শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

ঈসা আ. ক্রশবিদ্ধ হননি; শান্তির বার্তা নিয়ে আবার আসবেন পৃথিবীতে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

isa2দিদার শফিক: হযরত ঈসা আ.। একজন নবি ও রাসুল। বনি ইসরাইলের কাছে তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন।বনি ইসরাইল তাকে নবি হিসেবে মেনে না নিয়ে অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়েছিল। আর কিছু মানুষ তার ভক্ত ও অনুগত ছিল।কিন্তু তারা সংখ্যায় ছিল খুবই সীমিত। ইতিহাসে তারা হাওয়ারিন নামে খ্যাত। প্রসিদ্ধ চারটি আসমানি গ্রন্থের একটি তার উপর অবতীর্ণ হয়। তার উপর অবতীর্ণ কিতাবের নাম ‘ইনজিল’। ঈসা আ.এর জন্ম, পৃথিবী ছেড়ে আসমানে গমন, আবার দুনিয়ায় ফেরা, ইমাম মাহদির নেতৃত্বে শরিয়তে মুহাম্মাদির অনুসরণে অশান্তিময় পৃথিবীকে শান্ত করে তোলা এসব কিছুর বিচারে হযরত ঈসা. এর জীবনদর্শন সম্পর্কে অবগতি খুবই গুরুত্বব।

জন্ম আল্লাহ তার অসীম ক্ষমতার নিদর্শন স্বরূপ হযরত আদম আ. কে মা-বাবা ব্যতীতই নিজ কুদরতে সৃষ্টি করেছেন। আর হযরত ঈসা আ. কে বাবা ছাড়া কুমারী মায়ের মাধ্যমে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ বুঝিয়েছেন তিনি ক্ষমতাধর। তিনি সব কিছুর স্রষ্টা। কোন উপকরণ ছাড়াই তিনি যা ইচ্ছে তা সৃষ্টি করতে পারেন। আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও সৃষ্টিকর্মের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হযরত ঈসা আ.। তার মায়ের নাম মারয়াম। হাদিসের বর্ণনা মতে জান্নাতে চারজন নারী সম্রাজ্ঞী আছেন। তাদের একজন ঈসা আ. এর মা মারয়াম। এ মহীয়ষী নারীর গর্ভেই আল্লাহর আদেশের মাধ্যমে ঈসা আ. এর জন্ম। পবিত্র কুরআনে তার জন্মের বৃত্তান্ত এসেছে এভাবে-

(হে মুহাম্মাদ!) ‘আপনি এই কিতাবে মারয়ামের কথা বর্ণনা করুন। যখন সে তার পরিবারের লোকজন হতে পৃথক হয়ে পূর্বদিকে একস্থানে আশ্রয় নিল’ (মারিয়াম ১৬)। ‘অতঃপর সে তাদের থেকে আড়াল করার জন্য পর্দা টাঙিয়ে নিল। অতঃপর আমি তার নিকটে আমাদের ‘রূহ’ (অর্থাৎ জিব্রীলকে) প্রেরণ করলাম। সে তার কাছে গিয়ে পূর্ণাঙ্গ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল’ (১৭)। ‘মারয়াম বলল, আমি তোমার থেকে করুণাময় আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যদি তুমি আল্লাহভীরু হও’ (১৮)। ‘সে বলল, আমি তো কেবল তোমার প্রভুর প্রেরিত।

এজন্য যে, আমি তোমাকে একটি পবিত্র পুত্র সন্তান দান করে যাব’ (১৯)। ‘মারিয়াম বলল, কিভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে? অথচ কোন মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণী নই’ (২০)। ‘সে বলল, এভাবেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলেছেন, এটা আমার জন্য সহজ ব্যাপার এবং আমি তাকে (ঈসাকে) মানবজাতির জন্য একটা নিদর্শন ও আমার পক্ষ হতে বিশেষ অনুগ্রহরূপে পয়দা করতে চাই। তাছাড়া এটা (পূর্ব থেকেই) নির্ধারিত বিষয়’ (মারিয়াম ১৯/১৬-২১)। অতঃপর জিব্রীল মারিয়ামের মুখে অথবা তাঁর পরিহিত জামায় ফুঁক মারলেন এবং তাতেই তাঁর গর্ভ সঞ্চার হ’ল (আম্বিয়া ২১/৯১; তাহরীম ৬৬/১২)। অন্য আয়াতে একে ‘আল্লাহর কলেমা’ (بِكَلِمَةٍ مِنْهُ) অর্থাৎ ‘কুন্’ (হও) বলা হয়েছে (আলে ইমরান ৩/৪৫)।

অতঃপর আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর মারয়াম গর্ভে সন্তান ধারণ করল এবং তৎসহ একটু দূরবর্তী স্থানে চলে গেল’ (মারিয়াম ২২)। ‘এমতাবস্থায় প্রসব বেদনা তাকে একটি খর্জুর বৃক্ষের মূলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। তখন সে বলল, হায়! আমি যদি এর আগেই মারা যেতাম এবং আমি যদি মানুষের স্মৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতাম’ (২৩)। ‘এমন সময় ফেরেশতা তাকে নিম্নদেশ থেকে (অর্থাৎ পার্শ্ববর্তী নিম্নভূমি থেকে) আওয়ায দিয়ে বলল, তুমি দুঃখ করো না। তোমার পালনকর্তা তোমার পাদদেশে একটি ঝর্ণাধারা সৃষ্টি করেছেন’ (২৪)। ‘আর তুমি খর্জুর বৃক্ষের কান্ড ধরে নিজের দিকে নাড়া দাও, তা থেকে তোমার দিকে সুপক্ক খেজুর পতিত হবে’ (২৫)। ‘তুমি আহার কর, পান কর এং স্বীয় চক্ষু শীতল কর। আর যদি কোন মানুষকে তুমি দেখ, তবে তাকে বলে দিয়ো যে, আমি দয়াময় আল্লাহর জন্য ছিয়াম পালনের মানত করেছি। সুতরাং আমি আজ কারু সাথে কোন মতেই কথা বলব না’ (মারিয়াম ১৯/২২-২৬)।

‘অতঃপর মারয়াম তার সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হ’ল। তারা বলল, হে মারিয়াম! তুমি একটা আশ্চর্য বস্ত্ত নিয়ে এসেছ’। ‘হে হারূণের বোন! তোমার পিতা কোন অসৎ ব্যক্তি ছিলেন না কিংবা তোমার মাতাও কোন ব্যভিচারিণী মহিলা ছিলেন না’ (মারয়াম ১৯/২৭-২৮)। কওমের লোকদের এ ধরনের  কথা ও সন্দেহের জওয়াবে নিজে কিছু না বলে বিবি মারিয়াম তার সদ্য প্রসূত সন্তানের দিকে ইশারা করলেন। অর্থাৎ একথার জবাব সেই-ই দিবে। কেননা সে আল্লাহর দেওয়া এক অলৌকিক সন্তান, যা কওমের লোকেরা জানে না। আল্লাহ বলেন,

‘অতঃপর মারয়াম ঈসার দিকে ইঙ্গিত করল। তখন লোকেরা বলল, কোলের শিশুর সাথে আমরা কিভাবে কথা বলব’? (মারিয়াম ২৯)। ঈসা তখন বলে উঠল, ‘আমি আল্লাহর দাস। তিনি আমাকে কিতাব (ইনজীল) প্রদান করেছেন এবং আমাকে নবি করেছেন’ (৩০)। ‘আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে জোরালো নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন ছালাত ও যাকাত আদায় করতে’ (৩১)। ‘এবং আমার মায়ের অনুগত থাকতে। আল্লাহ আমাকে উদ্ধত ও হতভাগা করেননি’ (৩২)। ‘আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন আমি মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন জীবিত পুনরুত্থিত হব’ (মারয়াম ১৯/২৯-৩৩)।

তিনি আল্লাহর পুত্র নন

খ্রিস্টানরা মনে করে ঈসা আ. আল্লাহর পুত্র। তার মা মারয়াম আল্লাহর স্ত্রী। এটা শিরকি কথা । কুরআন তা প্রত্যাখ্যান করে ঘোষণা করেছে। আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেন না।এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ‘ইখলাস’ নামে একটি সূরা রয়েছে। এ সুরায় স্পষ্ট বলা হয়েছে ‘ তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তার থেকে জন্ম নেয়নি।’ হযরত ঈসা আ. আল্লাহর পুত্র নন এ ব্যাপারে কুরআনের স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।

আল্লাহ বলেন,‘ইনিই হ’লেন মারয়াম পুত্র ঈসা। আর ওটাই হল সত্যকথা (যা উপরে বর্ণিত হয়েছে), যে বিষয়ে লোকেরা (অহেতুক) বিতর্ক করে থাকে’ (মারয়াম :৩৪)। ‘আল্লাহ এমন নন যে, তিনি সন্তান গ্রহণ করবেন (যেমন অতিভক্ত খৃষ্টানরা বলে থাকে যে, ঈসা ‘আল্লাহর পুত্র’)। তিনি মহাপবিত্র। যখন তিনি কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন বলেন, হও! ব্যস, হয়ে যায়’ (৩৫)। ‘ঈসা আরও বলল, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার পালনকর্তা এবং তোমাদের পালনকর্তা। অতএব তোমরা তাঁর ইবাদত কর। (মনে রেখ) এটাই হ’ল সরল পথ’ (মারয়াম ১৯/৩৪-৩৬)।

তিনি আসমানে  জীবিত আছেন: খ্রিস্টানদের মধ্যে প্রচলিত আছে হযরত ঈসা আ. শূলবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এটা তাদের ভুল ধারণা । তারা ইতিহাস বিকৃত করেছে। একজন নবির সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা ঈমানের অনুষঙ্গ বিষয়। কুরআনের ভাষ্যমতে ঈসা আ. শূলবিদ্ধ হয়ে মারা যাননি। তিনি আসমানে জীবিত আছেন। কেয়ামতের পূর্বে আবার পৃথিবীতে আসবেন। নবি মুহাম্মদ সা. এর শরিয়ত অনুসারে পৃথিবীতে শান্তিময় পরিবেশ গড়ে তুলবেন। এটাই কুরআনের ভাষ্য। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,

‘তিনি আল্লাহর কিতাব ইনজীল প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং পূর্ববর্তী গ্রন্থ তওরাতের সত্যায়নকারী ছিলেন। তবে তওরাতে হারামকৃত অনেক বিষয়কে তিনি হালাল করেন (আলে ইমরান ৩/৫০)। (৯) তিনি ইহুদী চক্রান্তের শিকার হয়ে সরকারী নির্যাতনের সম্মুখীন হন। ফলে আল্লাহ তাঁকে সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেন (আলে ইমরান ৩/৫২, ৫৪-৫৫; নিসা ৪/১৫৮)। শত্রুরা তাঁরই মত আরেকজনকে সন্দেহ বশে শূলে চড়িয়ে হত্যা করে এবং তারা নিশ্চিতভাবেই ঈসাকে হত্যা করেনি’ (নিসা ৪/১৫৭)।

অবাধ্যতার কারণে আমি তাদের এ শাস্তি দিয়েছিলাম। আর আমি অবশ্যই সত্যবাদী’ (আন‘আম ৬/১৪৬)।

ইহুদী-নাছারারা কেবল সন্দেহের বশবর্তী হয়েই নানা কথা বলে এবং ঈসাকে হত্যা করার মিথ্যা দাবী করে। আল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে তাদের কোনই জ্ঞান নেই। তারা কেবলই সন্দেহের মধ্যে পড়ে আছে। এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করতে পারেনি’(নিসা /১৫৭) বরং তার মত কাউকে তারা হত্যা করেছিল।

উল্লেখ্য যে, ঈসা (আঃ) তাঁর উপরে বিশ্বাসী সে যুগের ও পরবর্তী যুগের সকল খৃষ্টানের পাপের বোঝা নিজে কাঁধে নিয়ে প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ শূলে বিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে খৃষ্টানদের দাবি স্রেফ প্রতারণা ও অপপ্রচার বৈ কিছুই নয়।

হযরত ঈসা কেয়ামতের আগে আবার পৃথিবীতে আসবেন। অশান্তিতে ছেয়ে যাওয়া পৃথিবী শান্তিময় হয়ে ওঠবে তার আগমনে।

 আরআর

 

 

 

 

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ