কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক
১. পৃথিবীর কোন দেশে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়?
– বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।
২. বিশ্ব ইজতেমার মূল উদ্দেশ্য কি?
– বিশ্ব ইজতেমার মূল উদ্দেশ্য হলো ধর্মীয় কাজের জন্য মুসলমানদের একত্রিত করা।
৩. ইজতেমা শব্দটি কোন ভাষার?
– ইজতেমা শব্দটি আরবি ভাষা।
৪. ইজতেমা বলতে কী বুঝায়?
– ইজতেমা বলতে ধর্মীয় কাজে একত্রিত বা সমবেত হওয়াকে বুঝায়।
৫. বিশ্ব ইজতেমার দায়িত্ব ও কর্তব্য কী?
– বিশ্বের আলেম-ওলামাদের কাছ থেকে কুরআন-হাদিসের বয়ান শুনা ও তা বিশ্বের দরবারে পৌঁছিয়ে দেওয়া।
৬. তাবলীগ শব্দের অর্থ কী?
– তাবলীগ শব্দের অর্থ হলো প্রচার বা প্রসার।
৭. তাবলীগ বলতে কী বুঝায়?
– তাবলীগ বলতে ইসলাম ধর্মের কর্মকাণ্ডের প্রচার ও প্রসারকেই বুঝায়।
৮. চিল্লা বলতে কি বুঝায়?
– চিল্লা বলতে ১৪/১৫ জন মুবাল্লিগ ঈমান ও আমলের কাজে ৪০ দিন যে কোন মসজিদে ইবাদতে মগ্ন থাকাকে বুঝায়।
৯. একটি চিল্লায় কত জন মুবাল্লিগ অংশ নেয়?
– একটি চিল্লায় ১৪ থেকে ১৫ জন এর মত মুবাল্লিগ অংশ নেয়।
১০. এক চিল্লা কত দিনে হয় ?
– এক চিল্লা ৪০ দিনে হয়।
১১. চিল্লাদানকারীরা কী কাজে নিয়োজিত থাকেন ?
– চিল্লাদানকারীরা বিশ্বাবাসীর নিকট তাওহীদ, রিসালাত, আখেরাতসহ ইমান আমলের দাওয়াতের কাজে নিয়োজিত থাকেন।
১২. আখেরী মোনাজাতের উদ্দেশ্য কি?
– আখেরী মুনাজাত এর উদ্দেশ্য হলো নিজ, পরিবার, দেশ, জাতী ও বিশ্ব শান্তির জন্য বিশেষভাবে দো’আ করা।
১৩. তাবলীগ জামাতের ১ম উদ্যোক্তা মুরব্বী কে?
– তাবলীগ জামাতের প্রথম উদ্যোক্তা মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্দলবী রহ.।
১৪. মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্দলবীর রহ.-এর জন্ম স্থান কোথায়?
– মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্দলবীর রাহঃ এর জন্ম স্থান ভারতের দিল্লীতে।
১৫. তাবলীগ জামাতের ১ম সূচনা হয় কোন দেশে?
– তাবলীগ জামাতের ১ম সূচনা হয় ভারতের দিল্লীতে।
১৬. মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্দলবী রহ. কত সাল হতে এই মহতি কাজের দাওয়াত শুরু করেন?
– মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্দলবী রহ. হিজরী ১৩৪৫ সন হতে এই মহতি কাজের দাওয়াত শুরু করেন।
১৭. মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্দলবী রহ. কত সালে ইন্তেকাল করেন?
– মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্দলবী রহ. ১৯৪৪ ইংরেজী সনে ইন্তেকাল করেন।
১৮. বাংলাদেশে কত সাল হতে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ?
– বাংলাদেশে ১৯৪৬ইং সন হতে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ।
১৯. সর্ব প্রথম বাংলাদেশের কোথায় বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়?
– সর্ব প্রথম ঢাকার কাকরাইলস্থ প্রাচীন তাবলীগ মসজিদে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে।
২০. বাংলাদেশ ২য় বিশ্ব ইজতেমা কোথায় অনুষ্ঠিত হয়?
– বাংলাদেশ ২য় বিশ্ব ইজতেমা চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালে।
২১. বাংলাদেশে ৩য় বিশ্ব ইজতেমা কোথায় অনুষ্ঠিত হয়?
– বাংলাদেশে ৩য় বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জে ১৯৫৮ সালে।
২২. বাংলাদেশে ৪র্থ ইজতেমা কোথায় অনুষ্ঠিত হয় এবং কত সালে?
– বাংলাদেশে ৪র্থ ইজতেমা গাজীপুর জেলার টঙ্গীস্থ পাগারে ১৯৬৬ইং সনে।
২৩. বর্তমানে বাংলাদেশে নিয়মিত বিশ্ব ইজতেমা কোথায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে?
– বর্তমানে বাংলাদেশে নিয়মিতভাবে গাজীপুর জেলার টঙ্গীস্থ তুরাগনদী তীরে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৯৬৭ইং সন হতে।
২৪. ১৯৬৬ সনে বিশ্ব ইজতেমায় কতজন মুসল্লী অংশগ্রহণ করেছিল?
– ১৯৬৬ সনে বিশ্ব ইজতেমায় মাত্র ৪৫০০ জন মুসল্লি অংশগ্রহণ করেছিল।
২৫. ১৯৬৬ সালে মুসল্লীদের পানির জন্য কতটি হস্ত চালিত নলকূপ বসানো হয়েছিল?
– ১৯৬৬ সালে মুসল্লীদের পানির জন্য মাত্র ১০টি হস্ত চালিত নলকূপ বসানো হয়েছিল।
২৬. বর্তমানে ইজতেমা ময়দানে অঢেল পানি সরবরাহের উৎস কি?
– ৪টির অধিক বিদ্যুৎ চালিত গভীর প্রডাকশন নলকূপ।
২৭. বর্তমানে বিশ্বে কতটি জামাত তাবলীগ জামাতে মেহেনত করে যাচ্ছে?
– প্রায় ২০০ শতের অধিক জামাত।
২৮. বর্হিঃবিশ্বে কতটি দেশ তাবলীগ জামাতে মেহেনত করে যাচ্ছে?
– প্রায় ১১২টি দেশ।
২৯. বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের সদর দপ্তর কোথায়?
– বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের সদর দপ্তর ঢাকা শহরের কাকরাইলস্থ তাবলীগ মসজিদে।
৩০. বিশ্ব ইজতেমায় মুসলীম মুসল্লী ছাড়া অন্য কোন ধমর্মের লোকেরা অংশগ্রহণ করে?
– হ্যাঁ, প্রায় ২০০ শত সনাতন ধর্মের লোকেরা অংশ গ্রহণ করে থাকে (জরিপ অনুযায়ী)।
৩১. তাবলীগ জামাতে কি কি পরিভাষা ব্যবহার করা হয়?
– তাসকিল, জুড়নেওয়ালে জামাত, গাশ্ত, চিল্লা, সাল, তালিম, বয়ান, এলান, আমির, মেহনত, জিম্মাদার, জামাত, সাথী, মামুর, মোতাকাল্লেম, হযরতজী, উসুলি ইত্যাদি।
৩২. ঢাকা শহরে কাকরাইলস্থ তাবলীগ মসজিদের অপর নাম কি?
– জিন্দা মসজিদ।
৩৩. কাকরাইল মসজিদকে জিন্দা মসজিদ বলা হয় কেন?
– প্রায় ৪০ বছর যাবৎ এই মসজিদের কোন তালা-চাবি নেই, সর্বক্ষণিক মুসল্লীরা আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকে। যার ফলে দরজা বন্ধের প্রয়োজন হয় না বলেই সর্বদা জিন্দা।
৩৪. বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লী কারা?
– বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লী সমগ্র বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা।
৩৫. বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লীদের পার্থক্য কিরূপ?
– কোন পার্থক্য বা ভেদাভেদ নেই, আমির ফকির সকলেই এখানে সমান সমান।
৩৬. বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের সহজ-সরল খাবার কি?
– সাধারণত ডাল খিচুরি।
৩৭. বিশ্ব ইজতেমায় পত্রে কাওকে দাওয়াত দেয়া হয় কি?
– মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় সরকার প্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান, কাওকেই দাওয়াত দিতে হয় না, ধর্মপ্রাণ মুসলমারা আল্লাহর দাওয়াতে সকলে নিজ নিজ দায়িত্বে অংশগ্রহণ করে থাকেন।
৩৮. বিশ্ব ইজতেমায় মুনাজাতের নির্দিষ্ট সময় কখন?
– সকাল ১০টা হতে জোহরের আগ পর্যন্ত।
৩৯. বিশ্ব ইজতেমায় আগত অধিক সংখ্যক বিদেশী মেহমান কোন্ দেশের?
– পাকিস্তানের।
৪০. বিশ্ব ইজতেমায় প্যান্ডেল নির্মাণের শ্রমিক কারা এবং কত দিন পর্যন্ত সময় লাগে?
– ধর্মপ্রাণ সকল শ্রেণীর স্বেচ্ছা শ্রমিক প্রায় ৩ মাসের অধিক সময় লাগে।
৪১. বিশ্ব ইজতেমায় অর্থ যোগানদারী কারা?
– নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশী-বিদেশী ধর্মপ্রাণ বিত্তশালীরা।
৪২. বিশ্ব ইজতেমার সময়কাল কত?
– মাত্র ৩ দিন। তবে দুই পর্বে ৬ দিন।
৪৩. বিশ্ব ইজতেমা আমাদেরকে কি শিক্ষা দেয়?
– বাদশা, আমির, ফকির সকলেই সমান, সকলেই আল্লাহর বান্দা।
৪৪. বিশ্ব ইজতেমায় যোগদানকারী মুসল্লীগণের বয়সের তারতম্য কিরূপ?
– পূর্ণবয়স্ক প্রায় ৩৫% মধ্যম বয়স্ক ৩৮% কিশোর-যুব প্রায় ২২% পর্দানশীল নারী প্রায় ৫%।
৪৫. বিশ্ব ইজতেমা স্থল ছাড়া আগত মুসল্লিরা আর কোথায় মুনাজাতে অংশ গ্রহণকরে ?
– বিশ্ব ইজতেমা স্থল হতে ঢাকামুখী বিমানবন্দর ও খিলক্ষেত পর্যন্ত রাস্তা, ঘরের ছাদ, বারান্দা, রেলাইনের উপর পর্যন্ত প্রায় ৩ লক্ষের অধিক মুসল্লী মুনাজাতে অংশগ্রহণ করে।
বিশ্ব ইজতেমাস্থল হতে পশ্চিমে বাইপাইল পর্যন্ত ঘরের ছাদ, বাস, লরী, গাছের উপর পর্যন্ত প্রায় ৫ লক্ষ লোক মুনাজাতে অংশগ্রহণ করে।
তথ্য সহযোগিতায় : ইজতেমা বিষয়ে বিভিন্ন সময়কার পেপার পত্রিকা ও সাময়িকী।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক; মাসিক দা’ওয়াতুল হক
আরআর