মাহমুদুল হাসান, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত আয়োজনের জন্য শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির গ্রহণ করা ঈদগাহ মাঠ প্রস্তুতকরণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
প্রতিবারই শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ জামাত আয়োজনে নেয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গত বছরের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহের চেকপোস্টে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটায় এবার সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো ঢেলে সাজানো হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হচ্ছে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানকে। ঈদ জামাতকে নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা পরিকল্পনা। কয়েকদিন আগে থেকেই ঈদগাহ ময়দানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে পুলিশ প্রশাসন।
নিরাপত্তা প্রস্তুতি তদারকির অংশ হিসেবে শুক্রবার দুপুরে পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান পিপিএম শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান পরিদর্শন করেছেন।
এ সময় পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান পিপিএম গণমাধ্যমকে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ঈদজামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে মাঠের বাইরে, মাঠের ভেতরে ও প্রবেশ পথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। মাঠের ভিতর-বাহিরে পোশাক ও সাদা পোশাকে বিপুল পরিমাণ পুলিশ বাহিনীকে সহায়তা করবে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক দল। নিরাপত্তার স্বার্থে মুসল্লিদের ছাতা বা কোনো ধরণের ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবেনা। শুধু পাতলা জায়নামাজ নিয়ে তারা আসতে পারবেন। এরই মধ্যে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পুলিশ। মুসল্লিদের মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাসী করে মাঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। সার্বিক প্রস্তুতির বিবেচনায় আমরা আশাবাদী, নির্বিঘ্নে শোলাকিয়ায় মুসল্লিগণ ঈদুল ফিতরের জামাত আদায় করতে পারবেন।
প্রস্তুতি তদারকির অংশ হিসেবে এর আগে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস মাঠ পরিদর্শন করেছেন। এ সময় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শিবির বিচিত্র বড়ুয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) উপসচিব তরফদার মো. আক্তার জামীল, পৌরমেয়র মাহমুদ পারভেজ, মাঠ কমিটির সদস্যসচিব সদরের ইউএনও মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস জানান, প্রতিবারের মত এবারও শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ-উল-ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠুভাবে জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এবারের ১৯০তম ঈদুল ফিতরের জামাতের ইমামতি করবেন ইসলাহুল মুসলিহীন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে বরাবরের মতো এবারও ঈদ-উল-ফিতরের দিন ‘শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল’ নামে ২টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে।
জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস আরো জানান, দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সুবিধার্থে এবছর মাঠের পাশেই অবস্থিত আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে থাকার সু-ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া জামাতকে ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে। এজন্য পুলিশ বাহিনীর সহস্রাধিক সদস্য, পাঁচ প্লাটুন বিজিবি ও শতাধিক র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। অন্যান্য বারের মতো এবারের ঈদ জামাতও উৎসবমুখর হবে এমন আশা প্রকাশ করে তিনি ঐতিহ্যবাহী এ ঈদ জামাতে অংশগ্রহণের জন্য দেশবাসীকে জেলা প্রশাসন, কিশোরগঞ্জের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানান।