আবরার আবদুল্লাহ
বিশেষ প্রতিবেদক
আমেরিকার মূল ভূখণ্ডের বাইরে কিউবার ‘গুয়ানতানামো বে’ বন্দী শিবিরকে বলা হয় মার্কিনী ও মানব সভ্যতার জন্য লজ্জা। ২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পর তাড়াহুড়া করে গড়ে তোলা হয় এ কারাগারটি।
২০০২ সালে জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করা হয় কুখ্যাত কারাগারটি। ১১ জানুয়ারি ২০০২ সালে প্রথম বন্দী আসে এখানে। এরপর অমানবিক নিযাতনের জন্য পৃথিবীতে কুখ্যাতি অর্জন করে কারাগারটি।
এ কারাগারে বন্দীদের বিনা বিচারে আটক রাখা হয় এবং তথ্য আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে বন্দীদের ওপর যৌন অত্যাচার, 'ওয়াটার বোর্ডিং'-সহ বিবিধ আইনবহির্ভূত উপায়ে নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের প্রকার ও মাত্রা এতই বেশি যে এই কারাগারকে ‘মর্ত্যের নরক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।
বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ সত্ত্বেও এই কারাগারটিকে অব্যাহতভাবে নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করা হয় যদিও এখন সেখানে বন্দীর পরিমাণ মাত্র ৫০ জন।
পৃথিবীর নরকে বসে নজরকারা চিত্র অঙ্কন করেছেন মুসলিম বন্দীরা। সম্প্রতি আঁকা সাড়াজাগানো পাঁচটি ছবি প্রকাশ করেছে জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে।
গারদের হাতে ফুল (২০১৬)
ইয়েমেনের বাসিন্দা মহম্মদ আল-আনসি৷ ১৫ বছর আটক ছিলেন গুয়ানতানামো বে’তে৷ অভিযোগ, জেলে থাকার পর্বে তাঁর উপর যথেচ্ছ অত্যাচার হয়েছে৷ ভয়াবহ সেই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার জন্যই হাতে রঙ-তুলি তুলে নিয়েছিলেন তিনি৷
দৈনন্দিন জীবন থেকে মুক্তি খুঁজতে তিনি আঁকতেন ল্যান্ডস্কেপ আর ফুলের ছবি৷
গুয়ানতানামোয় ভার্টিগো
পাকিস্তানের কয়েদি আম্মার বালুচির আঁকা ছবি ‘ভার্টিগো অ্যাট গুয়ানতানামো’৷
১০ বছর গুয়ানতানামোয় বন্দী ছিলেন তিনি৷ তার আগে আরো তিন বছর আটক ছিলেন সিআইএ-র বিভিন্ন জেলে৷ কারাগারের যন্ত্রণা সরাসরি উঠে এসেছে তাঁর ছবিতে৷
স্থিরচিত্র
পাকিস্তানের আরেক কয়েদি আহমেদ রব্বানি৷ সিআইএ-র বেশ কয়েকটি জেলে কিছুদিন কাটানোর পর গুয়ানতানামোয় পাঠানো হয় তাঁকে৷ তার ছবি বলছে তিনি নির্মল মনের মানুষ।
টাইটানিক
রং ফুরিয়ে গেলে গুয়ানতানামোর বন্দিরা দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনসকেও ছবি আঁকার সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহার করেন৷
কফি পাউডার আর বালি দিয়ে ‘টাইটানিক’ এঁকেছেন খালিদ কাসিম৷ এখনও গুয়ানতানামো বে’তে বন্দি তিনি৷
শহরচিত্র
গুয়ানতানামোর বন্দিদের অনেকের ছবিতেই সমুদ্র একটি মুখ্য বিষয়৷ অনেকের ছবিতেই ধরা পড়েছে ঢেউ ভাঙার শব্দ৷
আবদুল মালিক আল রাহাবি গুয়ানতানামো থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২০১৬ সালে৷ ১৫ বছরের জেল জীবনে সমুদ্রের ধারে শহরের ছবি এঁকেছেন তিনি৷
সিরিয়ার শিশু
জলে ভেসে আসা সিরিয়ার শিশুর মৃতদেহ ২০১৫ সালে ভাইরাল হয়েছিল৷ গুয়ানতানামোর জেলেও সেই বি পৌঁছেছিল৷ কারণ ২০০৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বন্দিদের টেলিভিশন দেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন৷
ইয়েমেনের বন্দী মুহম্মদ আল-আনসি সেই ছবিটিই এঁকেছিলেন জেলে বসে৷ পরবর্তীকালে তাঁকে অবশ্য পাঠানো হয় ওমানের জেলে৷
প্রেসিডেন্ট গ্যালারি, নিউ ইয়র্ক
’ওডে টু দ্য সি: আর্ট অফ গুয়ানতানামো’ দেখানো হচ্ছে নিউ ইয়র্কের ‘প্রেসিডেন্ট গ্যালারি’-তে৷ ম্যানাহাটানের জন জে কলেজ অফ ক্রিমিনাল জাস্টিস একটি নাম করা প্রতিষ্ঠান৷ সেই কলেজেরই একটি গ্যালারি এটি৷ প্রদর্শনীটি নিয়ে অবশ্য অ্যামেরিকায় প্রুর বিতর্কও হয়েছে৷ ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জন্য খোলা থাকবে প্রদর্শনীটি৷