আওয়ার ইসলাম: স্বামী-সন্তান শিক্ষিত এমনকি নাতি-নাতনিরাও করছে লেখাপড়া। কিন্তু আনজিরা বেগম জানে না কিছুই। নাম স্বাক্ষর, সংখ্যা গণনা, বাংলায় কোরআন শরীফ পড়া কিছুই সে পারে না।
আর এই কষ্ট থেকেই ৬৫ বছর বয়সে আনজিরা বেগম নামের এক বৃদ্ধা ভর্তি হয়েছেন স্কুলে। শুধু ভর্তিই নয় কিন্ডারগার্টেনের প্লেতে শিশুদের সঙ্গে নিয়মিত একবছর ক্লাস করে বার্ষিক পরীক্ষার পর অংশ নিচ্ছেন বৃত্তি পরীক্ষায়।
শিক্ষার যে আসলেই কোনো বয়স নেই আনজিরা বেগম সেটি প্রমাণ করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে এলাকায়। কোনো পিছুটান নয় বৃদ্ধা আনজিরার অদম্য সাহসিকতায় বাহবা দিচ্ছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। স্কুলের বাইরে অভিভাবকদের ভিড়।
অপেক্ষা করছে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী তাদের শিশু সন্তানদের পরীক্ষার পরে বাড়ি নিয়ে যাবেন। আর স্কুলের ভেতরে একেকটি কক্ষ খুদে পরীক্ষার্থীতে ঠাসা। মনোযোগ দিয়ে লিখছে সবাই। তবে একটি কক্ষে খুদে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এমন একজন বসে পরীক্ষা দিচ্ছেন যা দেখলে নিজের চোখকে বিশ্বাস করা যাবে না।
মনোযোগ সহকারে খাতায় উত্তর লিখছেন পাকা চুলের এক নারী, চোখে ভারী চশমা। পরীক্ষায় তাকে সফল হতেই হবে, যেতে হবে বহুদূর। চলতে হবে যুগের সঙ্গে।
ঝিনাইদহ সোনাদাহ গ্রামের ১২ নম্বর দোগাছি ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা মোকাদ্দেছ হোসেনের স্ত্রী আনজিরা বেগম ৬৫ বছর বয়সে শিশুদের সঙ্গে খাতা, কলম, পেন্সিল আর বক্স নিয়ে বসেছেন পরীক্ষা দিতে।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন এর প্লে শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি।
বাড়ি থেকে ২ কিলোমিটার দূরে রোজভেলী নামের একটি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। সেখানেই গতবছর প্লেতে ভর্তি হন তিনি।
৪ সন্তানের জননী ৬৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থী আনজিরা বেগমের পরীক্ষা কেন্দ্র ১১ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইদহ শহরের ঐতিহ্যবাহী কাঞ্চননগর মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে।
এদিকে সবাইকে চমকে দিয়ে আনজিরা বেগম খুদে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খুব সহজেই মানিয়ে নিয়েছেন। সহপাঠীরা কেউ নানি, কেউ দাদি বলে ডাকে তাকে।
আনজিরা বেগমের স্বামী মোকাদ্দেস হোসেন জানান, তার ৩ ছেলে-মেয়ে, তারা সবাই শিক্ষিত। আনজিরার লেখাপড়ার আগ্রহ দেখে সবাই তাকে সাপোর্ট দিচ্ছে।
এইচজে