সাবের চৌধুরী
খৃষ্টবর্ষ। নবী ঈসা আ. এর জন্ম। একই সময়ে তিনজন নবী- ঈসা, যাকারিয়া, ইয়াহয়া আ.। ফিলিস্তিন এলাকা তখন রোমানদের অধীনে। শুধুমাত্র ধর্মীয় বিষয় ও বিচারকার্যক্রম ইহুদি ধর্মীয় ব্যাক্তিত্বদের হাতে রেখে ৬খৃষ্টাব্দে এ এলাকা থেকে ইহুদিদের স্বায়ত্তশাসন রহিত করে পূর্ণ ক্ষমতা আবার রোমানরা সরাসরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। ২৬ সালে লিস্তিনের উপশাসক হিসেবে আসে রোমান বংশদ্ভূত এক লোক। আপন ভাতিজিকে বিয়ে করতে বাধা দেওয়ায় সে ইহুদিদের যোগসাজশে ইয়াহয়া ও যাকারিয়া আ. কে হত্যা করে। ফলে সেসময় ফিলিস্তিনে ইহুদিদের মধ্যে নবী হিসেবে বেঁচে থাকেন শুধু ঈসা আ.। তিনি ইহুদিদের বিকৃতি থেকে সঠিক পথে আনার জন্য প্রানান্তকর চেষ্টা করতে লাগলেন। তাঁর মুষ্টিমেয় কিছু অনুসারী ও হাওয়ারী তথা একান্ত সহচর তৈরি হলো।
একপর্যায়ে যাজকরা তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে আল্লাহ তাআলা আরেকজনকে তার মত চেহারা দিয়ে তাকে আকাশে উঠিয়ে নেন। যাজকরা সেই আরেকজনকে ঈসা মনে করে শূলিতে চড়িযে হত্যা করে। এরপর তার অনুসারী ও হাওয়ারীদের উপর হত্যা যজ্ঞ চালায় ও তাদেরকে ফিলিস্তিন থেকে উৎখাত করে। অনুসারীদের কেউ কেউ রুম দেশে এসে আশ্রয় নেয়। তাদের মাধ্যমে রুমে গোপনে খৃষ্টবাদের চর্চা হয়।
৩৬ খৃষ্টাব্দে সে উপশাসক মারা গেলে অনুসারীরা আবার ফিলিস্তিনে দাওয়াতের কাজ শুরু করলে ইহুদিরা আবারো তাদেরকে মেরে দেশ থেকে ভাগিয়ে দেয়। এসময়ে রোমে পুল এর আত্মপ্রকাশ হয়। সে খৃষ্টান সেজে ঈসা আ. এর নামে নানা মিথ্যা কথা ছড়িয়ে দেয় এবং তাঁর আদর্শের মধ্যে ত্রিত্ববাদসহ নানা ধরণের সীমাহীন বিকৃতি ঘটায়। এভাবেই ঈসা আ. এর ইসলামের দাওয়াতকে বিকৃত করার ভেতর দিয়ে ইহুদিদের থেকে খৃষ্টবাদ নামে সম্পূর্ণ নতুন একটি ধর্মের সূচনা হয় যাকে সত্যিকার অর্থে খৃষ্টবাদ না বলে পৌলবাদ বলা উচিত।
৬৬ ও ১৩৬ সালে ইহুদিরা রোমান শাসনের বিরুদ্ধে জেরুজালেমকেন্দ্রিক বিদ্রোহ করলে প্রথমবার সেনাপতি টিটাস এবং দ্বিতীয়বার সম্রাট হাদেফিয়ান এ বিদ্রোহকে শক্তহাতে প্রতিরোধ করে এবং ইহুদীদের উপর ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সম্রাট হাদেফিয়ান কুদস তথা জেরুজালেমের ইহুদীদের সকল দূর্গ ও নিদর্শানাদি মুছে দিয়ে সেখানে অনেক নতুন স্থাপনা ও মন্দির বানান এবং এ শহরের নাম পাল্টে নতুন নাম রাখেন ‘ইলয়া’। তার মাধ্যমে ইহুদিরা ফিলিস্তিন থেকে পূর্ণরূপে নির্বাসিত হয়।
৩২৪ সালে রোম সম্রাট কুসতুনতিন খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। তার মাধ্যমে খৃষ্টধর্মটি আরো বিকৃত হয়। তিনিও ইহুদিদের ব্যাপারে ছিলেন কঠোর। মাঝের সম্রাট জুলিয়ান ছাড়া শেষ পর্যান্ত সকল রোমক সম্রাট ইহুদিদের ব্যাপারে এ মনোভাব ধরে রাখেন। ৬০৩ থেকে ৬২৫ এর ভেতরের ছোট একটি বিরতি বাদ দিলে ৬৩৭ সালে আমর ইবনূল আস এর নেতৃত্বে মুসলমানরা ফিলিস্তিন বিজয় করার আগ পর্যন্ত এ দীর্ঘ সময় রোমানরা ফিলিস্তিনে নিজেরদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
৬৩৭ থেকে নিয়ে ১১ শতাব্দি পর্যন্ত ফিলিস্তিন মুসলিম শাসকদের অধীনে থাকে।
১০৯৯ সালে ইউরোপের খৃষ্টান ক্রুসেডাররা দখল করার পর সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ূবী ১১৮৭ সালে জেরুজালেমসহ পূর্ণ ফিলিস্তিন আবার মুসলমানদের হাতে ফিরিয়ে আনেন। ১২২৯ ও ১২৪৩ সালে কয়েক বছরের জন্য জেরুজালেম ও তৎপার্শবতী কয়েকটি শহর খৃষ্টানরা দখল করলেও ১৯১৭ সালে বৃটিশরা উসমানি খেলাফতের হাতা থেকে ফিলিস্তিন জবরদখল করার আগ পর্যন্ত এ দেশ মুসলমানদের হাতেই রক্ষিত ছিল।
লক্ষণীয়, দাউদ ও সুলাইমান আ. এর যুগের পর থেকে ইহুদিরা কোন সময় ফিলিস্তিনে নিরংকুশ কোন স্বাধীন রাজ্য গড়ে তোলতে পারেনি। ১৩৬ সালে বিদ্রোহ পরবর্তী নির্বাসনের পর থেকে বৃটিশ কর্তৃক ফিলিস্তিন দখলের আগ পর্যন্ত দীর্ঘ এ দু হাজার বছরের মধ্যে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের উল্লেখযোগ্য কোন উপস্থিতি ছিল না, ক্ষমতাতো ছিল না-ই। ফিলিস্তিনের মাটিতে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আছে কেনানী তথা বর্তমান ফিলিস্তিনিরা।
*এর পরের পর্বে দেখুন বর্তমান ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম ও তৎপরবর্তী ইতিহাস।
তথ্য সূত্র এ আলোচনার শেষ পর্বে উল্লেখ করা হবে।
আরআর