শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

পোপের সফর : রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের কোনো সম্ভাবনা আছে কি?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব মুহাম্মাদ
আওয়ার ইসলাম

গতকাল সোমবার মিয়ানমার সফর শুরু করছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। বরাবর শরণার্থীদের পক্ষে সোচ্চার পোপ ফ্রান্সিসের জন্য এ সফর একটি বড় পরীক্ষা।অনেকেই আশা করছেন এই সফরে সব সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তির বাণী ছড়িয়ে ঐক্যের ডাক দেবেন পোপ ফ্রান্সিস৷

পোপ তাঁর বক্তব্যে রোহিঙ্গাদের ‘রোহিঙ্গা’, ‘বাঙালি মুসলমান’ নাকি ‘অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী’ বলে সম্বোধন করেন, সেটার দিকেও তাকিয়ে আছেন অনেকে৷  মিয়ানমারের আর্চবিশপ পোপকে এই ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিলেন রোম সফরের সময়৷

‘রোহিঙ্গা’ শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রেই মিয়ানমারের আপত্তি আছে এবং মিয়ানমারের কার্ডিনাল চার্লস মং বো শব্দটি ব্যবহার না করতে পোপকে পরামর্শ দিয়েছেন।

রোহিঙ্গারা নিজেরাও পোপ ফ্রান্সিসের মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফরে ‘আশার আলো’ খুঁজছে রাখাইনে জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের পোপের সাক্ষাতের বিষয়টি এখনও নিশ্চিত না হলেও বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা আশা করছেন, পোপ তাদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হবেন। তাদের নাগরিকত্ব ফিরে পেতে সহায়তা করবেন ও শান্তি ফিরিয়ে আনবেন।

৩৫ বছরের  রোহিঙ্গা নারী হামিদা বেগম বিশ্বাস করেন, পোপ তাদের সহায়তা করার জন্যই মিয়ানমার সফর করছেন। তিন মাস আগে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন তিনি। হামিদা বলেন, ‘তিনি (পোপ) আমাদেরকে মিয়ানমারে বৈধভাবে ফিরে যেতে সহায়তা করতে পারেন। এখান থেকে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে পারেন। অন্য কোনও দেশে নিয়ে যেতে পারেন। তিনি যা চান, তাই করতে পারেন।’

মার্কিন সংবাদমাধ্যম লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোপ ফ্রান্সিসের এই সফর মূলত কূটনৈতিক হলেও চলমান বাস্তবতায় এটি হবে তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।  বাংলাদেশ সফরে পোপ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন না। তবে তিনি রোহিঙ্গাদের ছোট একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক করতে পারেন।

সোমবার সকালে এই তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও। তিনি বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের কথা যাতে পোপের কাছে পৌঁছায় সে জন্য চেষ্টা করছে আর্চবিশপ হাউস। পোপ শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন। দরিদ্র, সুবিধা বঞ্চিত, শরণার্থীদের পক্ষে কথা বলবেন।’

এছাড়াও,  পোপ ফ্রান্সিসের মিয়ানমার সফর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে সহায়তা করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ক্যাথলিক প্রধান কর্মকর্তা পাট্রিক ডি রোজারিও।

সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। তবে কার্ডিনাল পাট্রিক ডি’ রোজারিও সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ এবং এর সমাধান বেশ জটিল হয়ে যাবে।

মিয়ানমারে ৫ কোটি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ৭ লাখ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান, সংখ্যালঘু হিসেবে তাদের মনেও আতঙ্ক বিরাজ করছে৷ মিয়ানমার সম্পর্কিত রাজনৈতিক বিশ্লেষক রিচার্ড হোর্সে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘মিয়ানমারের অধিকাংশ মানুষ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের কথা বিশ্বাস করে না এবং তারা এটাও বিশ্বাস করে না যে বাংলাদেশে এত সংখ্যক রোহিঙ্গা পালিয়ে গেছে৷ যদি পোপ এখানে এসে এই প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তাহলে এখানকার সংকটকে তা আরও উসকে দেবে, এছাড়া জনমনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে৷’’

পোপ ফ্রান্সিস আগামী বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সফর করবেন৷ রাজধানী ঢাকায় তিনি কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গেছে৷ বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ৪৫ বছরের রোহিঙ্গা ইমাম নূর মোহাম্মদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার আশা পোপ মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানাবেন এবং আমাদের নাগরিকত্ব দেয়া ও আমাদের প্রতি সব ধরনের বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানাবেন তিনি৷’’

আগস্টে দেয়া এক বক্তব্যে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন পোপ৷ পাশাপাশি সব সম্প্রদায়কে সমান অধিকার দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন মিয়ানমার সরকারের প্রতি৷

পোপের এই সফরের মূল প্রতিপাদ্য ‘শান্তি এবং ভালোবাসা’৷ সেই লক্ষ্যেই পোপ মিয়ানমারের সব সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের ডাক দেবেন বলে আশা করছেন মিয়ানমারের আর্চ বিশপ৷ বুধবার একটি পাবলিক মাস এর আয়োজন করা হয়েছে ইয়াঙ্গনে৷

আরএম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ