শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

‘জমিয়ত ভাঙ্গার জন্য আমি দায়ি নই, পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: গত সপ্তাহেই ভেঙ্গে গেলো দেশের প্রাচীনতম ইসলামি রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। দলের নির্বাহী সভাপতি মুফতী মোহাম্মদ ওয়াক্কাস এবং মহাসচিব আল্লামা নুর হোসাইন কাসেমীর পারস্পরিক বিরোধ ও নেতৃত্বে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয় দলটি।

জমিয়তের এ দফা ভাঙ্গনের পেছনে যে কারণগুলো বার বার উঠে আসছে তার অন্যতম দলে বহিরাগতদের পদায়ন ও অতি মূল্যায়ন।

জমিয়তের ভাঙ্গার পর নবাগতদের মধ্যে যে নামটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত তাহলো বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে আসা মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী। সমালোচকরা তাকে দায়ী করে বলছেন, তিনি ইতোপূর্বে খেলাফত আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ভাঙ্গার পেছনের সক্রীয় ভূমিকার রাখেন। আর তার ইন্ধনে এবার ভাঙ্গনের মুখে পড়লো জমিয়ত।

তীর্যক এসব অভিযোগের উত্তর ও ব্যাখ্যা জানতে জমিয়তের বর্তমান সহসভাপতি ও প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাওলানা আবদুর রব ইউসুফীর মুখোমুখি হন আওয়ার ইসলামের বার্তা সম্পাদক আতাউর রহমান খসরু। দু’জনের আলাপচারিতায় উঠে আসে রাজনীতির অনেক তিক্ত ইতিহাস।

আওয়ার ইসলাম : জমিয়েতের আজকের অস্থিরতার পেছনে নবাগতদের দায়ী করা হচ্ছে। আপনি বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী :  নবাগত শব্দটা আমার সঙ্গে ঠিক যায় না। আমি ছাত্রজীবন থেকে জমিয়ত করতাম। বাংলাদেশ হওয়ার পর শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. যখন জমিয়ত সভাপতি তখন আমিও এ দলে ছিলাম। তখন দলের সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বপালন করি।

দলীয় সিদ্ধান্তে হজরত শায়খুল হাদিসের নেতৃত্বে আমরা খেলাফত আন্দোলনে যাই। এরপর জমিয়তের কিছু লোক খেলাফত আন্দোলন থেকে ফিরে এসে আবার জমিয়তের নামে কাজ শুরু করেছেন। আমরা তখন আসি নি। পরে এসেছি।

এখন যারা জমিয়ত করছেন তাদের অধিকাংশ খেলাফত আন্দোলনে গেছেন এবং ফিরে এসেছেন। কেউ আগে এসেছেন এবং কেউ পরে এসেছেন।

একটি দলে যদি নবাগতদের সুযোগ না থাকে তবে তার পরিধি ও কাজ বাড়বে না। কোনো পরিবার কি চায় তার পরিবার ছোটই থেকে যাক। সেখানে নবজাতক সন্তান না আসুক।

আওয়ার ইসলাম : কিন্তু আপনাদের পদায়ন ও অতি মূল্যায়ন দলে অসন্তোষ তৈরি করেছে?

মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী : আমি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির ছিলাম। জমিয়তে আমাকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে। সাংগঠনিক হিসেবে আমার অবনতি হয়েছে। আমি তো কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করি নি।

আর আমি মনে করি না আমার পদায়ন অসঙ্গতিপূর্ণ হয়েছে। তারপরও দল যদি অসঙ্গতিপূর্ণ মনে করে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না।

জমিয়তে আসার পূর্বে আমি কোনো দেন-দরবার করে আসি নি। দলের কোনো নেতার সাথে আমার পূর্ব যোগাযোগ ছিলো না। শুধু যোগদানের দিন আমি দেখা করেছি। এরপর কাউন্সিলও আমাকে সহ-সভাপতি করেছে। সুতরাং দায়টা আমার না দায়টা দলের। দল আমাকে অযোগ্য মনে করলে সরিয়ে দিবে।

আওয়ার ইসলাম : বলা হচ্ছে, মুফতী মোহাম্মদ ওয়াক্কাস ও তার অনুসারীদের কোণঠাসা করতে আপনাদের দলে ভেরানো হয়েছে এবং সেটা আপনার মাধ্যমেই হয়েছে। কারণ, নবাগতদের মধ্যে সাংগঠনিকভাবে আপনি সবচেয়ে অভিজ্ঞা ও দক্ষ।

মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী :  আমি যদি দক্ষ ও অভিজ্ঞ হই, তাহলে আমাকে মূল্যায়নই তো করা উচিৎ। জমিয়ত আমাকে সে মূল্যায়নও করেছে। যদি তারা মনে করে, আমার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা আছে তাহলে আমাদের থেকে সে পরিমাণ সেবা নেয়া তাদের উচিৎ। জমিয়ত আমার থেকে সে সেবা নিচ্ছে।

আওয়ার ইসলাম : কিন্তু আপনার অভিজ্ঞতা একটি গ্রুপকে কোণঠাসা করতে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে?

মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী :  একটি দলে বহু লোক থাকে। কিছু লোক কিছু কথা বলতেই পারে। সে অধিকার তাদের আছে। তারা বলতেই পারে। তাদের ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নেই।

কিন্তু তারা যে মনে করছে, আমার কারণে তারা ভালো নেই সেটা অবান্তর। তাদের উচিৎ হীনমন্যতায় না ভুগে দলের সঙ্গে থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে অংশগ্রহণ করা। দলটাকে সবাই মিলে এগিয়ে নিয়ে যাই।

আমি চাই, দলে আরও দক্ষ লোক আসুক, সেজন্য যদি আমার পদের অবনতি হয় কোনো দুঃখ থাকবে না।

আওয়ার ইসলাম : আপনার ব্যাপারে একটি অভিযোগ রয়েছে, আপনি আপনার পূর্ববর্তী খেলাফত আন্দোলন ভাঙ্গার পেছনে কলকাঠি নাড়িয়েছেন এবং আপনাকে কেন্দ্র করেই খেলাফত মজলিস ভেঙ্গেছে।

মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী : এটা ইতিহাস বিকৃতি।  খেলাফত আন্দোলন ছেড়ে যখন চলে আসি তখন আমি সে দলের কোনো নেতা ছিলাম না। শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের নেতৃত্বে আমরা চলে আসি। সেটা যদি কোনো অপরাধ হয়ে থাকে, তবে তা শায়খুল হাদিসের উপর বর্তায়। তারা বুঝে না শেষ পর্যন্ত কাকে অপরাধী করছে।

আমি মনে করি, তার এ মন্তব্য করা ঠিক হয় নি। তার সংযত হওয়া উচিৎ। তখন খেলাফত আন্দোলনের নেতা ছিলেন শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক এবং মাওলানা আবদুল গফফার রহ.। কাজেই এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

আওয়ার ইসলাম : খেলাফত মজলিস ভাঙ্গার পেছনে আপনার মহাসচিব থাকা, না থাকার প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছিলো।

মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী : কোনো এক ব্যক্তির সিদ্ধান্তে দল পরিচালিত হয় না। দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে দল পরিচালিত হয়। দলের সাফল্য যেমন একক কৃতিত্ব নয়, তেমন দলের ব্যর্থতাও কোনো এক ব্যক্তির উপর বর্তায় না। এতে যদি কোনো ভালো হয় আমি তার মালিক নই, শেয়ারহোল্ডার। ক্ষতি হলে আমি তার অংশিদার।

আওয়ার ইসলাম : শায়খুল হাদিস রহ. এর একজন কর্মী হয়ে আপনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে আপনি একাধিকবার দল পরিবর্তন করেছেন। আপনার কি দায়িত্ব ছিলো না তার মৃত্যুর পর তার দলের হাল ধরে রাখা?

মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী :  ইসলামি রাজনীতিতে চলে আসার একটি সংস্কৃতি আছে। তাই চলে এসেছি। জমিয়ত থেকে খেলাফত আন্দোলনে যাওয়া এবং আবার জমিয়তে ফিরে আসাকে কেউ ভুল মনে করেন নি। সময়ের প্রয়োজনে তারা সেটা করেছেন। শায়খুল হাদিস রহ.ও সময়ের প্রয়োজনে দল পরিবর্তন করেছেন।

সুতরাং আমার আসাটা অন্যায় হবে কেনো?

আওয়ার ইসলাম : অন্যায় নয় আমি ঋণ শোধের কথা বলছি।

মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী : শায়খুল হাদিস রহ. হজরত হাফেজ্জি হুজুর রহ. এর জীবদ্দশায় খেলাফত মজলিস করেছেন। কিন্তু সম্পর্কে ভাটা পড়ে নি। শ্রদ্ধাবোধ সমান ছিলো। শ্রদ্ধাবোধ থাকা এক কথা দলে কাজ করা ভিন্ন কথা।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে আমার সম্পর্কের অবনতি হয় নি।

আওয়ার ইসলাম : জমিয়তে যোগদানের অনুষ্ঠানে আপনি বলেছিলেন, ‘শায়খুল হাদিসের মৃত্যুর পর খেলাফত মজলিস মরা লাশে পরিণত হয়েছে। আমি লাশ কেনো পাহারা দেবো?’-এটা কি ধরনের শ্রদ্ধাবোধ?

মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী :  এটা দিয়ে আপনি কী বলতে চান?

আওয়ার ইসলাম : বলতে চাই, আপনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে, সে দলের প্রতি এমন অবজ্ঞা প্রদর্শন কতোটা শোভনীয়?

মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী :  একজন মানুষ যখন কোনো দল ছাড়ে নিশ্চয় তার পেছনে কিছু কারণ থাকে।

আওয়ার ইসলাম : সে কারণগুলো কী, আমরা জানতে চাচ্ছি?

মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী :  কিছু কারণ আছে যা বললে সুন্দর শোনায় এবং কিছু কারণ আছে যা বললে অসুন্দর শোনায়। অসুন্দর বিষয়গুলো না বলাই ভালো।

আওয়ার ইসলাম : কারণগুলো আপনি বলতে চাচ্ছেন না?

মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী : না আমি বলতে চাচ্ছি না।

আওয়ার ইসলাম : আপনার সে মন্তব্যে বহুমানুষ ব্যথিত হয়েছে।

মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী : এ হতেই পারে। এ অধিকার আছে। আমার মন্তব্য কারো পছন্দ হবে আবার কারো অপছন্দ হবে এটাই স্বাভাবিক। আমার সবকিছু সবাই পছন্দ করবে সে দাবি আমি করতে পারি না।

আওয়ার ইসলাম : জমিয়ত ভাঙ্গার পেছনে আপনার নামটি বার বার আসছে। এ ভাঙ্গন রোধ করতে আপনার কোনো উদ্যোগ আছে কি?

মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী :  যেহেতু আমাকে একটি পক্ষ দোষী সাব্যস্ত করেছে, তাই আমার উদ্যোগ তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এটা বরং বিকৃতভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা হতে পারে।

যারা ব্যথিত হয়ে দলত্যাগ করছেন তারা যদি মনে করেন আমার উদ্যোগে কাজ হবে আমি  উদ্যোগ নেবো। আমি সহযোগিতা করতে রাজি আছি।

এবার বলছি আমি চেষ্টা করেছি দলের সংহতি রক্ষা করতে। উভয় দলের কর্তাব্যক্তিরা জানেন আমার প্রচেষ্টা আছে কিনা। কিন্তু কর্মীরা এটা জানে না এবং তাদের জানার কথা নয়।

আওয়ার ইসলাম : দলের স্বার্থে যদি আপনার পদত্যাগের প্রশ্ন আসে কী করবেন?

মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী : কাউন্সিল আমাকে দলের সহ-সভাপতি করেছে। কাউন্সিলে তারাও ছিলেন যারা এখন বিরোধিতা করছেন। আর দল ভাঙ্গার পেছনে আমিই যদি দায়ী হতাম তাহলে তথাকথিত বহিষ্কারের ভেতর আমি একা পড়তাম। দলের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী ও সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুল্লাহ ফারুককে বহিষ্কার করা হতো না।

সুতরাং আমার পদচ্যূতি বা পদত্যাগের প্রশ্ন অবান্তর।

আওয়ার ইসলাম : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী : আওয়ার ইসলামকেও ধন্যবাদ।

জমিয়ত হিন্দের এক ঐতিহাসিক বিজয়, যে কথা জানে না বাঙালি

মজলিস থেকে জমিয়ত : হৃদয় ভাঙার দায় কার?


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ