমধ্যে সিঁড়ি স্থাপন করে ফেলেছেন।

উদাহরণস্বরূপ, ২০১২ সালের জুন মাসের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা সংবিধান পরিষদে আমিমা কামেলকে নিযুক্ত করা হয় এবং তিনি প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ মুরসির সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এ ছাড়া দিনা জাকারিয়াও ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির একজন মুখপাত্র নিযুক্ত হন। ২০১২ সালে সর্বপ্রথম মুসলিম ব্রাদারহুড আঞ্চলিক মহিলা কমিটির সভাপতি হিসেবে নারীদের নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ দেয়।  এবং এই কমিটিটি নির্দেশনা অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করার অধিকার পায়, যা দলের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা।

তারপরও দলের নারীরা এখনও ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি বা মুসলিম ব্রাদারহুডের শীর্ষ পদে থাকার জন্য সক্ষমতা অর্জন করতে পারেননি। উদাহরণস্বরূপ, পার্টির সচিবালয়ের সদস্য সাবাহ আল-সাকারি, জাস্টিস পার্টির ২০১২ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি; কারণ তিনি প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বাক্ষর পাননি।

এখন ব্রাদাহুডের নারীরা বিক্ষোভের অংশ নেন। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে শাসকগোষ্ঠীর পরিচালিত সহিংসতা সম্পর্কে গণমাধ্যমে ও মানবাধিকার সংগঠন যেমন হিউম্যান রাইটস ওয়াচে কথা বলেন।

তবে অভ্যুত্থানের পর এবং দলটির বিরুদ্ধে আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার কর্তৃক রক্তাক্ত প্রচারাভিযানের পর অনেক নারী কর্মী ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টিতে তাদের সদস্য পদ ত্যাগ করেন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য প্রকাশ মাধ্যমে স্বাধীনভাবে কাজ করতে শুরু করেন।

রাবেয়া আল-আদাবিয়্যার সভাপতিত্বে নারী কর্মীরা ২০১৩ সালে অভ্যুত্থানের পর নারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়নের জের ধরে আন্দোলনের জন্য প্রথম একটি গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। নাম হলো ‘নিসা জিদ্দাল ইনকিলাব’। আজ এটি মিশর জুড়ে নারীদের সংগঠিত করতে সক্ষম হয়েছে এবং সেখানকার সবচেয়ে সক্রিয় সংগঠন হয়ে উঠেছে।

এ ক্ষেত্রে আসমা শুকুরের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা, তাদের সিসি সরকারের নারীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্গনের সঠিক প্রতিবেদন তুলে ধারার কাজটি করেন।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ডকুমেন্টেশন

সরকার মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃবৃন্দের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় আন্দোলন সরাসরি প্রত্যক্ষ করে ১৯ জুলাই ২০১৩ সালে। যখন সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়ার সময় মানসুরাতে তিন নারী কর্মীকে হত্যা করেছিল।

তারপর থেকে, মুসলিম নারীরা মিশরে এবং মিশরেরর বাইরে সংগঠিত হতে শুরু করেন। তারা নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ক্ষেত্রে ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে তথ্য সরবরাহ করতে শুরু করেন। এ ক্ষেত্রে তারা চুক্তিবদ্ধ হন ‘হিশাম মুবারক আইন কেন্দ্র’ এর সঙ্গে। যা তাদের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের প্রভাব বিস্তার এবং বিরোধী দলের ভূমিকা উন্নত করার জন্য সুযোগ করে দেয়।

অন্যদিকে মুসলিম ব্রাদারহুডের  নারীদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে কিছু মিশরীয় সংগঠন কর্তৃক শুধু অস্বীকারই করা হয়নি; বরং তাদের নেতিবাচক ভূমিকা এই পর্যন্ত ছিল যে, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর আক্রমণ করে তাদের হত্যাও করেছিল।

বস্তুত, নারী কর্মীরা তাদের নরম হাতে মানবাধিকার লঙ্গনের ঘটনাগুলোকে বহু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।  মুসলিম ব্রাদারহুড এবং তাদের সমর্থকদের বেশিরভাগের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে বিভিন্ন মিডিয়ায় সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে, রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি হয়।

এছাড়াও তারা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো আন্তর্জাতিক এনজিওদের সাথে তাদের প্রতিবেদনগুলো শেয়ার করে এবং ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তা প্রচার করেন। ব্রাদারহুডের নারীরা এসব কাজের জন্য সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করেন।

নুন পোস্ট থেকে অনুদিত

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ