শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই 

মাওলানা আবুল ফাতাহ মোহাম্মাদ ইয়াহইয়া: আমার চলার পথের প্রেরণা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক

১৯ মে'১৭ বাংলার এলমী আকাশ থেকে ঝরে পড়ল আরো একটি নক্ষত্র ৷ এ দিন ইন্তেকাল করেন বহু গ্রন্থ প্রণেতা, প্রতিথযশা লেখক, গবেষক, মুহাদ্দিস আল্লামা আবুল ফাতাহ মোহাম্মাদ ইয়াহইয়া৷

বাংলার ইসলামী সাহিত্য যাদের অনবদ্য লেখনীর মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়েছে, গবেষণাপূর্ণ মৌলিক রচনার গুণে ভাবগাম্ভীর্য পেয়েছে, মরহুম আবুল ফাতাহ রাহিমাহুল্লাহ তাদের অন্যতম ৷ অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বিচারব্যবস্থাসহ সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহে তিনি কলম ধরেছেন এবং তার হক আদায় করে দিয়েছেন ৷ অনন্য অসাধারণ লেখকসত্বার পাশাপাশি চতুর্মুখী চৌকান্না নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক দক্ষতার সমাহার ঘটেছিল মরহুমের মাঝে ৷

১৯৮২ সালে মালিবাগ জামিয়া থেকে দাওরায়ে হাদীস ফারেগ হয়ে দুই বছর সিলেটে শিক্ষকতার পর মালিবাগ মাদরাসায় যোগদান করেন ৷ ৮৮ থেকে ৯২ মধ্যখানের এই চার বছর বাদে কর্মজীবনের বাকি পুরোটা সময় তিনি মালিবাগ জামিয়ায় শিক্ষকতার খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন ৷ ভাইস প্রিন্সিপাল হিসাবে কিছু দিন দায়িত্ব পালন করলেও মরহুমের মূল মনযোগ ছিল শিক্ষকতা বিশেষ করে হাদীসের শিক্ষকতার প্রতি ৷ এ ছাড়়া বেফাকুল মাদিরিসিল আরাবিয়ার যুগ্মমহসচিব ছিলেন আমৃত্যু ৷ চিন্তাশীল, সচেতন, পরোপকারী ও নিরহংকারী আলেমে দ্বীন হিসাবে ওলামা মহলে বিশেষ পরিচিতি ছিল মরহুমের ৷ তবে এটা নিশ্চিত যে, এত সব গুণাবলী ও অবদানকে ছাপিয়ে মাওলানা আবুল ফাতাহ মোহাম্মাদ ইয়াহইয়া তাঁর লেখক পরিচয়েই অমর হয়ে থাকবেন বাংলার এলমী অঙ্গনে ৷

মাওলানার সাথে আমার দীর্ঘ ঘনিষ্টতা বা শিষ্যত্বের সুযোগ না হলেও মাঝে মাঝে সান্যিধ্য পাওয়ার সৌভাগ্য জুটেছে ৷ আর তাঁর কর্মের মাধ্যমে তাঁকে কিছুটা উপলব্ধির প্রয়াস পেয়েছি ৷ তাঁর কিছু বিষয় আমাকে যেমন মুগ্ধ করে, তেমনি কিছু বিষয় দেখেছি তাঁর জীবনে যা আমাকে অনুপ্রাণিত করে ৷

আব্বাজান মরহুম হযরত শায়খুল হাদীস রাহিমাহুল্লাহ ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মালিবাগ জামিয়ায় শায়খুল হাদীস হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ৷ এর মধ্যে আবার শেষ দুই বছর এহতেমামের দায়িত্বও পালন করেন ৷ মালিবাগ মাদরাসায় হযরত শায়খের এভাবে দায়িত্ব পালন করা ছিল অনেকটা অপ্রত্যাশিত ৷ ঢাকার মাদরাসাগুলো এক সময় দুই ধারায় প্রবাহিত ছিল ৷ একটি ছিল, বড় কাটারা-লালবাগ-নূরিয়ার ধারা ৷ আর অপরটি, মালিবাগ-বারিধারা-চৌধুরীপাড়ার ধারা ৷

হযরত হাফেজ্জী হুজুরের খেলাফত আন্দোলনে যখন গোটা বাংলাদেশ উত্তাল এবং তার নেতৃত্বে লালবাগ-নূরিয়া, তখন মালিবাগে কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থা ৷

হযরত হাফেজ্জীর ইরান সফরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে কিছু বিতর্ক তৈরি হয়েছিল ৷ শায়খুল হাদীস রহঃ শিয়াদের সরাসরি তাকফীর করা থেকে বিরত থাকতেন ৷ এ বিষয়টি নিয়ে শায়খুল হাদীসের সাথে যাদের রাজনৈতিক মতপার্থক্য ছিল, তারা কঠোর সমালোচনামুখর ছিলেন ৷ মালিবাগ-চৌধুরীপাড়া-বারিধারা পাড়ার অনেক বুযুর্গের আদালতেই হযরত শায়খুল হাদীস রহঃ ছিলেন আসামীর কাঠগড়ায় ৷ হযরত শায়খুল হাদীস রহঃ যখন মালিবাগ মাদরাসার শায়খুল হাদীস এবং প্রিন্সিপাল হলেন তখনও শায়খের এ বিষয়টিতে মালিবাগের শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে প্রশ্ন ছিল ৷ তবে মালিবাগের শিক্ষকগণ ছিলেন যেমন জ্ঞান ও যোগ্যতার দিক থেকে অনেক উচ্চমানের, মন-মানিসকতার দিক থেকেও অনেক উদার ৷ তারা শায়খের ছাত্র না হলেও শায়খকে আন্তরিকভাবে ভালোবেসেছিলেন ৷ ঐ সময়ে তারা শায়খের ব্যপারে আলোচিত প্রশ্নগুলো নিয়ে কথা বলতে চাইলে শায়খ রহঃ স্বানন্দে সম্মত হন এবং দীর্ঘ সময় নিয়ে তাদের সাথে মিলিত হন ৷ আলোচনায় ঐ সময়ের মালিবাগের শীর্ষ উস্তাদগণ উপস্থিত ছিলেন ৷ হযরত শায়খুল হাদীস রহঃএর কাছ থেকে মালিবাগের শিক্ষকবৃন্দ প্রশ্নগুলোর এমন সন্তোষজনক জবাব পান যে, তাতে তারা শুধু তৃপ্তই নন, বরং অভিভূত হয়ে পড়েন ৷ আমরা ঐ সময়ের মালিবাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষকদের এই অনুভূতির কথা শুনতে পেতাম ৷ তাদের কেউ কেউ ক্লাসে এমন মন্তব্যও করেছেন যে, শায়খুল হাদীস সাহেবের মাওকিফ অনেক সুচিন্তিত ও মুদাল্লাল ৷

এই কথাগুলো হযরত শায়খুল হাদীস রহঃএর ইন্তেকালের পর তাঁর স্মরণসভায় মরহুম আবুল ফাতাহ মোহাম্মাদ ইয়াহইয়া রাহিমাহুল্লাহ অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেছিলেন ৷ শায়খুল হাদীস রহঃএর সন্তান হিসাবে মরহুমের এই স্মৃতিচারণে আপ্লুত হয়েছিলাম ৷ সময়ের একটি স্পর্ষকাতর বিষয়ে এমন অকপট উচ্চারণ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় ও সত্যাশ্রয়ী মনোভাবের প্রমাণ

মরহুম আবুল ফাতাহ সাহেবের জীবন ও কর্ম থেকে বিশেষ আরেকটি প্রেরণা আমি পেয়েছি ৷ বিগত তিন যুগ ধরে বাংলাদেশের ওলামা মহলে চিন্তাশীল ও গবেষক হিসাবে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের গড়ে ওঠবার পেছনে মরহুমের অবদান অসামান্য ৷ তিনি ও তাঁর সঙ্গী-সাথীরা সত্তুরের দশকে ছাত্রদেরকে সংগঠিত করে যোগ্য হিসাবে গড়ে তুলতে নানা গঠনমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন ৷ কওমী মহলে ছাত্রদের সাংগঠনিক এ সকল তৎপরতার কঠোর সমালোচনাও তখন বিভিন্ন মহলে স্বোচ্চার ছিল ৷ কিন্তু চল্লিশ বছরের মাথায় এসে আজ জাতি তার সুফল দেখতে পাচ্ছে ৷ আসলে নিছক রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি না করে গঠনমূলক কাজ করলে ছাত্রদের সাংগঠনিক তৎপরতা ছাত্রসমাজকে অনেক ভালো কিছু উপহার দিতে পারে ৷ ছাত্রসংগঠনের চর্চা করে ষাট ও সত্তুর দশকের বামপন্থী ছাত্রনেতারা আজ বাংলাদেশের মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবি পাড়ায় দখল কায়েম করে আছে ৷ ইসলামী অঙ্গণেও বুদ্ধিবৃত্তিক সাংগঠনিক তৎপরতা সুফল দিতে পারে, মরহুম ইসহাক ফরিদী রহঃ, আবুল ফাতাহ ইয়াহইয়া রহঃ প্রমূখ আমাদের সামনে তার উজ্জল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন ৷ আমিও ব্যক্তিগতভাবে এমনতরো সাংগঠনিক কাজকেই জীবনের ব্রত হিসাবে গ্রহন করেছি ৷ আমরা ছাত্রসংগঠনকে কেবল রাজনীতি চর্চার কেন্দ্র নয়, বরং বৃহত পরিসরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিবেচনা করে থাকি এবং সে লক্ষেই নিয়ত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি ৷ মরহুম মাওলানা আবুল ফাতাহ মোহাম্মাদ ইয়াহইয়া রাহিমাহুল্লাহ এ পথে আমার প্রেরণার অন্যতম উৎস ৷

তিনি চলেগেছেন, রেখে গেছেন সাফল্যের পদচিহ্ন ৷ জ্বেলে গেছেন আলোর মশাল ৷ ভবিষ্যত প্রজন্মের হাতে হাতে সে মশাল তুলে দিতে আমরা পথ চলছি ৷ ইনশাআল্লাহ চলবো অবিরাম…

আল্লামা আবুল ফাতাহ রহ. এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ