শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার

বড় স্বপ্ন দেখো ঐক্য প্রয়াসী হও: দেওবন্দে মাওলানা মাহফুজুল হক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

mahfujul_hakহাওলাদার জহিরুল ইসলাম: ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দীনি বিদ্যাপীঠ জামিয়া রহমানিয়া'র মুহতামিম ও বেফাকের যুগ্ম মহাসচিব হজরত মাওলানা মাহফুজুল হক সাহেব বেফাকের শুরা সদস্য মাওলানা রশিদ আহমদসহ ছয়নের একটি কাফেলা নিয়ে গতকাল দুপুরে দারুল উলুম দেওবন্দে আসেন৷

রাতে 'জামিয়া রহমানিয়া'র ছাত্রদের উদ্যোগে একটি বিশেষ মজলিসের আয়োজন করা হয়৷ এতে মাওলানা মাহফুজুল হক বাঙালী ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বয়ান পেশ করেন৷ হজরত শুরুতে এবারের ভারত সফরের উদ্দেশ্য বর্ণানা করে বলেন, ‘আমরা গত ১৬মার্চ কলকাতায় আসি৷ পরদিন হাওড়ায় একটি মাদরাসার প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে বোম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হই৷ এখানে শিক্ষা বিষয়ক আন্তর্জাতিক ইসলামী সংস্থা 'দীনিয়াতে'র বিভিন্ন সেমিনারে অংশ নেই৷

দীনিয়াত মূলত স্কুলে পড়ুয়া মুসলিম শিশুদের নিয়ে কাজ করছে৷ শিশুরা মাদরাসায় না পড়েও কীভাবে দীনের মৌলিক শিক্ষাটা পেতে পারে এবং দীনি চেতনায় নিজেকে গড়ে তুলতে পারে সে বিষয়ে অভিনব পদ্ধতিতে কাজ করে যাচ্ছে৷ দীনিয়াতের কাজগুলো খুব কাছ থেকে দেখা, কর্ম কৌশল উপলব্ধি করতেই আমাদের এবারের ভারত সফর৷’

তিনি বলেন, 'শুধু ভারতেই নয় পৃথিবীর নানা দেশে দীনিয়াত প্রণীত শিক্ষা সিলেবাসটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে৷ ভারতে দীনিয়াতের অধীনে প্রায় ১৪হাজার 'মুনাজ্জাম মকতব' পরিচালিত হচ্ছে৷ যেখানে আনুমানিক ১৫লক্ষ মুসলিম শিশু পড়া লেখা করছে৷ এই অভিনব পদ্ধতিটি বাংলাদেশেও চালু করতে চাই৷ এখানে যে ব্যাপক খেদমতটি হবে তা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতে খুবই জরুরী৷’

তিনি বলেন, ‘আমাদের আকাবির আসলাফ সর্বদাই দীনের ব্যাপক প্রসার ও নতুন প্রজন্ম কী করে দীনি চেতনায় লালিত হতে পারে তা নিয়ে কাজ করেছেন৷ বাংলাদেশে হজরত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ. দেশের ৬৮হাজার গ্রামে ৬৮হাজার মকতব প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন৷ হজরত শায়খুল হাদিস রহ.ও শেষ বয়সে এসে এ বিষয়ে খুব গুরুত্ব দিয়েছিলেন৷ সেই ধারাবাহিকতায় নতুন প্রজন্মকে নিয়ে আমাদেরও ভাবতে হবে৷ তোমরা তরুণরাও এ ব্যাপারে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারো৷’

ছাত্রদের উদ্দেশ্যে দেয়া বয়ানে মাওলানা মাহফুজুল হক আরো বলেন, আমি তরুণ কাসেমিদেরকে খুব গুরত্বের সাথে তিনটি কথা বলতে চাই৷

১৷ তোমরা দারুল উলুম দেওবন্দের মতো বিশ্বখ্যাত দীনি মারকাযে পড়ার সুযোগ পেয়েছো৷ এটা অনেক বড় নেয়ামত৷ নিজের ভবিষ্যতকে উজ্জ্বল করতে তোমারা পড়া লেখার পাশাপাশি দেওবন্দের উস্তাদদের সঙ্গে একটা ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক গড়ে তুলবে৷ সবার সাথে না হলেও অন্তত একজন উস্তাদের সাথে অবশ্যই গভীর ইলমি-এসলাহি সম্পর্ক রাখবে৷ এটার সুফল পাবে কর্মজীবনে৷

২৷ যেহেতু আমাদের আকাবিরে দেওবন্দের সমস্ত কিতাব, ইলমি যখিরা উর্দু ভাষয় রচিত তাই এখানে আসার পর উর্দু ভাষাটাকে অবশ্যই আয়ত্ব করে নিবে৷ উর্দুতে পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করে নেবে৷ নিয়মিত উর্দুতেই কথা বলা৷ দৈনিক উর্দু পত্রিকা পড়া যেতে পারে৷ শায়খুল হাদিস হজরত আল্লামা সাঈগ আহমদ পালপনপুরী দামাত বারকাতুহুমও বিষয়টির প্রতি গুরত্ব আরোপ করেছেন৷ তবে মাতৃভাষার চর্চাটা করবে সময় সুযোগ মতো৷ মাতৃভাষা চর্চার কথা তো নতুন করে বলবার কিছু নেই৷

৩৷ সব সময় বড় স্বপ্ন দেখবে৷ দেশ, জাতি, ইসামকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখবে৷ আর মনে রাখবে বড় স্বপ্ন বাস্তবায়নে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই৷ বাংলাদেশসহ পৃথিবীজুড়ে মুসলামনাদের মধ্যে যে বিভক্তি বিরাজমান তার অবসান ঘটানো সময়ের দাবী৷ বিশেষত বাংলাদেশি আলেম সমাজের মাঝে যে এফতেরাক-বিভক্তি মনোভাব চলছে এ অবস্থার পরিবর্তন করতে তোমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারো৷ দেশে থাকতে হয়তো নানা মত, নানা দলে তোমরা যুক্ত ছিলে৷ কিন্তু দেওবন্দে এসে কিন্তু সেগুলো সহজেই ভুলে যাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে৷ বড় প্রতিষ্ঠানে পড়লে তো দিলও বড় হওয়া চাই৷ দেওবন্দের থেকে বড় দীনি মারকাজ তো পৃথিবীতে আর নেই৷

দেশের মাদরাসাগুলোর পরিবেশ পরস্থিতি অনেক সময় তরুণদেরকে ঐক্যবদ্ধ হবার সুযোগ দেয় না৷ কিন্তু এখানে তো আর সেই পরিবেশ পরিস্থিতি নেই৷ এখানে পরস্পরের সাথে সুন্দর একটা ভ্রাতৃত্ব বন্ধন তৈরী করার সুযোগটা কাজে লাগাবে৷ দেশ-জাতি-ইসলামের স্বার্থেই তেমাদের ঐক্যের দীক্ষা নিতে হবে৷ দেওবন্দে এসে সবাইকে দল মত ভুলে যাওয়া চাই৷ দেওবন্দ আমাদেরকে ঐক্যের প্রেরণা হোক৷’

দেওবন্দের 'বাবুজ্জাহেরে' অনুষ্ঠিত ওই মজলিসে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ছাড়াও কলকাতা, ত্রিপুরা ও আসামের শিক্ষার্থীরাও ব্যাপকভাবে অংশ নেয়৷ রাত সাড়ে এগারোটার দিকে দোয়ার মাধ্যমে মজলিসের সমাপ্তি হয়৷

 

উল্লেখ্য, মাওলানা মাহফুজুল হকের কাফেলাটি আজ সকালে আকাবিরদের স্মৃতি বিজড়িত নানুতা, থানা ভবন, জালালাবাদ, গাঙ্গুহসহ বেশ কিছু স্থান জিয়ারতের উদ্দেশ্যে দেওবন্দকে বিদায় জানিয়েছেন৷ বিকেলে সাহারানপুরে মাজেহেরে উলুম মাদরাসায় পৌঁছুবেন৷ রাতের ট্রেনে কলকাতা রওনা হবেন৷ ২৭ তারিখে সেখানে একটি ইসলামি সেমিনারে অংশ নিয়ে ২৮মার্চ ঢাকায় পৌঁছুবার কথা রয়েছে৷

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ