আতাউর রহমান খসরু
বার্তা সম্পাদক
রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী আগামী ২১ ডিসেম্বর রংপুরে অনুষ্ঠিত হবে ২য় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। প্রার্থীরা ২২ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবে।
আজ ৫ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে এ তফসিল ঘোষণা করা হয়।
তফসিলে বলা হয়, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে এবং প্রার্থীরা আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ পাবেন।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার বহু পূর্ব থেকে রংপুর শহরের নির্বাচনের আমেজ তৈরি হয়েছে।
আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছে বহুপূর্বে। ইতিমধ্যেই ঈদ-নববর্ষ-পূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টারে শহর ছেয়ে ফেলেছন তারা।
সে হিসেবে খানিক পিছিয়েই বলতে হবে ইসলামি দলগুলোকে। নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য কোনো প্রস্তুতিই তারা গ্রহণ করতে পারেন নি।
দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন আওয়ার ইসলামকে জানান তাদের কোনো প্রার্থী রংপুর সিটিতে অংশগ্রহণ করবে না।
আর অংশগ্রহণের ব্যাপারে তারা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেন নি বলে জানান ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘রংপুর সিটি নির্বাচন আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নেই নি। সিদ্ধান্ত হলে আপনাদের জানাবো।’
খুব শীঘ্রই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে জোটের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। জমিয়তের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনূর পাশা আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘আজ তফসিল ঘোষণা হলো। এখনো জোটের মিটিং হয় নি। কোনো সিদ্ধান্তও হয় নি। জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।’
ইসলামি দলগুলো মধ্যে রংপুর সিটিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিস।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এটিএম গোলাম মোস্তফাকে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করলেও খেলাফত মজলিস তাদের প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত করে নি। তবে তাওহিদুর রহমান রাজু তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী বলেন জানান দলের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের।
রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে এগিয়ে আছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তারা একটু আগ থেকে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ শুরু করেছে।
রংপুর সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী এটিএম গোলাম মোস্তফা। তিনি গত সিটি নির্বাচনেও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
ইসলামী আন্দোলনের নির্বাচনী অঙ্গীকারসমূহ
এ সিটি নেতা ২০০৪ সাল থেকে ইসলামী আন্দোলনের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন বলে জানান।
গত সিটি নির্বাচনে গোলাম মোস্তফা ১৬ হাজার ভোট পেয়ে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন। তার প্রাত্যশা এবার তিনি জয়ের দেখা পাবেন। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? তিনি বলেন, গতবার আমাদের প্রস্তুতি কিছু ত্রুটি ছিলো। এবার তা সংশোধনের চেষ্টা করছি। এবারের প্রচার-প্রচারণাও বেশ জোরালো।’
‘গতবারের নির্বাচন থেকে এবারের নির্বাচন ভিন্ন হবে কারণ, আমরা গত সিটি নির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কাজ করে আসছি। শুধু নির্বাচন কেন্দ্রিক নয়; বরং সারা বছরই আমরা জনসেবামূলক কাজ করেছি।’ বলেন এটিএম গোলাম মোস্তফা।
এটিএম গোলাম মোস্তফা রংপুর শহরেই জন্মগ্রহণ করেছেন এবং এখানেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে মাস্টার্স করেছেন রাষ্ট্র বিজ্ঞান থেকে।
কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর এখন তিনি একজন পুরো দস্তুর ব্যবসায়ী।
গোলাম মোস্তফা মনে করেন, তিনি রংপুর মানুষ ও তাদের প্রয়োজন ভালোভাবেই জানেন। এখানের মাটি ও মানুষের সঙ্গে হৃদয়ের সম্পর্ক আর এটাই তার মূল শক্তি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার দলের মূল লক্ষ্য ক্ষমতা নয়। আমরা মানুষের সেবা করে জান্নাত উপার্জন করতে চাই। তাই নির্বাচনে জয়ী না হলেও আমরা জনসেবা বন্ধ করে নি। সারা বছরই আমাদের গণসংযোগ অব্যাহত ছিলো।’
রংপুর শহর নিয়ে তার পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, ‘রংপুর শহরকে আমি আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তুলবো। রংপুরের রাস্তা-ঘাট ও মৌলিক অবকাঠামো নির্মাণ করবো। শহরের মাদক ও অনৈতিকতা বন্ধে কাজ করবো।’
কথা হয় খেলাফত মজলিসের সম্ভাব্য প্রার্থী তাওহিদুর রহমান রাজুর সঙ্গে। তিনি জানান দলীয় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হওয়াই আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করি নি।
তবে দলীয় প্রচার এবং প্রার্থী হিসেবে তার পরিচিতি বাড়ানোর কাজ চলছে।
খেলাফত মজলিসের এ প্রার্থীর নাম তাওহিদুর রহমান মণ্ডল। ডাকনাম রাজু। তিনি ১৯৬৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রংপুর করমাইকেল কলেজ থেকে ফিকিক্স-এ অনার্স এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে রংপুর মডেল কলেজের ভাইস-প্রিন্সিপাল।
তাওহিদুর রহমান খেলাফত মজলিসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন চলতি শুরুতে। হঠাৎ রাজনীতিতে এসে নির্বাচনে কতোটা সুবিধা করতে পারবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রংপুরের মানুষ জাতীয় পার্টি কেন্দ্রিক বৃত্তবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তারা নতুন নেতৃত্ব চায়। জনগণের এ প্রত্যাশা কাজে লাগাতে পারলে আমরা অবশ্যই সফল হবো।
তিনি মনে করেন, রংপুর একটি উদীয়মান শহর। এ শহরকে সুপরিকল্পিতভাবে সাজাতে হবে। তাই তিনি ও তার দল রংপুরের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনাকে গুরুত্ব দিবেন।
তাওহিদুর রহমান বলেন, রংপুর শহরের মাদক সমস্যা খুব প্রকট না। এখানে মাদকের বিস্তার হচ্ছে বহিরাগতদের মাধ্যমে। তিনি মেয়র হলে বিষয়টি কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করবেন।