শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি

মজলিস থেকে জমিয়ত : হৃদয় ভাঙার দায় কার?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা এহসানুল হক
সহযোগী সম্পাদক, মাসিক রাহমানী পয়গাম

আজ থেকে এক যুগ আগে ভেঙেছিল শাইখুল হাদীসের খেলাফত মজলিস। সেই ক্ষত এখনো শুকায়নি। যারা দলকে মনে প্রাণে ভালোবাসে, তারা যে প্রান্তেই থাকুক, যে অংশেই থাকুক ভেতরটা তাদের এখনো কাঁদে, এখনো হাহাকার করে।

তৃণমূল থেকে বার বার আওয়াজ উঠে ঐক্যের। ভাই ভাই হয়ে কাঁধে হাত রাখার দাবি উঠলেও নদীর মৃদমন্দ তরঙ্গের মত দাবিগুলো ঢেউ তোলার আগেই মিলিয়ে যায়। বিভেদের দেয়ালের নিচে চাপা পরে যায় ঐক্যবদ্ধ মজলিসের স্বপ্ন ও ভালোবাসা।

মজলিসের পর এবার ভেঙে গেল জমিয়ত। রাজপথের উলামায়ে কেরামের সবচেয়ে বড় জামাতটিও এবার ভেঙে গেল। চর্তুদিকে ভাঙনের আওয়াজ। ভালো কোন কিছুই আমরা ধরে রাখতে পারি না। ইসলামী ঐক্যজোট, হেফাজত, মজলিস কিছুই আমরা ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারি নি। জাতি হিসেবে এটা আমাদের অনেক বড় দুর্ভাগ্য। অনেক বড় ব্যর্থতা।

ইসলামি রাজনীতিতে হজরত শাইখুল হাদীস রহ. ও মুফতি আমিনী রহ. এর নেতৃত্ব অবসানের পর তাদের শূন্যস্থান পূরণে সবে মাত্র এগিয়ে আসছিল জমিয়ত। শুরুতেই তারা হোচট খেলো। ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের জন্য এটা অনেক বড় দুঃসংবাদ।

আজকে জমিয়ত কেন ভাঙলো? এই প্রশ্নের উত্তরে কে কি বলবেন জানি না, তবে আমার কাছে এই প্রশ্নের উত্তর খুবই পরিষ্কার। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি এই ভাঙনের একমাত্র কারণ অন্যদের দল থেকে দলছুট নেতাদের এনে দলে পদায়ন করা।সমস্যা এখান থেকেই শুরু হয়েছে। জমিয়তের মূল নেতৃত্ব দলের কল্যাণ চিন্তা করে কাজটি করলেও এটাই ছিল তাদের বড় ভুল। এ কারণেই আজকে জমিয়ত ভেঙে গেল।

যেদিন তারা দলে যোগ দিয়েছিল সেদিনই জমিয়তে ভাঙনের বীজ বনন করা হয়েছে। মহাসচিব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বিভক্তির সূচনা হয়েছে, আজ ওয়াক্কাস সাহেবের নির্বাহী সদস্যপদ স্থগিত করার মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করলো।

হেফাজতে ইসলাম ছিল ইসলামের পক্ষে বৃহৎ আন্দোলনের জন্যে একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম। মহানগর হেফাজতে জমিয়ত, মজলিস, খেলাফত, ঐক্যজোট, নেজামে ইসলাম সবাই ছিল। এক টেবিলে বসার কারণে ভিন্ন দল ও পথের লোকজন কাছাকাছি আসার সুযোগ হয়েছে।

এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দলভারি করাটা শুধু রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূতই হয়নি, নিজ দলের জন্য এটা কত ভয়ংকর ক্ষতির কারণ ছিল, আজ তারা হারে হারে টের পাচ্ছে। আজকে সেই ভুলের মাসুল দিতে হচ্ছে কড়ায় গণ্ডায়।

হেফাজতের মত এমন ঐক্যবদ্ধ ব্যানার কিন্তু আগেও হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে ইসলামি ঐক্যজোটের ব্যানারে সবদল সমবেত হয়েছিল। তখন যার হাতে জোটের নেতৃত্ব ছিল তিনি চাইলে অনেককেই কাছে টেনে নিজের দলভারি করতে পারতেন, তিনি তা করেননি। কিন্তু হেফাজত মহানগরের নেতৃত্ব যাদের হাতে ছিল তারা এই কাজটি করেছেন। এটাও তাদের একটা ভুল।

মজলিস ও ঐক্যজোট থেকে যেদিন তারা জমিয়তে যোগ দিলেন। সেদিন প্রেসক্লাবের সেই অনুষ্ঠানে আমিও ছিলাম। দলত্যাগ করে পুরোনো দল সম্পর্কে তারা কি বলেন, সেটা জানার আগ্রহ ছিল। সেদিনের সেই অনুষ্ঠানে তারা কি বলেছিলেন, অনেকে সেটা ভুলে গেলেও সঙ্গতকারণেই আমার পক্ষে ভোলা সম্ভব হয়নি।

মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজিজ আগের সংগঠনের ব্যাপারে কোন কথাই বলেননি। সাধারণ বক্তব্য রেখেছেন।

মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব সাহেব আগের সংগঠনের ব্যাপারে কথা বলেছেন, অত্যন্ত ভদ্র ভাষায়, সবোর্চ্চ শ্রদ্ধা রেখে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় কোন মুরুব্বির অধীনে থাকতে পছন্দ করি, আগে আমিনী সাহেবের অধীনে ছিলাম। এখন তিনি নেই, এই সংগঠনে মুরুব্বি উলামায়ে কেরাম অনেকেই আছেন তাই তাদের অধীনে কাজ করতে এসেছি। আমি আমার আগের সংগঠনের কল্যাণ কামনা করি। তারা সামনে এগিয়ে যাক এই প্রত্যাশা করি।’

আর মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফি সাহেব যা বললেন তাতে শুধু অবাকই হইনি এমন মানুষ খেলাফত মজলিসে পচিশ বছর থেকেছে সেজন্য কষ্ট হয়েছে।

তিনি সেদিন বলেছিলেন, শাইখুল হাদীস রহ. এর ইন্তেকালের পর ঐ সংগঠন একটা মরা লাশে পরিণত হয়েছে, এই লাশ টানার দায়িত্ব আমি কেন নিবো । পাইপ লাগায় দেয়া হয়েছে, এখন লোক আসতেই থাকবে। অর্থাৎ শাইখুল হাদীসের খেলাফত মজলিস একটা মরা লাশ, এই লাশ আর তিনি টানতে পারবেন না। তিনি এখন মজলিস থেকে জমিয়তে আসার জন্য পাইপ লাগিয়ে দিয়েছেন, সেই পাইকে করে মজলিস থেকে দলে দলে লোকজন জমিয়তে যোগ দিতে থাকবে, এই ছিল তার বক্তব্য। এমন জঘন্য বক্তব্য শুনেও সেদিন জমিয়ত তাকে বাহবা দিতে কুণ্ঠাবোধ করে নি।

নব্বই থেকে দুই হাজার পনের। পচিশ বছর তিনি যেই সংগঠনটা করলেন সেই সংগঠনের প্রতি এমন বিদ্বেষ? দলের প্রতি অভিযোগ থাকতে পারে, হাজারটা অভিযোগ থাকতে পারে, আমি সেটা অস্বীকার করছি না, তবে অভিযোগ থাকলে সেটা আছে দলের কিছু ব্যক্তির উপর। ব্যক্তি আর দল এক জিনিস নয়।

তিনি পচিশ বছর যে সংগঠন করলেন সেই সংগঠনের প্রতি কি তার নূন্যতম শ্রদ্ধা থাকা উচিৎ ছিল না? এমন বক্তব্য যিনি রাখতে পারেন তার উপর সেদিন জমিয়ত কিভাবে আস্থা রেখেছিলেন? এই প্রশ্ন আমার উভয় পক্ষের নেতাদের কাছেই থাকবে?

পদের উপর আঘাত হানার আগ পযর্ন্ত আপনারা কেউ তাদের বিপক্ষে শক্তভাবে আওয়াজ তুলেননি, যদি তুলতেন তাহলে আজকে এই পরিণতি হতো না। সেদিন তাদের উচ্ছ্বাস, আনন্দ দেখে আমার করুণাই হচ্ছিল। মনে মনে ভাবছিলাম, কাদের নিয়ে এর এত আনন্দিত, টের তো পাচ্ছেন না। সময় গেলেই বুঝবেন।

ঠিকই বুঝতে সময় লাগেনি। তারা যোগদানের ছয় মাসের মাথায় দলে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। পচিশ বছরের মহাসচিবকে হটিয়ে দেয়া হয়েছে। মুফতি ওয়াক্কাস জমিয়তের পোড়খাওয়া নেতা। যুগ যুগ ধরে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আজকে যারা দলের সব কিছু এক সময় তারা কিছুই ছিলেন না, সব ছিলেন মুফতি ওয়াক্কাস। তাকেই হটিয়ে দেয়া হয়েছে।তার উপরও হাজারটা অভিযোগ থাকতে পারে। অভিযোগগুলো নিশ্চয় অনেক আগ থেকেই ছিল। আরও অনেকবার তাকে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সম্ভব হয়নি। এরা দলে যোগ দেয়ার পরেই সম্ভব হয়েছে। এখানেই তার কারিশমা।

আমি বলবো না তিনিই মজলিস ভাঙার কারিগর। আরও অনেকে মিলেই ভাঙার কাজটা সমাধা করেছেন। তবে এটা সত্য যে, তাকে মহাসচিব রাখা আর না রাখাকে কেন্দ্র করেই কিন্তু মজলিস ভেঙেছে। এটা সবার জানা কথা।

এদের দলে নিয়ে জমিয়তের কি লাভ হয়েছিল? মাদরাসা থেকে অফিস পল্টনে নিয়ে আসা, দলে সিস্টেম তৈরি করা, প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম করা এসব চমক সৃষ্টিকারী কাজের মোহে পরে সম্ভবনাময় দলটি ধ্বংস করে দেয়া হলো। এর দায় কার? অবশ্যই জমিয়তের মূল ধারার নেতৃত্বই এর জন্য দায়ী।

আজকে যদি সাবেক এমপি মুফতি ওয়াক্কাসকে সভাপতি ও সাবেক এমপি শাহীনূর পাশাকে মহাসচিব করে নতুন জমিয়ত গঠন করা হয়, তাহলে পরিণতি কি হবে কল্পনা করা যায়?

কি হবে সেটাও বলে দেই। ছয় মাসেই উভয় পক্ষ মাতিয়ে তুলবে সারা দেশ। পাল্টাপাল্টি কমিটি হবে, প্রোগ্রাম হবে। প্রতিটি প্রোগ্রামে প্রথম প্রথম প্রচুর লোক সমাগম হবে। মনে হবে বিপ্লব আসন্ন, শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। এভাবে বছর খানেক যাবে।

ক্যালেন্ডারে বছর ঘুরতেই ক্লান্ত হয়ে যাবে সবাই। ধীরে ধীরে কমে যাবে দলভাঙার উত্তাপ। বিভেদ শুরু হবে নতুন ঘরে। নেমে আসবে নিরবতা। বাকি থাকবে শুধু হাহাকার। আরও দুচার বছরপর তৃণমূল থেকে মিনমিন করে আওয়াজ উঠবে ঐক্যের। কিন্তু তা আর কারো কর্ণ স্পর্ষ করবে না। সেই দাবি দেখবে না কোন দিন আলোর মূখ।

এবার মাওলানা কাসেমী, ওবায়দুল্লাহ ফারুক ও ইউসুফীকে জমিয়ত থেকে অব্যাহতি দিয়ে পাল্টা বিবৃতি

জমিয়ত থেকে মুফতী ওয়াক্কাসের নির্বাহী সদস্যপদ স্থগিত


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ