রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৫ কার্তিক ১৪৩১ ।। ৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


অধিক লাইক আপনাকে অহঙ্কারী বানাচ্ছে না তো?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রবিউল আকরাম: আমার স্টেটাসে আগে যখন লাইক সংখ্যা কম হত (১৫/২০টি) তখন কমেন্টে #মেনসন করার ক্ষেত্রে ‘ভাই’ ‘মুহতারাম’ ইত্যাদি বলে সম্বোধন করতাম। আর লাইক সংখ্যা যখন ২০০/৩০০ তে পৌঁছল, তখন কমেন্টে মেনসনের ক্ষেত্রে সেই ভাইদেরই ‘জনাব’ বলে সম্বোধন করতে শুরু করলাম। অথচ তাদের আগে ভাই বা মুহতারাম বলে সম্বোধন করতাম।

আর এখন আমার স্টেটাসে লাইক সংখ্যা ৫০০/৬০০ বা ১০০০ ছাড়িয়ে গেছে। কমেন্টে মেনসন করার ক্ষেত্রে সব সম্বোধন এখন আমি বাদ দিয়ে দিয়েছি। সরাসরি তাদের নাম লিখে দিচ্ছি; নামের আগে পরে কিছু লিখছি না।

মুসলমানের আচরণ তো ধীরে ধীরে আরো উন্নতির দিকে অগ্রসর হবে, তাহলে আমার আচরণে এ অধপতন কেন?

উপরোক্ত আলোচ্য বিষয়টি আমাদের কারো কারো মাঝে নাও থাকতে পারে, তবে থাকাটাই স্বাভাবিক।

অপরদিকে আল্লাহ ওয়ালাদের অবস্থা হচ্ছে- তারা অনেক বেশি নেক আমল করার পরও সর্বদা ভয়ে কাপতে থাকেন- না জানি ‘আমার আমল কবুল হচ্ছে কি না?’ এ ভয়ে সর্বদা তারা ভীত থাকেন।

অনুরূপভাবে আমারও তো উচিত ছিল, আমার স্টেটাসে লাইক সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভীত হওয়া, কম্পিত হওয়া- এই ভেবে যে ‘এটা কী এস্তেদরাজ (আল্লাহ্-তা'আলার পক্ষ হতে ঢিল দেয়া)?’ উল্টো আমি নিজেকে
বাহাদুর মনে করছি, যোগ্য মনে করছি, সুন্দর করে লেখার ভঙ্গিমাকে আমার নিজস্ব অর্জিত গুণ মনে করছি; আমি ভুলে গেছি, এটা নিছকই আল্লাহ-তা'আলার অনুগ্রহ, যেকোনো সময় তিনি তা ছিনিয়ে নিতে পারেন।

আফসোস শত আফসোস, আমাদের জীবনের উপর।

যাহোক, অহংকার হচ্ছে ‘উম্মুল আমরাজ’ সর্বব্যাধির শিকড়। এই ব্যাধি যখন কারো মাঝে বিস্তার লাভ করে তখন তার কলব ও রূহ অকেজো হয়ে পড়ে। তার রূহানিয়াত পারে না শয়তানিয়াতকে প্রতিরোধ করতে। অহংকার রূহ ও কলবের অন্যায়-প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়।

অহংকারী ভুলে যায় তার আত্মপরিচয়। সে মানুষের বন্ধু নয়, প্রভু হতে চায়। অহংকারী তখন মানুষ থাকে না, সে হয়ে যায় শয়তানেরও অধম।

অহংকারের চিকিৎসা হচ্ছে-
১। আলোচ্য প্রেক্ষাপটে একজন ফেসবুক সেলিব্রিটি চিন্তা করবে- আমার এ স্টেটাস কী আল্লাহ-তা'আলা কবুল করেছেন? সেটা তো জানি না, তাহলে আমার বাহাদুরির কী আছে? বরং দীনি বিষয়ে স্টেটাস দিয়ে নিয়ত যদি সহিহ না রেখে উল্টো লাইক কামানোর চিন্তায় থাকি তাহলে এ স্টেটাস এ লাইক তো আমাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে।

এ চিন্তা বেশি বেশি করা বিশেষ করে স্টেটাস লেখার সময় স্টেটাস আপডেট করার সময়।

২। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় আল্লাহ-তা'আলার নিয়ামতের কথা স্মরণ করা।

৩। অহংকারী জান্নাতে যাবে না- এ চিন্তা বেশি করে করা।

৪। অহংকারীকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে- এটা স্মরণ করা।

৫। যেকোনো কাজ অন্যকে দিয না করিযে নিজে করতে চেষ্টা করা।

৬। মাঝে মাঝে গরিব নিঃস্ব লোকদের সঙ্গে বসা, তাদের জীবন নিয়ে আলোচনা করা।

৭। সালামের অপেক্ষা না করে নিজেই সালাম দেয়া।

[অহংকারের চিকিত্সা বিস্তারিত জানতে ইমাম গাজালী রহঃ এর তবলীগে দীন
গ্রন্থটি পড়া যেতে পারে।]


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ