মুহাম্মাদ শোয়াইব : আইএস সম্মুখ যুদ্ধে হেরে গেলেও একদম হেরে যায়নি। কারণ তারা আখের গুছিয়ে নিয়েছে আগেই। হেরে যাওয়ার হিসাব-নিকাশ আগেই করা ছিল তাদের। এমন তথ্যই উঠে এসেছে সময়ের আলোচিত জঙ্গি সংগঠনটির এক অনুসারীর বক্তব্যে।
উমর নামের বাহরাইনের এই যুবক একসময় আইএসের ঘনিষ্ঠ কর্মী ছিল। তিনি বলেন, ‘আইএস জানত, তাদের পরিণতি শেষের দিকে এবং তাদের সব সম্পদ হারানো উচিত হবে না।’
আইএসকে সবচেয়ে ধনী সংগঠন হিসেবে বিবেচেনা করা হয়। তাদের আয়ের উৎস নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, তেল চোরাচালান, চাঁদাবাজি, চুরি ও মানব পাচারই তাদের একমাত্র উৎস।
কিন্তু সম্প্রতি তাদের দখলকৃত সিরিয়া ও ইরাকের অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারানোয় অনেকে ধারণায় বেশ অর্থকষ্টে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এই জঙ্গি সংগঠনটি।
কারণ, নিয়ন্ত্রণে থাকা তেলক্ষেত্রগুলো হাতছাড়া হওয়ায় বেশ সমস্যা পড়েছে জঙ্গি সংগঠনটি। এ জন্য সাময়িকভাবে ধাক্কা সামলাতে হ্রদ-সমৃদ্ধ উত্তর ইরাকে মাছ ও গাড়ি বিক্রি করে ব্যয় মেটাচ্ছে বলেও বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়েছে।
কিন্তু ঠিক এমনি মুহূর্তে উমরসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তার বার্তায় উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র।
বার্তা সংস্থা সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে উমর বলেন, ‘সংগঠন আগেই পরিকল্পনা করে রেখেছে, তাদের একদিন শেষ হয়ে যেতে হবে। তাই তারা তাদের প্রচুর অর্থ যুদ্ধরত অঞ্চলের বাইরে পাচার করেছে।
আইএসের মতাদর্শিক প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালনকারী উমর বলেন, সংগঠনটি তাদের সব সম্পদ রণাঙ্গনে ব্যয় করেনি। অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রেও নয়। অস্ত্র তারা সংগ্রহ করত তাদের ‘শত্রু’দের থেকে।
তারা তাদের সম্পদকে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছে। এমনকি চরম কঠোরতার সময়ও আইএসের ভবিষ্যৎ নিয়ে হিসাব-নিকাশ ছিল।
আইএসের মরোক্কোর একটি শাখা বলছে, আইএস এমন কিছু মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, যারা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। তারা সাধারণত কোম্পানির ব্যবস্থাপনার কাজই করত।
কিছু গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, আইএসের সম্পদ প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার। নানা কাজের মাধ্যমে তাদের দখলকৃত অঞ্চল থেকে সংগঠনটি গড়ে প্রতিদিন ৩০ লাখ ডলারের বেশি পরিমাণ অর্থ আয় করত।
আইএস ইরাক ও সিরিয়ার যেসব অঞ্চল নিজেদের দখলে ছিল, সেখানে অন্তত ১১টি গ্যাসক্ষেত্র ছিল।সিরিয়ার সলাহুদ্দীন ও নীনভী এলাকার প্রায় ৮০ তেল সমৃদ্ধ এলাকা ২০১৪ সালের মধ্যেই দখল করতে পেরেছে তারা।
এসব গ্যাসক্ষেত্র থেকে জঙ্গি সংগঠনটির কর্মীরা তেল চোরাচালান করে বিপুল অর্থ কোষাগারে জমাতেন। এ ছাড়া ওই অঞ্চলে চাঁদাবাজি, অপহরণ ও মানব পাচারের মাধ্যমেও অর্থ সংগ্রহ করে আইএস। কিন্তু এখন তেলক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ হারালেও তাদের এই প্রচুর অর্থ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
এসব এলাকারা গুরুত্বপূর্ণ দামী জিনিসও তারা বিক্রি করে ফেলেছে বিভিন্ন মাফিয়া গ্রুপ ও আন্তজার্তিক পাচার চক্রের কাছে।
আইএসের এই বিপুল অর্থ ইরাক ও সিরিয়া ও কুর্দিস্তানের বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে অন্যান্য রাষ্ট্রে চালান করত তারা।
রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা সাবুতানিক বলছে, এই অর্থ ইরাকের রাজধানী বাগদাদের বিভিন্ন ব্যাংক ও কোম্পানির অফিসের মাধ্যমে প্রথমে ইরাকের কুর্দিস্তানের যাখুফি দাহুক শহরে নিয়ে যাওয়া হত। এরপর কুর্দিস্তানের রাজধানী হিসেবে গণ্য ইর্বিলে স্তানান্তরিত হত। সেখান থেকে তুরস্ক। তুরস্ক থেকে আবার ইর্বিলে এবং সেখান থেকে মুসলে পৌঁছত।
দ্বিতীয় রুট হলো, তুরস্কের গাজী ইন্তাব সীমান্ত দিয়ে তুরস্ক পাচার করা হত। সেখান থেকে আবার মসুলে।অধিকাংশ সম্পদ ব্যাংকে প্রবেশ করত। ব্যাংক কর্মকর্তাকে বলা হত, এটি ‘উমুকে’র আমানত। এর মানে এটি মুসলের। অথবা বলা হত, এটি আমার কাছে ‘উমুকে’র ঋণ। এতে ব্যাংক কর্মকর্তা বুঝে নিত।
এভাবে ব্যাংক কর্তপক্ষ অর্থ গ্রহণ করত এবং মুসলে তাদের পরিচিত ব্যাংক কর্তপক্ষকে পৌঁছে দিত। যাতে সর্বশেষ আইএস এই অর্থ পেয়ে যায়। সংগঠনটি প্রতিদিন অনেক অর্থ আয় করত। যার সঠিক পরিমাণ কেউ বলতে পারে না। তবে তা প্রায় তিন মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো হবে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, আইএস নেতারা পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় তাদের মতাদর্শ অব্যাহত প্রচারের জন্য টাকা ছড়াত।
পত্রিকাটি বলছে, আইএসের এই বিশাল অংকের অর্থ জমা করেছে মূলত পশ্চিমা দেশগুলোতে। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২৯টি দেশের সঙ্গে জোট গঠন করেছে আইএসকে প্রতিহত করার জন্য।
সিরিয়ার অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, সংগঠনটির অর্থ সংস্থার নেতাদেরকে বাঁচাতে, তাদেরকে পালাতে সহযোগিতায় ব্যবহৃত হত।
রাশিয়ায় ফুটবল বিশ্বকাপে হামলার হুমকি আইএসের!