আওয়ার ইসলাম : ভারতে ক্ষমতাসীন দলের সংশ্লিষ্টতায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর গত বছর জুড়ে যে নানা ধরনের আক্রমণ ঘটে তা বন্ধ করতে দেশটির সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সংগঠনটির নিজেদের বার্ষিক প্রতিবেদন ওয়াল্ড রিপোর্ট-২০১৮ প্রকাশ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সেখানে বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এসব ঘটনা বন্ধ করতে বলার পর গত ২০১৭ সাল জুড়ে গো মাংস রাখা, বিক্রি করা বা গরু নিধনের গুজব ছড়িয়ে মুসলমানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরে বার বার আক্রমণের ঘটনা ঘটে। আর এগুলো করেছে কক্টরপন্থী কিছু হিন্দু সংগঠন। বিজিপির প্রতিক্রিয়া এ ধরনের প্রতিবেদন নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলছে, বিগত বছর জুড়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং সরকারের সমালোচকদের ওপরে একের পর এক আক্রমণ হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই আক্রমণকারীরা ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির সমর্থক বলে নিজেরা দাবি করেছেন।
২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত গো মাংস নিয়ে গুজব ছড়িয়ে মুসলমানদের ওপরে আক্রমণের ৩০টি ঘটনার খোঁজ পেয়েছে হিউম্যান রাইটস। তাতে ১ বছরে ১০ জন নিহত হয়েছেন।
পশ্চিম বঙ্গ সরকারের মন্ত্রী জমীয়তে অলেমায় হিন্দের অন্যতম নেতা মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই প্রতিবেদন নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ভারত সরকার যে যে রাষ্ট্রে গো রক্ষায় অত্যাচার করেছে, বর্বরতা পথ ধরেছে এবং এই ভাবে দমন পীড়নে মুসলমান সমাজের ক্ষতি করতে পারবে না। সরকার তা করে ক্ষতি করছে ভারতের ও সংবিধানের।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সরাসরি মন্তব্য করেছে, সরকার এ ধরনের আক্রমণ বন্ধ করতে যেমন ব্যর্থ হয়েছে তেমনি হামলার ঘটনাগুলো যথাযথ তদন্তও হয়নি। এর ওপরে বিজিপির শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে হিন্দু আধিপত্য বিস্তার এবং উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রচার করেছেন তাও ঐ সব আক্রমণে ইন্ধন যুগিয়েছে বলে মনে করছে এই সংগঠনটি।
বিজিপির অন্যতম জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেন, এখানে একটা ষড়যন্ত্র চলছে। কোথাও মাইনরটি ওপর যদি আক্রমণ হয় সেটাকে বিরাট করে দেখা হচ্ছে। যদি লাখ লাখ মানুষ ঘর ছাড়া হতো বা মারা যেতো তাহলে একটা ব্যাপার ছিল। উল্টো মাইনরটি কে মেজরটির ওপর আক্রমণ করছে, মুসলিম আক্রমণে কতগুলো মন্দির ধ্বংস হয়েছে, তার রিপোর্ট বের করেনি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অবশ্যই এটাও বলছে, মুসলমান ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনার পরে অবশেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসব বন্ধ করার আহ্বান জানান।
কিন্তু তারপরেও বিজিপি যে হিন্দুত্ব পুনরুত্থানবাদী সংগঠনের কাছ থেকে দিশা নির্দেশ পেয়ে থাকে সেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সংঘ বা আরএসএস ঘোষণা করেছে তারা ৫ হাজার ধর্মীয় সৈনিক নিয়োগ করবে যাদের কাজ হবে গরু পাচার এবং কথিত লাভ জিহাদ প্রতিরোধ করা।
রাহুল সিনহা অবশ্যই মনে করেন, নরেন্দ্র মোদির ঘোষণাই প্রমাণ করে যে বিজিপি এসবের সঙ্গে জড়িত না।
তবে পশ্চিম বঙ্গ সরকারের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, সরকারের ব্যর্থতার কারণ হলো সরকার দায়বদ্ধ আরএসএসের কাছে। সরকারের উচিত সংবিধান বড় না সাম্প্রদায়ীক শক্তি, না বিজিপির নেতারা বড়, এই নিয়ে ভাবা।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ক্রমাগত আক্রমণ ছাড়াও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে খুবই গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করেছে কাশ্মীরে কর্মরত এক সেনা বেআইনিভাবে এক নাগরিককে যেভাবে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন সেই ঘটনাও। তাছাড়া সরকার যেভাবে তার সমালোচকদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতা এবং মানহানির মামলা দায়ের করছে সেসব বিষয়ও গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
মিয়ানমারে যে মানবিক সংকট চলছে সেসময় নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার গিয়েও রোহিঙ্গাদের আক্রমণের বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি সেটাও বলা হয়েছে প্রতিবেদেনে।