সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫ ।। ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১০ রমজান ১৪৪৬

শিরোনাম :
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী বিরতিকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম ফুটবলারদের ওমরা পালন ধর্ষণের বিচারে শরয়ি আইন থাকলে, কোন শিশু আর ধর্ষিত হতো না: উলামা-জনতা ঐক্য পরিষদ শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় ঈদে নতুন নোট বিতরণ স্থগিত ধর্ষণ এবং নারীর পরিচয় নিয়ে অবমাননায় ১৫১ আলেমের বিবৃতি ১০ম তারাবির নামাজে তিলাওয়াতের সারমর্ম ত্রাণ বন্ধের পর এবার গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করছে ইসরায়েল তারাবিতে ফাইভ জি স্পিডে তেলাওয়াত করবেন না: আজহারী ‘আলেমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তোলা জিহাদ নয়, সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ পদত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

নারীর পায়ের নূপুর বাজে জান্নাতে!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাহাবি হজরত উম্মে সুলাইম। ইসলামের শুরুর সময়ে কালেমা পড়ে মুসলমান হয়েছেন। তিনি একজন নারী সাহাবি। বিয়ে করেছেন মালেক ইবনে নজরকে। সংসার আলোকিত করেছে ছেলে আনাসের হাসিমাখা মুখ। উম্মে সুলাইমের মুখে কালিমা শোনে রেগেছেন স্বামী। ক্ষোভ-অভিমানের অন্ত নেই। শিশুর হাসিমাখা মুখ, প্রিয়তমার মায়াবি বদন সবই গৌণ হলো তার কাছে।

প্রিয়তমার কণ্ঠে কালিমার সুর তার মোটেও পছন্দ হয়নি। তাতে কি উম্মে সুলাইম পাহাড়ে মতো অনঢ়। তার কাছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’র মুধুর কালিমা ঘর সংসার স্বামী সবার চেয়েও আপন-মধুময়। অভিমানে তিনি চলে গেলেন। মালেক ইবনে নজর চলে গেলেন সিরিয়ায়। কালেমার ভালোবাসায় দিন কাটছে উম্মে সুলাইমের। বুকে আগলে রেখেছেন একমাত্র সন্তান আনাসকে। জীবন গাঙে ভালোবাসার ঢেউ। আবু তালহা নামের এক যুবক বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির।

- উম্মে সুলাইম! আপনাকে বিয়ে করতে চাই
- কালেম পড়েছেন? জানতে চান উম্মে সুলাইম।
- না
- তাহলে বিয়ে হবে কিভাবে?
- আপনি কি গাছ-মাছ আর পাথরের পূজা করেন?
- হ্যাঁ, উম্মে সুলাইম!
তবে আপনাকে আমার খুব পছন্দ! বললেন আবু তালহা!
-আমাকে পছন্দ করে লাভ নেই, আমার ধর্মকে ভালবাসলেই আমাকে পাবেন!
- সত্যি?
- হ্যাঁ
আবু তালহা ছুটে গেলেন নবীজির দরবারে। কালেমার মালা পড়লেন। ফিরে এলেন উম্মে সুলাইমের কাছে। বললেন, ‘ইল্লাল্লাহ’র মালা পরেছি! এবার তোমার প্রেমের মালা পরাও!

তরপর বিয়ে হলো। উম্মে সুলাইম ও আবু তালহার বিয়ে। মরু আরবে কালেমাই তাদের শারাবান তহুরা। নবীজির দরবারই তাদের জান্নাতের বিমুগ্ধ বালাখানা। সকাল আসে, সন্ধ্যা নেমে দিন কেটে যায় দুই সাহাবির। ঘর আলোকিত করেন, ফুটফুটে উমাইর। একজন সন্তান। মা-বাবার আদুরে সন্তান। ওমায়েরর ছিল একটি পাখি। পাখি নিয়ে খেলতেন ওমায়ের। নবীজি হাসি-রস করে বলতেন, ওগো ওমায়ের তোমার নুগায়েরের খবর কি? পাখিটিকে নবীজি ওমায়েরের ছন্দে নুগায়ের বলে ডাকতেন!

বাবা আবু তালহা রা. ওমায়েরকে খুব ভালোবাসতেন। একদিন ছেলেটি অসুস্থ হয়ে যায়। চিন্তিত হয়ে যান আবু তালহা রা.। অস্থির হয়ে ওঠেন। বরাবরের মতো আবু তালহা নবীজির দরবারে চলে যান। বিকেল গড়িয়ে রাত হলো। অসুস্থ ছেলে মারা গেল। উম্মে সুলাইম রা. ছেলেকে গোসল শেষে কাফন ও সুগন্ধি মেখে দিলেন। রেখে দিলেন ঘরের কোণে।

বড় ছেলে আনাস রা. কে পাঠালেন হজরত আবু তালহাকে ডাকার জন্য। বললেন তোমার বাবাকে পুত্রের মরার খবর জানাবে না। আবু তালহা রা. সে দিন রোজা। উম্মে সুলাইম রা. রাতের খাবার তৈরি করলেন। খেতে দিলেন।

- ছেলের শরীরের কি খবর? জানতে চান তালহা।
- আগের চেয়ে শান্ত! বললেন উম্মে সুলাইম।

ক্লান্ত স্বামীকে ছেলের মৃত্যু সংবাদ এখনই জানালেন না। ঘরের লোকদেরও নিষেধ করলেন। নিশ্চিন্ত মনে রাতের খাবার খেলেন। ঘুমিয়ে পড়লেন। ভোরে গোসলও করলেন।

সকালে উম্মে সুলাইম বললেন, ওগো তালহা! কেউ যদি আমানত গচ্ছিত রাখে; পরে ফেরত নিয়ে যায়, কারও কী অধিকার আছে তা আটকে রাখার? আবু তালহা রা. বললেন, না তার এ অধিকার নেই।

হজরত উম্মে সুলাইম এবার শান্ত কণ্ঠে বললেন, আপনার সন্তানের ব্যাপারে সবর করুন। আল্লাহ তায়ালা তাকে ফিরিয়ে নিয়েছেন।

রেগে গেলেন আবু তালহা রা.! হাজির হলেন নবীজির দরবারে! অভিযোগ করলেন বিবির বিষয়ে। নবীজি সব শুনে বিমুগ্ধ! উম্মে সুলাইমের ধৈর্য, প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা, সহিষ্ণুতা ও নেক গুণাবলির প্রশংসা করলেন নবীজি। বললেন, আল্লাহ তোমাদের রাতে বরকত দান করুন।

মহিয়ষী নারী উম্মে সুলাইমের প্রশংসায় নবীজি বলতেন, স্বপ্নে আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম। হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনতে পেলাম। নুপুরের ধ্বনির মতো। আমি ফেরেশতাদের জানতে চাইলাম, তিনি কে? তারা বললেন, তিনি হলেন রুমাইছা বিনতে মিলহান; আনাস ইবনে মালিকের আম্মা। আবু তলহার বিবি উম্মে সুলাইম।

তথ্যসূত্র : বুখারি শরিফ, হাদিস : ১৩০১, মুসলিম শরিফ, হাদিস : ২৪৫৬, মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৫০০২

লেখক : হুমায়ুন আইয়ুব, সম্পাদক আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ