আওয়ার ইসলাম : জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সেলিম রেজা জানিয়েছেন, পারস্য উপসাগরের তেলসমৃদ্ধ দেশ কাতারে বিনা খরচে পুরুষকর্মী পাঠানো হবে। কাতার ফাউন্ডেশন এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করবে। কিছু দিনের মধ্যে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হবে। তবে এ প্রক্রিয়ায় ঠিক কত সংখ্যক কর্মী যেতে পারবে তা এখনো জানা যায়নি।
তবে এত সব আয়োজনের মূল টার্গেট ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল। ২০২২ সালের দেশটিতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে বর্তমানে অবকাঠামো উন্নয়নে চলছে মহাযজ্ঞ। এই যজ্ঞ নির্বিঘ করতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি জনশক্তিকে কাজে লাগাতে চায় তারা। এ জন্য বিদেশি কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ কোটা বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি।
কাতারের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, অবকাঠামোগত উন্নয়নের এই বিশাল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কাজে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ করবে তারা। তাই বাংলাদেশ থেকেই অন্তত ৫ লাখেরও বেশি কর্মী নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে দেশটি। বিশ্ব ফুটবলের জমজমাট আয়োজনের অংশ হিসেবে আগেই নতুন করে ১৭টি পাঁচতারা হোটেল, ১০টি স্টেডিয়াম ও একাধিক নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ করবে কাতার।
সেলিম রেজা আরও জানিয়েছেন, দেশটিতে বর্তমানে বিদেশি কর্মীদের ন্যূনতম বেতন ৭শ রিয়াল। তা বাড়িয়ে ১২শ রিয়াল করারও প্রস্তাব করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। অভিবাসনের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। তবে উল্লেখযোগ্য উন্নয়নও হয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরবে নারীকর্মীরা বিনামূল্যে (জিরো কস্ট) যেতে পারছে। খুব শিগগিরই পুরুষকর্মীদেরও বিনা খরচে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এতদিন বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজার বন্ধ ছিল, এখন পর্যায়ক্রমে তা খুলেছে, অভিবাসন খরচ অনেকটা কমে যাবে।
আগামী ২ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৩ লক্ষাধিক কর্মী নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে কাতার। কাতারে বাংলাদেশিরা নির্মাণশ্রমিক ও পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করছে। তবে ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিতব্য ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলছে দেশটিতে। এ লক্ষ্যে সেবা ও নির্মাণ খাতে বাংলাদেশ থেকে পেশাগত ও দক্ষ শ্রমিক নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে কাতার। আর দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশের পক্ষে সামগ্রিক প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। অভিবাসী শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ দিতে বর্তমানে ৭০টি ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে। আরও ৪০টি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। বর্তমানে ২ লাখ ৮০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন দেশটিতে।
জানা গেছে, কাতারে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, অভিবাসন ব্যয় কমানো, ভিসা ট্রেডিং বন্ধসহ, অভিবাসী কর্মীদের স্বার্থ ও অধিকার সংরক্ষণ বিষয় নিয়ে সরকারি পর্যায়ে ইতোমধ্যে আলোচনা হয়েছে। ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে বিভিন্ন অবকাঠামো বিনির্মাণ ও সংস্কারের জন্য কাতারে ব্যাপক কর্মীর প্রয়োজন হবে। সে চাহিদা পূরণসহ অন্য খাতে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার বিষয়টির দিকে দুদেশের সরকার জোর দিয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী ভিসা ট্রেডিং বন্ধে নেওয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে চাহিদাপত্র (ডিমান্ড লেটার) প্রথমে জমা পড়বে কাতারের ডাইরেক্টরেট অব পাবলিক রিক্রুটমেন্টে। পরে ওই সংস্থা বাংলাদেশের বিএমইটির কাছে চাহিদাপত্রগুলো পাঠাবে। বিএমইটি কাজের নৈপুণ্য বিবেচনায় এনে ঠিক করবেÑ কোন এজেন্সি লোক পাঠাবে।
কাতারের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, ১ লাখ বাংলাদেশি কর্মীর জন্য ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করার সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তারা সব সেক্টরেই কর্মী নেবে। তবে ঠিক কত সংখ্যক তা এ মুহূর্তে কৌশলগত কারণে বলা যাবে না। দেশটিতে ২০১৭-১৮ সাল পর্যন্ত চলবে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ। সেখানে বাংলাদেশি কর্মীদের আধিপত্য সবচেয়ে বেশি থাকবে। এরপর সেবা খাতের কাজ চলবে। এখানেও প্রাধান্য থাকবে বাংলাদেশিদের। কর্মরত বাংলাদেশিরা খুব ভালো আছেন। গত দুই বছর কাতার নিয়ে সেখানকার বাংলাদেশি শ্রমিকরা কোনো অভিযোগ করেননি। কাতারেরও বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মদক্ষতা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই।
আআ