শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬


হাতি রক্ষা ছাতি বাঁচাও কর্মসূচির অভাব নেই; রোহিঙ্গাদের বাঁচাবে কে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাও. মাহমুদ হাসান সিরাজী
প্রিন্সিপাল, জামিয়া ওসমান ইবনে আফফান রা

অনলাইনটা অন করলাম। স্ক্রিনে কয়েকজনের পেইজে সাগরে ভাসমান একটা ছোট বাচ্চার লাশ চোখে পড়ল। পাশে থাকা স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম, বলতে পারো বাবুটার বয়স কত হবে? সে ফিলফিল করে তাকিয়ে রইল। প্রথমে মনে করছিল বন্যাকবলিত এলাকার কোনো ছবি হবে। পরে বুঝতে পারল বন্যাকবলিত এলাকা এমন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এটা কিন্তু বন্যাকবলিত এলাকার ছবি না। সেই আমাকে বল্ল, দেখুন তো এটা কোনো হতভাগা রোহিঙ্গা সন্তান কি না! তাকে হ্যাঁ সুচক জবাব দিলাম। আবার জিজ্ঞেস করলাম, বল এ বাবুটার বয়স কত হবে? সে বল্ল, কত হবে চার বা পাঁচ হবে!

তাকে আবার জিজ্ঞেস করলাম, আমাদের কলিজার টুকরা জাকিয়ার বয়স কত? সে বল্ল, কেন পাঁচ! এবার তাকে বল্লাম, আচ্ছা সে যদি আমাদের পাশের ফ্লাটের কোনো বাচ্চা হত বা জানা শোনা কোনো প্রতিবেশী বা আত্নীয়ের সন্তান হত তাহলে কি আমাদের জাকিয়ার খেলার সাথী হত না? আজ তার লাশটা যদি এভাবে পানিতে ভাসতো তাহলে এতক্ষণ আমরা কী করতাম। ঘার ফিরিয়ে তার দিকে চেয়ে দেখি তার দু চোখ দিয়ে পানি বেয়ে বালিশে পরছে। সে নীরবে কেঁদে যাচ্ছে। আমি বুঝতে পারলাম, মেয়ে মানুষ নরম মনের হয়ে থাকে। সে ঘটনার গভীরতা উপলব্দি করে খুব কষ্ট পেয়েছে।

আমি তাকে অন্য মনস্ক করার জন্য আবার বই পড়তে শুরু করলাম। দাগ কিন্তু আমার অন্তরেও লেগেছে। তবে দৈনন্দিন এমন সব ছবি দেখে আমরা অনেকটা গণ্ডারের মত হয়ে গেছি। আজ মায়ানমারে শত শত নিরিহ রোহিঙ্গা মারা গেলেও আমাদের কাছে তেমন কিছু মনে হয় না।

আমরা আরো ভাবি, এদের দুনিয়ায় আসাটা মনে হয় এভাবে মার খাওয়ার জন্যই। নতুবা এরা কেন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না। এরা কেন তীব্র প্রতিবাদী হয়ে উঠছে না। এরা আমাদের অশান্ত না করলে আমাদেরও যে ঘুম ভাঙ্গবে না!

নতুবা আমরা প্রতিবেশী রাষ্ট্র হয়ে আমরা কেন তাদের জন্য স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা করতে পারছি না। আমরা কেন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে দিয়ে মায়ানমার সরকারকে কোনো চাপ প্রয়োগ করতে পারছি না।

এরা অশান্ত হয়ে যখন উগ্রবাদ সৃষ্টি করে বেড়াবে তখন কি আমরা জঙ্গীবাদের তকমাটা নেওয়ার অপেক্ষা করব?

আজ বিশ্বে হাতি রক্ষার আন্দোলন হয়। বাঘ বাচানোর কর্মসূচি পালিত হয়। পশু সংরক্ষনের আইন হয়। এমনকি গাছকাটাবিরোধী মামলাও হয় তাহলে রোহিঙ্গারা কেন নূন্যতম পশুর অধিকার পাবে না? তাদের রক্ত কেন এতটা সস্তা ভাবা হয়? তাদের মা-বোনদের ইজ্জত এতটা মূল্যহীন হয় কিভাবে?

আজ তাদের আমরা পশুর অধিকারটাও দিতে পারব না? তারা কি আমাদের চোখে পশুর চেয়েও অধম হয়ে গেল?

আজ আমরা যদি তাদের পাশে ঠিকভাবে দাঁড়াতে না পারি তাহলে পরবর্তী ধাক্কাটা সামাল দিতে পারবোতো? তারা যখন প্রতিবাদী ও প্রতিরোধী হয়ে উঠবে তখন পার্শবর্তী রাষ্ট্র হিসাবে আমরা তাদের থেকে কতটা নিরাপদ থাকতে পারবো? তারা কি ছাড় দিয়ে এগিয়ে যাবে? আর আন্তর্জাতিকভাবে আমরা কখনো এর দায় এড়াতে পারবো?

সুতরাং রোহিঙ্গারা মানুষ হিসাবে আমরা তাদের জন্য অন্তত পশুর অধিকার চাই। পশুর জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ চল্লেও রোহিঙ্গাদের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত তৈয়ার করার মতই কোনো সংগঠন নেই। ফলে আমাদের দেশের পররাষ্ট্র আর সররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগেই আন্তর্জাতিকভাবে এর একটা সুরাহা করতে হবে।

পুরো বিশ্বে একই দিনে ঈদ: একটি অসম্ভব ও ব্যর্থ চেষ্টা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ