শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

নিবন্ধন ও ইন্টারন্যাশনাল শব্দ নিয়ে অন্ধকারে প্রাইভেট মাদরাসা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

এ এস এম মাহমুদ হাসান
বিশেষ প্রতিবেদক

সম্প্রতি দেশের মাদরাসাগুলোর নাম থেকে “ক্যাডেট” ও “ইন্টারন্যাশনাল” শব্দ বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া এ নির্দেশনায় অননুমোদিতভাবে প্রতিষ্ঠিত এসব মাদরাসাকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সরকারি অনুমতি নিতে তিন মাস সময় বেঁধে দিয়ে কয়েকটি কড়া শর্ত দেওয়া হয়েছে।

হঠাৎ করে সরকারের এমন নির্দেশনায় বিপাকে পড়েছেন ভাড়া বাড়ি অথবা নিজস্ব ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত সরকারি অনুমোদনহীন শত শত প্রাইভেট মাদরাসা। এমন কড়া নির্দেশনায় সরকারি আলিয়া কারিকুলাম ভিত্তিক মাদরাসাগুলো এ সরকারি নিবন্ধনের আওতায় আসবে নাকি কওমি ঘরানার প্রাইভেট মাদরাসাগুলোও এ নির্দেশনার অন্তর্ভূক্ত হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।

তবে প্রাইভেট মাদরাসাগুলোর প্রিন্সিপালদের মতে, সরকারের হঠাৎ এ সিদ্ধান্ত মাদরাসা শিক্ষাকে শঙ্কায় ফেলবে। তারা বলছেন, কওমি মাদরাসাকে সরকারী স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবনায় কওমী মাদরাসা নিবন্ধনের যে নির্দেশনার প্রস্তাব করেছিল সরকার, তা বেফাক কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ে এসব প্রাইভেট মাদরাসাকে নিয়ন্ত্রণ করতে এমন কড়া নির্দেশনা জারি হয়েছে।

মাদরাসার নামকরণে “ইন্টারন্যাশনাল” বাদ দেওয়ার নির্দেশে সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঐশি গ্রন্থ আল কুরআন একটি আন্তর্জাতিক গ্রন্থ। আর এর শিক্ষাঙ্গন ও পাঠ্যপুস্তক ও অনুশীলনমূলক প্রতিযোগিতা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। সুতরাং হিফজুল কুরআন প্রতিষ্ঠানগুলো কেন ইন্টারন্যাশনাল নাম রাখতে পারবে না তা আমাদের বোধগম্য নয়। এটি ইসলামি ও কুরআন শিক্ষায় সরকারি পর্যায় থেকে চূড়ান্তভাবে বাধা প্রদানের শামিল।

অপর দিকে আমাদের দেশে অনেক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলও অনায়াসে ইন্টারন্যাশনাল শব্দ ব্যবহার করতে পারছে। তাতে কোনো বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়নি।

এদিকে নূরানী, নাজেরা ও হিফজুল কুরআন পর্যায়ের অনেক ইন্টারন্যাশনাল নামধারী উঠতি প্রতিষ্ঠানগুলোর নেই সরকার কিংবা কওমি মাদরাসা কৃর্তপক্ষ “বেফাকের” অনুমতিপত্র। ১৫০ থেকে ৩০০ জন ছাত্র দিয়ে পরিচালিত এসকল মাদরাসার প্রিন্সিপালদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ভবিষ্যতের টার্গেট ও সফলতার ইচ্ছা থেকেই ইন্টারন্যাশনাল নাম রাখা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে সেই মান অর্জন করতে সক্ষম না হওয়ায় বেফাকের অনুমতি বা নিবন্ধন করা হয়নি। তাছাড়া এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আগে সরকারি কোনো নিবন্ধন বা শর্ত ছিল না। তাই সরকারী অনুমোদনহীন ভাবেই ইন্টারন্যাশনাল নাম দিয়ে অনেক মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কওমী মাদরাসা ঘরানার অধিকাংশ প্রাইভেট মাদরাসা নিজস্ব অর্থায়নে ভাড়া বাসায় পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও খতিব দ্বারা ছোট পরিসরে পরিচালিত অধিকাংশ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান সরকার অনুমোদনহীন। মূলত কওমি নেসাব ও নেজামে পরিচালিত এ সব ক্যাডেট ও ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানে হিফজুল কুরআন পর্যায় পর্যন্ত জেনারেল শিক্ষায়ও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। বৈশ্বিক পরিবর্তন ও অভিভাবকদের চাহিদার প্রেক্ষিতে জেনারেল শিক্ষায় গুরুত্ব দিলেও কওমি নেজামে পরিচালিত হচ্ছে অনেক ক্যাডেট ও ইন্টারন্যাশনাল নামধারী প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান।

সরকারের এমন নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বেফাকের মহাপরিচালক অধ্যাপক যোবায়ের আহমাদ চৌধুরী আওয়ার ইসলামকে বলেন, ক্যাডেট বা ইন্টারন্যাশনাল নামে কোনো প্রতিষ্ঠানকে আর নিবন্ধন দেওয়া হবে না। আর যেসব প্রতিষ্ঠান ইতোপূর্বে ইন্টারন্যাশনাল নামে নিবন্ধন নিয়েছে তাদের নাম পরিবর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেফাকের নীতিতে ভাড়া বাড়িতে মাদরাসা পরিচালনা করা যাবে বলেও তিনি জানান।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নিবন্ধিত হয়ে এসব কওমি প্রাইভেট মাদরাসা পরিচালিত না হলে সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গহণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি মাদরাসা বেফাকে নিবন্ধিত হওয়া মানেই সরকারিভাবে নিবন্ধিত হওয়া। সুতরাং এ সকল প্রাইভেট মাদরাসা বেফাকে নিবন্ধিত হলে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নিবন্ধিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। সে ক্ষেত্রে বেফাক নিবন্ধিত মাদরাসা যদি সরকারি অনিবন্ধনের কারণে সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়, তাহলে বেফাক সেটা দেখবে ও সরকারের সাথে লড়বে। এ নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই।

‘আন্তর্জাতিক বা ইন্টারন্যাশনাল’ শব্দে নাম রাখা মাদরাসাগুলোকে এর আগে বেফাক নিবন্ধন দিলেও হঠাৎ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এমন শব্দগুলো আর গ্রহণ না করার সিদ্ধান্তে নিজেদের এক প্রকার পরাজয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, মাদরাসার নামে ইংলিশ শব্দ ব্যবহার কওমি চেতনার বিরোধী। তাই ইন্টারন্যাশনাল শব্দকে আর গ্রহণ করা হবে না। সর্বজন সমাদৃত গ্রন্থ হিসেবে কুরআনুল কারীম ও তার রক্ষণাবেক্ষণের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার কারণে “ইন্টারন্যাশনাল” শব্দটি যুক্তিসঙ্গত ও বৈধ কিনা এমন প্রশ্নে তিনি সরকারি নির্দেশনার কথা উল্লেখ করেন।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুবার পুরষ্কারপ্রাপ্ত তাহফিজুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ নেসার আহমাদ আন নাছিরী আওয়ার ইসলামকে বলেন, ঢালাওভাবে ইন্টারন্যাশনাল ব্যবহারের কারণে সরকারের এমন নির্দেশনা প্রশংসার দাবিদার। তবে ঢালাওভাবে ইন্টারন্যাশনাল ব্যবহার বন্ধে সরকারের এমন নির্দেশনারও সমালোচনা করেন তিনি। তার মতে, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই আমরা যেসকল প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি, সেসব প্রতিষ্ঠানের ইন্টারন্যাশনাল শব্দ বাদ দেওয়ার নির্দেশনা অবান্তর।

বেফাকের ইন্টারন্যাশনাল শব্দ ব্যবহারে আপত্তির ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেফাক ঢালাওভাবে ইন্টারন্যাশনাল শব্দ বাদ দেওয়ার পক্ষে থাকলে ভুল করবে। কারণ আমরা আন্তর্জাতিক মান রেখেই পরিচালনা করছি। বেফাক ইন্টারন্যাশনাল শব্দ বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেফাক থেকে এমন কোনো নির্দেশনা এখনো আমার কাছে আসেনি।

তাহসিন ইন্টারন্যাশনাল হিফজ মাদরাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ ক্বারী নাজমুল হাসান আওয়ার ইসলামকে বলেন, আমি আমার মাদরাসার ইন্টারন্যাশনাল নাম বাদ দিয়ে দেব। কারণ ইন্টারন্যাশনালের মান পুরোপুরি আমরা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হইনি। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর ইন্টারন্যাশনাল শব্দ ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের ইংলিশ মিডিয়ামগুলোরও ইন্টারন্যাশনাল শব্দ বাদ দেওয়ার আদেশ দেওয়া উচিৎ।

প্রাইভেট মাদরাসাগুলোর সরকারি নিবন্ধনের প্রজ্ঞাপন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সরকারের দূরভিসন্ধিমূলক কাজ। এটা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তাছাড়া বেফাকও এ ব্যাপারে পরিষ্কার কিছু না বলায় এটা চিন্তার বিষয়। আমরা কয়েকজনের একটি প্রতিনিধিদল বেফাকে যেয়ে দু একদিনের মধ্যে প্রাইভেট মাদরাসা নিবন্ধন সম্পর্কে সরকারের ইচ্ছা ও বেফাকের করণীয় সম্পর্কে পরিষ্কার জানতে চাইব ইংশাআল্লাহ। এরপর আপনাদের মাধ্যমে মিডিয়ায় বিষয়টি পরিষ্কার করা হবে।

বাংলাদেশে প্রাইভেট মাদরাসা নিয়ে কাজ করে ‘প্রাইভেট মাদরাসা অ্যাসোশিয়েশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে তাদের কোনো উদ্যোগ বা উদ্বেগ আছে কিনা জানতে চাইলে সংগঠনের সেক্রেটারি মুফতি নেয়ামতুল্লাহ আমীন আওয়ার ইসলামকে বলেন, সরকার প্রাইভেট মাদরাসা নিবন্ধনের যে আদেশ দিয়েছে, সেটাতে কওমি প্রাইভেট মাদরাসাকেও অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। যদিও এ আদেশে সহজে বোঝার উপায় নেই, কিন্তু এ ব্যপারে বড় বড় মাদরাসা ও বেফাক কোনো উদ্যোগী হচ্ছে না।

এই মুহূর্তে অ্যাসোশিয়েশনের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, আমরা খুব শিগগির বেফাকের সাথে এসব প্রাইভেট মাদরাসা সম্পর্কে আলোচনায় বসব। তাছাড়া অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে আমরা আলোচনা সভার আয়োজন করে স্বরাষ্টমন্ত্রীকে দাওয়াত দিয়ে প্রতিবাদ ও প্রতিকার চাইব ইংশাআল্লাহ।

প্রাইভেট মাদরাসার যে কোনো সমস্যা সমাধান ও জটিলতা নিরসনে তিনি সব প্রাইভেট মাদরাসাকে বাংলাদেশ প্রাইভেট মাদরাসা অ্যাসোশিয়েশনে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার আহবান জানান।

অস্ট্রেলিয়ান পুরুষরা শুক্রানুশূন্য; নারীদের প্রয়োজন মুসলিম পুরুষ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ