শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার

বিভৎস নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সাহায্যে জরুরি ১৮ আবেদন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

এ এস এম মাহমুদ হাসান
আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

মিয়ানমারের বিতর্কিত সামরিক জান্তা আর বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী বৌদ্ধ মগ গোষ্ঠির নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে মুসলিম রোহিঙ্গারা। জীবন্ত অবস্থায় ধারালো চাপাতি দিয়ে বিকলাঙ্গ করে ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে হত দরিদ্র এসব মুসলিম শিশু-কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ বনিতাকে। মগদস্যুরা মুসলিম রোহিঙ্গাদের বক্ষ চিরে কলিজা ছিড়ে বিভৎসতা ছড়িয়েছে পুরো আরাকান জুড়ে।

মিয়ানমারের সামরিক ও বেসামরিক সমন্বিত বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা ভয়ংকর চিত্রে হাজারো মানুষকে খুন করে হৃদয় বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে পুরো বিশ্বময়। এসব লোমহর্ষক ঘটনার অবতারণা করছে মিয়ানমারের হিংসুক বৌদ্ধ সম্প্রদায়।

ফলে বিভৎস কায়দায় হত্যা, খুন, ও ধর্ষনের মুখোমুখি লক্ষ লক্ষ রহিঙ্গারা বিতাড়িত হয়ে বাঁচার তাগিদে ছুটে আসছে বাংলাদেশ সীমানায়। পাড়ি জমিয়েছে কক্সবাজারের উখিয়ায়।

রোহিঙ্গা মুসলিমদের করুন পরিণতি কাঁদাচ্ছে পুরো মুসলিম জাতিকে। ভীত-সন্ত্রস্ত রোহিঙ্গা মা-বোন, শিশু কিশোরদের মলিন মুখ দেখে আতকে উঠছে সবাই। তাদের অজানা ভবিষ্যৎ পরিণতি আর বর্তমানের অমানবিক করুন বিপর্যয় চিত্র ভাবাচ্ছে আমাদের।

বিশ্ব মোড়ল গোষ্ঠি যখন নির্যাতিত নিষ্পেসিত রোহিঙ্গাদের পক্ষে বিবৃতি দিয়েই নিরব ভূমিকা পালন করছে। ঠিক তখনি এ দেশের কোটি কোটি কোমলপ্রাণ মানুষ এগিয়ে এসেছে নির্মম কায়দায় স্বদেশ বিতাড়িত মুসলিম ভাইদের সাহায্যে। পুরো বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে প্রান্তিক গাঁয়ের মানুষও। খাবার, চিকিৎসা, বস্ত্র আর নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যদি দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে স্বরণকালের নির্যাতিত রোহিঙ্গাবাসীর।

তাই উদার হস্তে আমার এসব ভিটে-মাটিহারা ভাইদের সাহায্যে এগিয়ে আসা সকল দানবীরদের প্রতি আমার কয়েকটি আকুল আবেদন।

এ দেশে আশ্রয় নেওয়া বিভিন্ন বয়সের রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রান বিতরণ করতে যেয়ে যে বিষয়টি আমার ভীষণভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে, তার আলোকেই আপনাদের কাছে সবিনয়ে আবেদন জানাচ্ছি-

আবেদন -১ । বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের মাঝে সবচেয়ে করুন পরিস্থিতিতে আছে নিষ্পাপ রোহিঙ্গা শিশুরা। অন্য দিকে অভূক্ত মায়ের বুকের দুধের শূন্যতা ও শিশুখাদ্যের অভাবে আজ মৃত্যু পথযাত্রী হাজার হাজার শিশু। সুতরাং এ দিকটি বিবেচনা করে প্রতি শিশু পরিবারের জন্য শিশু খাদ্যের ব্যবস্থা করুন।

আবেদন-২। শিশুদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় বিশেষ করে ছোট ও মোটা কাথা, বালিশ, মশারি ও আপনার কাছে অতি প্রয়োজনীয় মনে হয় এমন শিশুদ্রব্য নিয়ে আসুন। আগে নিষ্পাপ শিশুকে প্রাধান্য দিন।

আবেদন-৩। এক কাপড়ে বিতাড়িত হওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য কাপড়ের ব্যবস্থা করুন। বিশেষ করে নারীদের জন্য সহজলভ্য শাড়ি ও তৎসংশ্লিষ্ট পোশাক সরবরাহ করুন।

আবেদন-৪। সাধারণ রোগের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার্থে যেমন, জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, ব্যথা ইত্যাদির জন্য জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ নিয়ে আসুন।

আবেদন-৫। ক্লান্ত শ্রান্ত এসব মুসলিম রোহিঙ্গারা অন্তত দিনে দু’বেলা পেট পুরে খেতে পারে এই পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করুন। এ ক্ষেত্রে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ত্রাণের প্যাকেট ছুড়ে বিতরণ করা থেকে বিরত থাকুন। বরং প্রতিটি তাঁবুতে গিয়ে আদর ও আদবের সাথে আমাদের এসব মুসলিম ভাইদের প্রয়োজন শুনে সে অনুযায়ী সাহায্য মেটানের ব্যবস্থা করুন।

আবেদন-৬। এলাকাটি পাহাড়ি জঙ্গল ও প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ হওয়ায় বড় মশারি, ত্রিপল, বড় ও মোটা পলিথিন যার যতটুকু লাগে বিতরণ করুন।

আবেদন-৭। স্থায়ীভাবে পানির প্রবল সঙ্কট দূর করতে স্থানীয় প্রশাসন বা সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি নিয়ে নলকূপ (চাপকল) স্থাপনের চেষ্টা করুন। (পাহাড়ি এলাকায় অল্প খরচেই এসব নলকূপ স্থাপন করা যায়)

আবেদন-৮। জীর্ণশীর্ণ, পর্দানশীল, বৃদ্ধ, আলেম, শিশু পরিবার, সাহায্য নিতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে না আসা লজ্জাশীল যুবতী পরিবারে নিজ উদ্যোগে যথেষ্ট পরিমাণ সাহায্য প্রদান করুন।

আবেদন-৯। যুবতী মেয়েদের স্থানীয় লোলুপ নিকৃষ্ট দালালচক্র ও নারী ব্যবসায়ীদের হতে সতর্ক করতে তাঁবুতে তাঁবুতে যেয়ে ক্যানভাস করুন। প্রয়োজনে রোহিঙ্গা দোভাষী ব্যবহার করুন। (এটি এই মুহূর্তে খুবই প্রয়োজন । কেননা দালালচক্র কর্তৃক বিভিন্ন প্রলভন ও সুন্দর ভবিষ্যতের কথা বলে ফুলিয়ে ফঁপিয়ে যুবতী নারীদের বিভিন্ন নিষিদ্ধ পল্লীতে পাচার করার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যা অত্যন্ত ঘৃণিত ও অমানবিক)

আবেদন-১০। যেহেতু রোহিঙ্গা মুসলিমরা অদূর ভবিষ্যতে সুনিশ্চিতভাবে নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আবার এ দেশে তারা কোনো কর্মস্থানও পাবে না। সেহেতু লক্ষ লক্ষ অভিবাসীদের স্থায়ীভাবে সাহায্য করার মানসিকতা ও চেষ্টা চালিয়ে যান।

আবেদন-১১। রোহিঙ্গা মুসলিমদের এহেন অসহায়ত্বের সুযোগে বিদেশী বিভিন্ন এনজিও মিশনারি সাহায্যের নামে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করতে পারে। তাই ক্যাম্পে সাহায্যের পাশাপাশি স্থায়ী পাহারা ও দ্বীন প্রচারের ব্যবস্থা করুন। আল্লাহর উপর ভরসার কথা বলুন। বেশি বেশি ইবাদাতের দাওয়াত দিন।

আবেদন-১২। মুসলিম শরনার্থীদের জন্য জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের জন্য অস্থায়ী মসজিদ নির্মাণ করুন। প্রশাসন মসজিদ নির্মাণের অনুমতি না দিলে বড় জায়গায় শুধু বিছানা বিছিয়ে নামাজের জায়গা নির্ধারণ করুন এবং সকল রোহিঙ্গা পুরুষকে নামাজে শরীক হওয়ার আহবান জানাতে থাকুন। যাতে করে বিধর্মীরা ধর্মান্তরিত করার সুযোগ না পায়।

আবেদন-১৩। প্রশাসন ছাড়াও নিজেদের উদ্যোগে ক্যাম্পে সাহায্যের জন্য ভাগাভাগি করে পাহারাদার বসান। নিজস্ব নিরাপত্বা বলয়ের মাঝে অভিবাসী মুসলিম ভাইদের রক্ষা করুন।

আবেদন-১৪। অস্থায়ী মসজিদ ও মাদরাসা গড়ে সেখানে রোহিঙ্গা সন্তানদের আরবি লেখা পড়ার ব্যবস্থা করুন। তাদের উৎসাহের জন্য শিক্ষার্থীদের মাঝে বিশেষ সাহায্য ও খাবারের ব্যবস্থা করুন। (যাতে করে মিশনারী গ্রুপগুলো কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের উপর তাদের নিজস্ব মতবাদের প্রভাব খাটানোর সুযোগ না পায়)

আবেদন-১৫। বিবাহ উপযুক্ত অবিবাহিত রোহিঙ্গা পুরুষ ও নারীদের তালিকা করুন এবং তাদের মতামত নিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করে দিন। তাতে মা বাবাহারা যুবতীদের আশ্রয়ের স্থায়ী সমাধান হবে। পুরূষদের চিন্তা কমে যাবে। এমনকি ক্যাম্পে নারী ঘটিত দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও কম থাকবে।

আবেদন-১৬। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ভবিষ্যত চিন্তামুক্ত স্থায়ী কোনো সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ব জনমত গড়তে বিক্ষোভ ও নানান কর্মসূচি চালিয়ে যান। মিয়ানমার ও তাবত হিংস্র দানবদের ধিক্কার জানাতে কঠিন কঠিন কর্মসূচি অব্যাহত রাখুন।

আবেদন-১৭। এ দেশের কোনো বিতর্কিত লেখক ও সাংবাদিক যদি নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ঘায়েল করে কোনো মন্তব্য বা সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে নতুন ষড়যন্ত্রের গুটি চালে, তাহলে যথাসাধ্য প্রতিবাদ করুন।

আবেদন-১৮। ত্রাণ বিতরণ সুষ্ঠুভাবে হলো কিনা তদারকি করুন। ভুক্তভোগীদের হাতছাড়া হচ্ছে কিনা সেটিরও খোঁজ নিন। এরই মধ্যে স্থানীয় জনগনের হাতে ত্রাণ উধাও হয়ে যাওয়ার প্রমানও পাওয়া গেছে।

উপরোল্লিখিত ১৮টি জরুরি আবেদন এ দেশের সকল মমতাময়ী বিবেকবান সচেতন সাহায্যকারী মানুষের প্রতি করা হলো। যদি উপরোল্লিখিত আবেদন অনুযায়ী আমরা কাজ করে যেতে পারি, তাহলে আমাদেরই অঙ্গ সমতুল্য আরাকানি নির্যাতিত মুসলিম ভাইয়েরা কষ্ট পাবে না। আমরা রাসুল সা. এর আনসার বাহিনীর মত সন্মান ও উভয়কালের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারব ইনশাআল্লাহ।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ