আওয়ার ইসলাম : সম্প্রতি ৪০৮ জন বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দের বিবৃতির আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিক ও তাদের স্বাক্ষরিত বিবৃতির সমালোচনা করেছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, সম্প্রতি ৪০৮ জন তথাকথিত ‘বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দে’র বিবৃতিটি আমাদের নজরে এসেছে। যারা বিবৃতি দিয়েছেন, তাদেরকে বেশ ফলাও করে ‘বিশিষ্ট নাগরিক’ বলে সম্বোধন করা হচ্ছে; অথচ নাগরিক হিসেবে সবাই সমান।
আমরা মনে করি, এই বিভাজনের নীতি এবং শহরকেন্দ্রিক অভিজাতপ্রবণতা পরিত্যাগ করে নাগরিক আচার-আচরণে প্রত্যেককে পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, মানবিক মূল্যবোধ, তাকওয়া ও সাম্যের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
একইসাথে সুশীলসমাজকে আমরা রাষ্ট্র ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক একপেশে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে সমাজমুখী ও গণমুখী ভাবনা-চিন্তার চর্চা বাড়ানোর আহবান জানাই; তবেই আপনারা দেশের বৃহত্তর ধর্মপ্রাণ আমজনতার মনের কথা বুঝতে এবং জনগণের সাথে আপনাদের বিচ্ছিন্নতা হ্রাস করতে সক্ষম হবেন। ইসলামোফোবিয়া ও ইসলামের প্রতি ঘৃণার চর্চা পরিহার করুন; দয়া করে ওয়ার অন টেরর-এর নামে ইসলামের বিরুদ্ধে চলমান ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের হাতিয়ারে নিজেদের পরিণত করবেন না।
তারা আরো বলেন, তথাকথিত ‘বিশিষ্ট’ বিবৃতিদাতারা হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন ও কর্মকাণ্ড নিয়ে গতানুগতিক একঘেঁয়েমিপূর্ণ ভাষায় উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন।
আজকে যখন ধর্মপ্রাণ গণমানুষের অধিকার ও দাবি-দাওয়া রাষ্ট্র একের পর এক মেনে নিচ্ছে, ঠিক তখনই প্রতিহিংসাবশত হয়ে আপনারা ধর্মপ্রাণ মজলুম গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও প্রেরণার শক্তি হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মিথ্যাচার করে সরকারকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছেন। আপনারা নিজেরাও গণবিচ্ছিন্ন, সরকারকেও গণবিচ্ছিন্ন করতে চান।
আমাদের দুঃখ হয় যে, আপনারা এখনো ধর্মপ্রাণ গণমানুষের চাওয়া-পাওয়া অনুধাবন করতে পারেন নি। তথাকথিত সুশীল সমাজ সেজে বৃত্তবদ্ধ গণবিচ্ছিন্ন বুদ্ধিজীবিতার চর্চা আর কতো করবেন আপনারা? এখন আপনাদেরও সময় এসেছে, ধর্মপ্রাণ গণমানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন; অন্যথায় গণমানুষের পাশাপাশি সরকারের কাছেও আপনারা গুরুত্ব হারাবেন।
৪০৮ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি নিয়ে হৈচৈ; কী আছে বিবৃতিতে
নতুন পাঠ্যবই প্রত্যাহারে ৮৫ বিশিষ্টজনের বিবৃতি
তারা বলেন, হেফাজতে ইসলাম আর জামায়াতে ইসলামী এক নয়, বিবৃতিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে দুটোকে এক করে আপনারা জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। হেফাজতে ইসলাম ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল; সুতরাং স্বাধীনতাবিরোধী ও মানবতাবিরোধী অপকর্মের সাথে হেফাজতে ইসলামের কোনো সম্পর্ক থাকার যৌক্তিকতা নেই। একাত্তরে পাকিস্তানি ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদকে আমরা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যদিয়ে পরাজিত করেছি, সুতরাং ‘পাকিস্তানি ভাবাদর্শ’ এখন শুধুই বিস্মৃত অতীত।
আমরা এখন নয়া আধিপত্যবাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদের হুমকির সম্মুখীন। আমাদেরকে পানিতে মারা হচ্ছে, সীমান্তে গুলি করে মারা হচ্ছে, আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও অনধিকার হস্তক্ষেপে আমাদের দেশকে করদরাজ্যে পরিণত করার অপচেষ্টা চলছে। অথচ এসব ব্যাপারে আপনাদের কোনো উচ্চবাচ্য নেই! এই ব্রাহ্মণ্যবাদ ও নয়া আধিপত্যবাদ এবং এর অনুগত এদেশীয় পেইড এজেন্ট ইসলামবিদ্বেষী সেকুলার অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের গণলড়াই অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
-এআরকে