শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

আরাকানি ৬ আলেমের দুঃখগাঁথা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা মুফতি রিদওয়ানুল কাদির
মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া টেকনাফ

সুহৃদ! আজ কয়েকজন মজলুম আরাকানি আলেমের কথা বলবো, যাদের বেদনার গল্প শোনাবো, তারা সবাই আমার সহপাঠী। আসুন শুরু করি।

এক
মাওলানা মুফতি হামিদ হোসাইন

আমরা ২০১৩ সনে জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ায় একসাথেই দাওরায়ে হাদিস পড়েছি। এরপর আমি ইফতা পড়ি ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরায়। আর সে ইফতা পড়ার জন্য ভর্তি হয় জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার ইফতা বিভাগে।

ছাত্র হিসেবে সে ছিল প্রচণ্ড মেধাবী। দাওরায় মাঝেমধ্যে বিভিন্ন কিতাবের ইবারতও পড়তো। যথেষ্ট মনোযোগী ছাত্র হিসেবে সে সবার কাছে পরিচিত ছিলো। দাওরায় আরকানের ছাত্রদের মধ্যে সেই সবচেয়ে মেধাবী ছিলো।

তার আরেকটা অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিলো, সে নিজের খরচের টাকা বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে কিতাব সংগ্রহ করতো। কিতাবের বিশাল সংগ্রহ দেখতাম তার রুমে।

বার্মায় সে দারুস সাকাফা ইসলামিয়া মাদরাসায় মিশকাত প্রথম খণ্ড, হেদায়া তৃতীয় খণ্ড, হেদায়াতুন্নাহুসহ দরসে নেজামীর অসংখ্য দুর্বোধ্য কিতাবের দরস দিয়েছে।

যাই হোক সে পড়ালেখার পর বার্মায় চলে গিয়েছিলো। কুরবানির পর বাংলাদেশে হিজরত করে এসেছে।

কয়েকদিন আগে সেকি কান্না! সবচেয়ে বড় আফসোস প্রকাশ করলো, নিজের অনেক স্বাধের কিতাবগুলো আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে বলে!

তার ভাষ্য, ফতোয়ায়ে শামী, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া (আলমগীরী), আহসানুল ফাতাওয়াসহ অসংখ্য কিতাব ভস্মীভূত হওয়ার দৃশ্যগুলো এখনো ভেসে উঠলে অন্তরটা ভেঙে চৌচির হয়ে যায়!

দুই
মাওলানা মুফতি ইদরীস

আমাদের সাথে জামিয়া পটিয়ায় দাওরায়ে হাদীস শেষ করার পর পটিয়ার দারুল ইফতায় ভর্তি হয়ে ইফতা কোর্স শেষ করে। শারীরিকভাবে হালকা পাতলা হলেও তার একটি অনুসন্ধিৎসু মন ছিলো। তাহকিকি মেজাজ ছিলো তার মাঝে। উস্তাদদের সেবায় তাকে উদয়াস্ত অন্তপ্রাণ দেখতাম।

কিতাব মুতালাআর প্রতি বেশ ঝোঁক ছিলো। অন্যান্য ছেলেদের মতো খুব বেশি আড্ডা দিতেও দেখা যেতো না।

বার্মায় হেদায়া, তালখিসুল মিফতাহ, মুখতাসারুর মাআনি, শরহে জামী, কাফিয়া, সিরাজীসহ অসংখ্য কিতাব পড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে তার।

আহ! কিন্তু আজ তাকে দেখে নিজের অশ্রুকে সংবরণ করতে পারিনি। তার বিধ্বস্ত চেহারা আমার হৃদয়টাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে।

তিন
মাওলানা মুহাম্মদ আনস

সেও আমাদের সাথেই ২০১৩ সনে দাওরা ফারেগ। বেশ মিশুক প্রকৃতির ছেলে ছিল সে। মোটামোটি স্বচ্ছল পরিবারের সদস্য ছিলো। গতবার দাঙ্গার সময়ও বাংলাদেশে হিজরত করে এসেছিলো। পরে আবার বার্মায় চলে যায়।

এখন আবার বউ-ছেলেসহ বাংলাদেশে এসে বেশ বিপাকেই পড়েছে সে। আসার সময় পরনের কাপড় ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে আসার সুযোগ হয়ে উঠেনি। পর্দার বিধান লঙ্ঘিত হবে বলে ক্যাম্পেও উঠতে পারছে না। খুবই টানাটানির সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরায় সে অবস্থা তার!

চার
মাওলানা হুজ্জাতুল্লাহ

ছটফটে ছাত্র হিসেবে যেকোন পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার অদ্ভুত গুণ ছিল তার ভিতর। সদা হাস্যোজ্জ্বল ভাইটি সেদিন রাজ্যের বিষাদ নিয়ে হাজির হলো আমার রুমে।

তাকে দেখে আমি আঁতকে উঠলাম! কেমন ছেলে কেমন হয়ে গেলো! সহপাঠীকে পেয়ে নিজেদের উপর সংঘটিত জুলুমের দাস্তানের ঝাঁপি খুলে দিলেন আমার সামনে!

পাঁচ
মাওলানা দ্বীন মুহাম্মদ

দাওরায়ে হাদীসেরর বছর তার সাথে তেমন ঘনিষ্ঠ পরিচয় না থাকলেও পরশু তার মলিন চেহারাটি দেখার পর পাঁচ বছর পূর্বের স্মৃতিগুলো মানসপটে উঁকি দিয়ে উঠলো। আহ! কোথায় সে দুরন্ত ছেলেটি! আর কোথায় আজকের জীবনযুদ্ধ ক্লান্ত একটি অসহায় মানুষ!

আহ! যুগ কত দ্রুত পাল্টে যায়! অবস্থা কত দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যায়!

ছয়
মাওলানা সাবেত

সেও আমার সহপাঠী। তার চলাফেরায় একটা লক্ষ্যণীয় আভিজাত্য ছিলো। কিন্তু গতকাল তার ক্লান্ত-বিধ্বস্ত চেহারা দেখে ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো!

সে তাদের উপর নির্যাতনের ফিরিস্তি যখন বর্ণনা করছিলো, তখন উপশ্রিত শ্রোতা সবাই অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে।

আহ! নিজের সহপাঠীদের এ দুরবস্থা দেখার পর থেকে মনের অবস্থা একদম ভালো নেই। হৃদয়ে প্রচণ্ড রক্ষক্ষরণ হচ্ছে। মন চেয়েছিলো, তাদের প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা করে দিই। কিন্তু বান্দার সব সাধ কি আর পূরণ হয়!

কিছু মুখলিস ভাইয়ের আমানত ছিলো আমার কাছে। তা থেকে সবাইকে সামান্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাদের দুঃখের বোঝাটাকে অল্প হলেও লাঘব করার চেষ্টা করলাম!

জানি ভাই, এ অল্প টাকায় তোমাদের কোন প্রয়োজনই পূরণ হবে না! তবুও কি আর করা!

অল্প কিছু দিয়ে শরিক হলেও রাব্বে কারিমের শাহী দরবারে তোমাদের জন্য এক পৃথিবী দুআ করলাম, রাব্বে কারিম যেন তোমাদের জন্য উত্তম ফয়সালার ব্যবস্থা করে দেন। সসম্মানে স্বদেশে ইজ্জতের সাথে নাগরিকত্ব নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচার তাওফিক দান করেন। আমীন।

কেমন আছেন আরাকানের প্রসিদ্ধ লেখক মাওলানা শিব্বির আহমদ?


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ