শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

বাংলাদেশের উদ্দেশে এক রোহিঙ্গা আলেমার চিঠি!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

টুইটারে বাঙ্গালীর উদ্দেশে রোহিঙ্গা বোনের চিঠি। ইংরেজি ভাষার চিঠিটা ইতোমধ্যেই অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে। হাজারও মানুষ চিঠিটা শেয়ার করছেন। ফেসবুক থেকে চিঠিটা আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

আমি একজন রোহিঙ্গা মেয়ে। তিন বছর আগেই আল্লাহর রহমতে আমি ইফতা পাশ করি। এরপর খুব ছোট্ট একটা সংসার গড়ি। বছর যেতে না যেতেই আমাদের ঘর আলোকিত করে কোল জুড়ে আসলো এক কন্যা সন্তান।

হঠাৎ একদিন সেনাবাহিনীর কিছু লোক আমাদের ঘরে প্রবেশ করে। ওদের দেখে আমি বোরকা পড়ে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। ওরা এসেই আমার হাত ধরে টানাটানি করতে লাগলো, যার ফলে হাত ফুসকে আমার মেয়ে নিচে পড়ে যায়। ওরা যখন আমাকে ভোগ করার জন্য বোরকায় হাত দিল, তখন সাথে সাথে আমার মাথা ঘুরে গেলো। আল্লাহকে বললাম, "ইয়া আল্লাহ! আমি তোমার সামনে যিনাকারী হয়ে উঠতে চাই না, তুমি আমাকে ঈমানী শক্তি দান করো।" সাথে সাথে মনে হলো, আমি যেন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে দেরি করেছি; কিন্তু তিনি আমাকে সাহায্য করতে দেরি করেননি। সামনেই তাকিয়ে দেখি ছোট্ট একটা বটি-দা। অনেক দিন যাবৎ আমরা ব্যবহার করি না, কোন ধার নাই। সেটা হাতে তুলে নিয়ে ৬/৭ জন সেনাকে কুপিয়ে হত্যা করলাম।

তারপর আরো কিছু সেনা ঘরে প্রবেশ করে। এবার চারজন সেনা আমাকে ধরে রেখেছে আর দু'জন সেনা আমার ছোট্ট শিশুটির লজ্জাস্থানে অস্ত্র ঢুকিয়ে দেয়। মেয়েটি চোখের সামনে ছটফট করে মারা যায়। ইতিমধ্যে আমার স্বামী ঘরে আসলে, কিছু সেনা তাকে মারতে থাকে। আর আমাকে বললো, "তোর সাথে আমরা সবাই এখন খেলা করবো আর তোর স্বামী তা দেখবে; তারপর তোদের হত্যা করবো।"

আমার স্বামী সন্তান কারোর জন্য মায়া হলো না। তখন আমি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলাম। ওদের কারো কাছে একটুও মাথা নত করিনি। হঠাৎ চোখ পড়লো এক-বস্তা ছাইয়ের উপর। জানিনা সেটা ওখানে কী করে এলো! এবার দৌড়ে গিয়ে ছাইয়ের বস্তার মুখ খুলে ওদের চোখের সামনে ছাই উড়াতে লাগলাম।

আলহামদুলিল্লাহ্! আল্লাহ আমাকে তার রহমত দ্বারা ঘিরে নিলেন। প্রতিটি সেনা চোখ বন্ধ করে আমাকে গালাগালি করছিল। আমি কোন মতে একটু আড়ালে চলে গেলাম। ওরা এবার চোখ কচলাতে কচলাতে আমার স্বামীর কাছে গিয়ে তাকে জবাই করলো আর বললো, "যার বউয়ের এতো শক্তি, তার কলিজাটা দেখবো।"

ওরা সত্যি সত্যি আমার স্বামীর কলিজাটা ছিড়ে, মুখে নিয়ে কিছুক্ষণ চাবাতে থাকে। আমি আর সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলো। ঠিক কতক্ষণ পর জ্ঞান ফিরেছিলো তা জানিনা। উঠে গিয়ে ওযু করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ে নামাজ পড়লাম। ছোট্ট একটা কাপড় দিয়ে স্বামী আর সন্তানের লাশ ঢেকে রেখে অজানার উদ্দেশে হাঁটতে শুরু করলাম। একটানা ৭ দিন পানি খেয়ে থাকার পর যখন আর ক্ষুধার জ্বালা সইতে পারলাম না; তখন সবুজ পাতা বা ঘাস খেতে শুরু করি।

একদিন ঝোপের ভিতর লুকিয়ে যোহরের নামাজ পড়ছিলাম। যখন নামাজ পড়া শেষ হলো, দেখি সেনারা আমাকে গুলি করেছে। বাহু দিয়ে অঝোরে করে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। কেন জানি আমার কোন ব্যথা লাগছিলো না। মনে পড়ে গেলো সাহাবা আজমাইনদের কথা! তারা যখন নামাজ পড়তো, কাফেররা তখন পিছন দিক দিয়ে আক্রমণ করতো। এমন সাহাবাও আছে, যাদের কাফেররা নামাজের মধ্যেই তীর মেরে মেরে শহীদ করেছে। তাহলে আমরা কেন এই শহীদি মরণকে বরণ করতে পারবো না! এ'সব ভাবতে ছিলাম, ততক্ষণে সেনারা অনেক কাছে চলে এলো। আল্লাহকে স্মরণ করতে করতে দৌড় দিলাম। অবশেষে পানিতে ঝাপ দিয়ে পড়লাম। এরপর কী হল জানি না…

হঠাৎ দেখি অপরিচিত কিছু লোক আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। শরীরের সমস্ত জায়গায় বোরকাটা ঠিকমতো আছে; কিন্তু শুধু পায়ের একটা মোজা কোথায় জানি হারিয়ে গেছে। আমি লজ্জিত হলাম! এতগুলো পুরুষ আমার পায়ের পাতা দেখছে। না জানি আল্লাহ আমাকে কি কঠিন শাস্তি দেন! তাওবা করলাম আর দৌড়ে গিয়ে ওযু করে সিজদায় লুটিয়ে পড়লাম। পরে জানতে পারলাম যে, আমি পানিতে ভাসতে ছিলাম, তখন লাশ মনে করে এক জেলে আমাকে কিনারে উঠিয়েছে। আমি তাদের কাছে কিছু খাবার চাইলাম; কিন্তু তখন কেউ আমাকে একটু খাবারও দিলো না। বরং এক এক করে সবাই চলে গেলো।

আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে লাগলাম। কিছুদূর গিয়ে একজন হুজুরকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, এখানে কি কোন আশ্রয় কেন্দ্র আছে। উনি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললেন। আমাকে নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে দিয়ে আসলেন। কী আজব ব্যপার! এখানে তো অনেক কষ্টে পেট ভরে পানি খাব, তাও পারি না! আর খাবার এতটুকু যে, পেটের নিচে পড়ে থাকে। তবুও আমরা খুশি আলহামদুলিল্লাহ্!

কিছুদিন পর পুলিশের গাড়িতে একজন ভদ্র মহিলা আসলেন। যিনি আমাদের মেয়েদের তল্লাশি করলেন। এরপর আমাদের কিছু মেয়েদের আলাদা করলেন। বলতে পারেন, যারা দেখতে অনেক সুন্দরী, তাদের আলাদা করলেন। এদিকে কিছু যুবক ছেলে আমাদের জন্য ত্রাণ নিয়ে এসেছিল; কিন্তু স্থানীয় চেয়ারম্যানরা তাদের থেকে ত্রাণ নিয়ে, তাদের ফিরিয়ে দিলো। চেয়ারম্যানরা আমাদের অল্প কিছু দিয়ে, উনারা সব নিয়ে চলে গেলো। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ একটু বেশি চাওয়ার কারনে পিটুনি খেলো। এমনকি কিছু কিছু খারাপ ছেলেরা মেয়েদের বুকে, লজ্জা স্থানে হাত দিল। ফলে আমরা সবাই চুপসে গেলাম।

কেউ কেউ বলছিল, তাদের টাকা আর গয়নাও নাকি বাংলাদেশীয় শকুনগুলো ছিনিয়ে নিয়েছে। আমি স্তব্ধ হয়ে মন্ত্র মুগ্ধের মতো সব শুনছিলাম। এরপর হঠাৎ একদল বয়স্ক মেয়ে এসে আমাদের আলাদা করা সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে চলে আসলো একটা হোটেলে। এই দলে আমি নিজেও ছিলাম। তারপর কি অবাক করা কাহিনিই ঘটলো! বিনা ভিসা, বিনা পাসপোর্টে আমাদের গাড়িতে তুলে দিলো এবং কোথায় যেন নিয়ে গিয়ে নামালো, তা আমি জানি না। আমাদের প্রত্যেককে ঘুমের ইন্জেকশন দিয়ে ছিলো, যার ফলে আমরা অচেতন ছিলাম।

জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর থমকে গেলাম! অন্য কোথাও নয়, একটা পতিতালয়ে আমাদের নিয়ে আসা হয়েছে। আমার কাছে তখন মনে হচ্ছিলো, আল্লাহ আমাদের উপর কঠিন পরীক্ষা চালাচ্ছেন। এ'জন্যেই বুঝি বাংলাদেশী মুনাফিকরা আমাদের এই অবস্থা করেছে! আল্লাহর কাছে তাওবা করলাম। নিজের হেফাজতের পুরো দায়িত্ব আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম। যিনি এত কিছুর পরও আমাকে পবিত্র রেখেছেন, তিন নিশ্চয়ই আমাকে হতাশ করবেন না।

মালয়েশিয়ার এক নাগরিক আমার সাথে রাত্রি যাপন করার জন্যে পতিতালয়ে এলেন। তিনি আমার নাম আর কোথায় বাড়ি সেটা জানতে চাইলে আমি তাকে সব কিছুই বলে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করে দেখি, উনি শীতে তীব্র আকারে কাঁপছেন। প্রশ্ন করলাম, এই প্রচণ্ড গরমে শীতের মতো কাঁপছেন কেন?

উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার পিছু হেঁটে আসুন। আল্লাহর কসম, আপনার কোন ক্ষতি করবো না।

আমি তার পিছু হেঁটে চললাম অনেক দূর পর্যন্ত। উনি এবার রাস্তার মধ্যেই আমার পায়ে ধরে বললেন, "আমি ভাল হতে চাই, আমাকে একটা সুযোগ দাও। আমি আর আল্লাহর নাফরমানি করবো না। তোমার সমস্ত দায়িত্ব আমার। তুমি রাজি হলে, আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারি।"

আমি রাজি হলাম, তিনি আমাকে নগদ দেনমোহর দিয়ে বিয়ে করলেন। রোজ সে আমার কাছে আরবি আর হাদীসের কিতাব পড়ে। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে হেফাজত করেছেন। কিন্তু আমার মতো তো অন্যান্য মেয়ে পতিতালয় থেকে ফিরতে পারলো না। ওদের জন্য দুঃখ হয়!

মূল লেখিকা: রোহিঙ্গা বোন
অনুবাদক-:Morium_Ekrea
সংযোজক: Tamanna_Islam

[বি.দ্র. এই চিঠির সত্যতা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাই আপত্তিকর কিছু অংশ ফেলে দেয়া হলো। তবে এ চিঠি নিয়ে তদন্ত করছে আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম টিমের সদস্যগণ]


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ