মাওলানা মাহফুজুল হক। দেশের সনামধন্য দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার প্রিন্সিপাল। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার যুগ্ম-মহাসচিব। শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর সুযোগ্য পুত্র কাছ থেকে দেখেছেন স্বীকৃতি আদায়ে মহান আন্দোলন ও সংগ্রাম। এখন যুক্ত আছেন কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে।
১১ এপ্রিল গণভবনে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উলামাদের ঐতিহাসিক বৈঠক সঞ্চালনায় ছিলেন তিনি। স্বীকৃতি, গণভবনের বৈঠক ও স্বীকৃতি বাস্তবায়নে উলামাদের পরিকল্পনা ইত্যাদি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে। আলাপচারিতায় তার সঙ্গে ছিলেন আতাউর রহমান খসরু।
আওয়ার ইসলাম : গণভবনে উলামায়ে কেরামের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক আপনার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এমন ঐতিহাসিক প্রোগ্রাম পরিচালনার পর আপনার অনুভূতি কী?
মাওলানা মাহফুজুল হক : আল হামদুলিল্লাহ! এমন বা এর চেয়ে বড় অনুষ্ঠান পরিচালনার সুযোগ পূর্বেও হয়েছে। তাই বিশেষ কোনো অনুভূতি নেই। তবুও ঐতিহাসিক মুহূর্তের সঙ্গী হওয়ার আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করছি।
আওয়ার ইসলাম : প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় কওমি উলামা ও ছাত্র-শিক্ষকদের প্রত্যাশা কতোটা পূরণ হলো বলে আপনি মনে করছেন?
মাওলানা মাহফুজুল হক : ঘোষণায় বিস্তারিত কিছু নেই। ঘোষণায় আছে মৌলিক কথা। আগামীতে যে প্রজ্ঞাপন জারি হবে তা হাতে আসার পর এবং আমাদের কাজের সুযোগ সুবিধার বিষয়গুলো সামনে আসার পর প্রত্যাশা পূরণের বিষয়টা স্পষ্ট হবে।
আওয়ার ইসলাম : এ পর্যন্ত যা হলো তাতে কতোটা আশা দেখছেন?
মাওলানা মাহফুজুল হক : এ পর্যন্ত যা হয়েছে তাতে আমরা খুশি এবং আশাবাদী। শঙ্কাও রয়ে গেছে। তবে বাস্তবতা হলো, আমাদের ভেতর খুব আন্তরিকতাপূর্ণ ঐক্য এখনো তৈরি হয় নি বা দেখা যা্চ্ছে না। আমরা এখনো পূর্ণ ঐক্যমত্যে উপনীত হতে পারি নি।
সবকিছুর পরও আমরা আশাবাদী আমরা কাঙ্ক্ষিত সনদের মান এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্জন করতে পারবো।
আওয়ার ইসলাম : এখনো কী এমন কোনো মতভিন্নতা জায়গা রয়েছে যা বাধা হতে পারে?
মাওলানা মাহফুজুল হক : মতভিন্নতার দিক বলতে বেফাক ও অন্যান্য বোর্ডের মাঝে বোঝাপড়ার গ্যাপ। নিজের বোর্ডের চিন্তার উর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থ অগ্রাধিকার দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
আওয়ার ইসলাম : ২০০৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া স্বীকৃতির যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার সাথে এবারের ঘোষণার গুণগত কোনো পার্থক্য আছে?
মাওলানা মাহফুজুল হক : হ্যা, পার্থক্য তো আছেই। গতবারের ঘোষণাটি ছিলো সনদের স্বীকৃতি দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত। আর এবার সরাসরি স্বীকৃতি প্রদানের ঘোষণা। গতবারের বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটা অনেক ত্রুটিপূর্ণ ছিলো। যার কারণে বাস্তবায়েনের কোনো প্রক্রিয়াতেই শেষ পর্যন্ত যাওয়া যায় নি। স্বীকৃতি বাস্তবায়নের জন্য টাস্কফোর্স নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় শিক্ষা সচিবকে। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তাকেও কমিটিতে রাখা হয়। পরবর্তীতে দেখা গেলো যেভাবে আলোচনা হয়েছিলো টাস্কফোর্সের রেজুলেশনে সেভাবে আসছে না। এমন অনেক জটিলতা ছিলো। তাই নীতিগত ঘোষণা বাস্তবতার মুখ দেখে নি।
আর গতবারের ঘোষণাটি এসেছিলো একদম শেষ মুহূর্তে। এরপর ঘোষণা বাস্তবায়নের পর্যাপ্ত সময় ছিলো না। কিন্তু এবার সে সময়টুকু আছে।
আওয়ার ইসলাম : এবারের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটা ঠিক কেমন হবে?
মাওলানা মাহফুজুল হক : এবার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘স্বীকৃতি বাস্তবায়ন কমিটি’ একটি কমিটিতে নির্বাহী ক্ষমতা দেয়া হবে। তারা স্বীকৃতি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এ কমিটি সম্পূর্ণ উলামায়ে কেরাম দ্বারা গঠিত হবে। আমরা যদি নিজেদের মাধ্যমে সুন্দর একটি বোঝাপড়া করতে পারি তবে প্রক্রিয়াটি খুব দ্রুত এগিয়ে যাবে।
আওয়ার ইসলাম : এখন আপনাদের পরিকল্পনা কী?
মাওলানা মাহফুজুল হক : আমাদের মূল পরিকল্পনা দ্রুততম সময়ে ঘোষণার বাস্তবায়ন। আজও (১২ এপ্রিল’১৭) আমরা বসেছিলাম। ছয় বোর্ডের দুই বোর্ডের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলো। বাকি চার বোর্ডের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। তাদের কারো কারো সমস্যা ছিলো। তাদের পরস্পরের যোগাযোগ ভালো হওয়ায় বাকিরাও আসে নি।
আওয়ার ইসলাম : আজকের বৈঠকে কী কী সিদ্ধান্ত হয়েছে?
মাওলানা মাহফুজুল হক : আজকে আমরা দুটো প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেহেতু সব বোর্ডের সদস্য উপস্থিত ছিলো না, তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া যায় নি। সিদ্ধান্ত দুটো হলো, একই প্রশ্নে নিজ নিজ বোর্ডের অধীনে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিবে। এবং সনদ ইস্যু করার জন্য একটি নামের ব্যাপারে উপস্থিতরা একমত হয়েছে।
আওয়ার ইসলাম : গণভবনের অনুষ্ঠানে একমাত্র আপনি শেষ মুহূর্তে শায়খুল হাদিস রহ. কে স্মরণ করেছেন। এ ছাড়া আর কেউ আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে মাওলানা আবদুল জব্বার রহ.সহ অতীতে যারা অসামান্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের স্মরণ করলেন না। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
মাওলানা মাহফুজুল হক : মূল অনুষ্ঠানটিই শুরু হয়েছে কিছুটা দেরি করে। হাটহাজারি হজরতের সেখানে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় অনুষ্ঠান শুরু করতে দেরি হয়েছে। তাছাড়া পূর্ব থেকেই আমাদের বলা হয়েছিলো বক্তৃতা সংক্ষিপ্ত করতে। পরিস্থিতির কারণেই অনেক সময় সবকিছু স্মরণে থাকে না।
কিন্তু আমি মনে করি, মুখে না বললেও সবার অন্তরে অতীতে যারা অবদান রেখেছেন তাদের কথা ছিলো।
আমি একজন নয়, দুইজন মুরব্বির নাম নিয়েছি। শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. ও বায়তুল মোকাররমের খতিব উবায়দুল হক রহ. এর নাম উল্লেখ করেছি। তবে আমি মনে করছি, আবদুল জব্বার রহ. এর নামটিও উল্লেখ করলে বিষয়টি পূর্ণতা পেতো। হ্যাঁ, দুটো নাম উল্লেখ করার পর আমি বলেছিলাম ‘এছাড়াও অতীতে যারা অবদান রেখেছেন তাদেরও আমরা স্মরণ করছি।’
আওয়ার ইসলাম : মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ তার সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বৃহত্তর ময়মনসিং’ অঞ্চলের মাদরাসা বোর্ডের সদর ও বেফাকের নায়েবে সদর মাওলানা আনোয়ার শাহ সাহেবকে প্রথমে মঞ্চে না নেয়া এবং তার জন্য সময়ের বরাদ্দ না থাকায় কেউ কেউ মনক্ষুণ্ন হয়েছেন। এমন হলো কেনো?
মাওলানা মাহফুজুল হক : এটা একটি ভুল বোঝাবুঝি থেকে হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মঞ্চে কারা বসবে এবং কারা কথা বলবে তা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষের লোকজনই ঠিক করে রেখেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব ঠিক করেছিলেন কে কে মঞ্চে বসবে এবং বক্তাদের তালিকাও তিনি আমাদের দিয়েছেন। সুতরাং এখানে আমাদের খুব বেশি কিছু করার সুযোগ ছিলো না।
আমরা প্রথম থেকে চেষ্টা করেছি, শাহ সাহেবকে মঞ্চে নেয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত সেটা হয়েছে। কিন্তু বক্তৃতার জন্য সময় চাওয়া হলে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব বলেছিলেন, সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি এতো দীর্ঘ সময় অনুষ্ঠান হয় না। অনুষ্ঠান অনেক দীর্ঘ হয়েছে আর কাউকে নতুন করে সুযোগ দেয়া যাচ্ছে না।
আমাদের ইচ্ছে, আন্তরিকতা ও চেষ্টা কোনোটারই অভাব ছিলো না।
কওমি স্বীকৃতিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি: অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ
কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি একটি সময়োপযোগী ও ঐতিহাসিক পদক্ষেপ: মাওলানা শহীদুল ইসলাম ফারুকী