শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

যুবসমাজ মসজিদে যেতে আগ্রহী নয় কেন?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

۞  মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী

sofiullah_hashemi-copyযুগে যুগে যুবসমাজই জরাগ্রস্ত পৃথিবীর বুকে এনেছে নবজীবনের ঢল। তিমির রাত্রির অবসানে রক্ত-রাঙা প্রভাতের সূচনা করেছে। যুবকদের চোখেই থাকে নতুন পৃথিবী গড়ার ন্বপ্ন। পৃথিবীতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রদত্ত অফুরন্ত নিয়ামতের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যৌবনের শক্তিমত্তা। অফুরন্ত প্রাণশক্তির আধার যুবসমাজই দেশ ও জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার। শত-সহস্র ঝড়-ঝাপটা ও বাতিলের কালো থাবা উপেক্ষা করে তারাই পারে সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় বীর বিক্রমে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে। যুবকরাই পারে পরিবার, সমাজ ও দেশকে কুসংস্কার মুক্ত করে সোনালী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রদত্ত শাশ্বত জীবন ব্যবস্থা ইসলামে যৌবনকালের গুরুত্ব সীমাহীন। এ সময়ের ইবাদত আল্লাহ তাআলার কাছে খুবই প্রিয়। এ সম্পর্কে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. ইরশাদ করেছেন- ‘সাত শ্রেণীর মানুষকে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাঁর (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দিবেন ... দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ সে যুবক-যুবতি যে তার রবের ইবাদতের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে।’ (বুখারী শরীফ)।

অপরদিকে মসজিদ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম স্থান। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. এ সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন- “জনপদসমূহের মধ্যে মসজিদ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় এবং বাজার তাঁর কাছে সর্বাধিক অপছন্দনীয়।” (মুসলিম শরীফ)।

যুবসমাজের মসজিদের প্রতি অনীহার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়ী পারিবারিক কারণ। কেননা পরিবার হচ্ছে সন্তানের প্রথম পাঠশালা। বাবা মা’র কারণে অনেক যুবক ধ্বংসের পথে পা বাড়ায়। অনেক বাবা মা আছেন যারা নিজেরা নামাজ আদায় করেন এমনকি তাহাজ্জুদ নামাজেও খুবই যত্নবান কিন্তু তাদের যুবক ছেলে-মেয়ে নামাজ আদায় করে কিনা সে ব্যাপারে কোন খোঁজ-খবর রাখে না।

মহান আল্লাহ তাআলা মসজিদকে জান্নাতের টুকরা বানিয়েছেন। রাসূল সা. বলেছেন- “মসজিদসমূহ আসমানবাসীদের জন্য আলোক স্তম্ভ, যেমন নক্ষত্রসমূহ পৃথিবীবাসীদের জন্য আলোকমালা।” এ কারণেই পৃথিবীর যে কোন মসজিদ মুসলমানদের কাছে এক বিশেষ মর্যাদা সংরক্ষণ করে। সেখানে গেলে তাদের মনের মধ্যে এক আলাদা ভাবের উদয় হয়। পাপমুক্ত হওয়ার বাসনা জাগে, পবিত্র জীবন যাপনে উৎসাহ বোধ করে এবং দীন পালনে উজ্জীবিত হয়। তাই বলা যায়, যুবসমাজের নৈতিক চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে মসজিদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। মসজিদে যাওয়ার প্রতিদান সম্পর্কে রাসূলে কারীম সা. বলেছেন- “কোন ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় (নামাজ আদায় করার জন্য) যতবার মসজিদে যাতায়াত করবে, আল্লাহ তাআলা ততবারই তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারীর সামগ্রী তৈরি করে রাখবেন।” (বুখারী শরীফ)

কিন্তু দু:খের বিষয় হচ্ছে, অধিকাংশ মুসলিম যুবক আজ মসজিদ বিমুখ। আর এ কারণে তারা বিপথগামী হয়ে দেশ ও জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আজ মুসলিম জাতির সামনে বিরাট প্রশ্ন- যুবসমাজ কেন মসজিদে যেতে আগ্রহী নয়? দু-এক কথার মাধ্যমে এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া আদৌ সম্ভব নয়। মুসলিম যুবকদের এ অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। তবে সবচেয়ে বড় কথা যেটা, তা হলো- যে কোন উপায়েই হোক না কেন , এ অবস্থা রোধ করতে না পারলে মুসলিম উম্মাহর বর্তমান সংকট দূর করা কখনই সম্ভব হবে না।

যে সব কারণে মুসলিম যুবসমাজ মসজিদে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছে তার প্রধানতম কারণ বিজাতীয় অপসংস্কৃতির প্রভাব। ভ্যালেন্টাইন ডে, থার্টি ফাস্ট নাইটসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বেলেল্লাপনা ও বেহায়াপনা যুবচরিত্রকে ধ্বংস করছে। বর্তমানে যুবসমাজ ধ্বংসে স্যাটেলাইট, ইন্টারনেট, ফেসবুক প্রভৃতি প্রচার ও যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখছে। এসবে আসক্ত মুসলিম যুবকরা মসজিদের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে।

যুবসমাজের মসজিদ বিমুখ হওয়ার পেছনে বন্ধু-বান্ধবের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। বন্ধু-বান্ধব ও সঙ্গী-সাথীর প্রভাব যুবসমাজের আচার-আচরণ ও কর্মকান্ডে ব্যাপক ভ’মিকা রাখে। বন্ধু-বান্ধবের পাল্লায় পড়ে অনেক যুবক ধূমপান, মাদকাসক্তি, টিভি, সিনেমা, পর্ণোগ্রাফি ইত্যাদি কুঅভ্যাসে জড়িয়ে পড়ে। এসব কারণে তারা মসজিদের প্রতি আগ্রহ হারাতে থাকে। এজন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সৎ বন্ধু ও সত্যবাদি সাথীদের সাথে থাকার নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেছেন- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদিদের সাথে থাকো।” (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত নং-১১৯)

যুবসমাজের মসজিদের প্রতি অনীহার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়ী পারিবারিক কারণ। কেননা পরিবার হচ্ছে সন্তানের প্রথম পাঠশালা। বাবা মা’র কারণে অনেক যুবক ধ্বংসের পথে পা বাড়ায়। অনেক বাবা মা আছেন যারা নিজেরা নামাজ আদায় করেন এমনকি তাহাজ্জুদ নামাজেও খুবই যত্নবান কিন্তু তাদের যুবক ছেলে-মেয়ে নামাজ আদায় করে কিনা সে ব্যাপারে কোন খোঁজ-খবর রাখে না। সন্তানকে মসজিদমুখি করার ক্ষেত্রে বাবা মা তথা পরিবারের ভূমিকা মূখ্য। এ সম্পর্কে রাসূলে কারীম সা. ইরশাদ করেন- “তোমরা স্বীয় সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে নামাজ আদায়ের নির্দেশ প্রদান কর। দশ বছর বয়সে নামাজ আদায় না করলে তাদেরকে প্রহার কর এবং বিছানা পৃথক করে দাও।” (আবু দাউদ শরীফ)

পিতা যদি নিয়মিত সন্তানদের সাথে নিয়ে মসজিদে যেয়ে জামাআতের সাথে নামাজ আদায় করেন, তাহলে সন্তানরাও যখন বড় হবে তখন তারাও মসজিদে যাতায়াত করবে।

যুবসমাজকে জামাআতের সাথে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব ও মসজিদে যাতায়াতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানানো অতীব জরুরি। যুবকদের মসজিদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে মসজিদের ইমাম সাহেব ও মসজিদ কমিটিরও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। যুবকদের সাথে উত্তম আচরণ এবং তাদেরকে মসজিদের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া মসজিদ কমিটির অন্যতম দায়িত্ব। তাছাড়া মসজিদের ইমাম সাহেব মসজিদের যাবতীয় কার্যক্রমের চালিকাশক্তি হিসেবে থাকেন এবং তারা মসজিদের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেন। যুবকদের সব ধরনের সন্দেহ ও জিজ্ঞাসার যথাযথ জবাব দেয়া ইমাম সাহেবের অপরিহার্য দায়িত্ব। কেননা বর্তমানে ইসলামের শত্রুরা যুবকদের ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্ত করতে বিভিন্ন চক্রান্তে লিপ্ত। কাজেই তাদেরকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে হবে।

যুবকদের মসজিদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে মসজিদের ইমাম সাহেব ও মসজিদ কমিটিরও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। যুবকদের সাথে উত্তম আচরণ এবং তাদেরকে মসজিদের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া মসজিদ কমিটির অন্যতম দায়িত্ব।

পরিশেষে বলা যায়, যৌবনকাল জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। উজ্জ্বল ভবিষ্যত নির্মাণের মোক্ষম সময় এটি। কিন্তু অনেক যুবক যৌবনের উচ্ছলতায় বিবেক, বুদ্ধি হারিয়ে ভুল পথে পা বাড়ায়। চরিত্র গঠনের জন্য ঈমানের পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ সা. আর যে সকল প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো নামাজ কায়েম করা। তাই সমাজের যুবকদের প্রতি পরিবারসহ সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, যাতে তারা মসজিদমুখি জীবন-যাপন করতে পারে। পিতা-মাতা ও মুরব্বীদের উপদেশ যুবকদের জীবনের পাথেয়। ইসলাম এ ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করেছে। হযরত লুকমান আ. তাঁর ছেলেকে দেয়া উপদেশ অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে পবিত্র কুরআন মাজীদে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- “হে আমার প্রিয় বৎস! নামাজ প্রতিষ্ঠা কর, সৎ কাজের আদেশ দাও, অসৎ কাজে নিষেধ কর এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্য ধারন কর। নিশ্চয় এগুলো দৃঢ় সংকল্পের কাজ।” (সূরা লুকমান, আয়াত নং-১৭)

যে কোনো মূল্যে আমাদের যুবসমাজকে মসজিদ বিমুখতা থেকে রক্ষা করতে হবে। তাহলেই পথভ্রষ্ট যুবসমাজ আলোর পথে ফিরে আসবে। সমাজ থেকে দূর হবে সব অন্ধকার। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সেই তাওফিক দান করুন। আমীন!

সিনিয়র প্রভাষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ মাইলস্টোন কলেজ, ঢাকা।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ